নারী প্রতারক চক্র সক্রিয় নগরীতে

218

নগরীতে ভয়ংকর নারী প্রতারক চক্র মাঠে। চক্রটি ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসায়ী-ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাদের সাথে রয়েছে পুরুষও। অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে ঘটনা প্রকাশ না করে চেপে যান। এধরনের ১৫টি চক্র রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটককৃত চক্রের ৫ নারী সদস্য এসংক্রান্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। পুলিশ বলছে, চক্রের সদস্যদের ধরতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ৬ মাসে ৭ নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা যায়, গত বুধবার গভীর রাতে গ্রেপ্তারকৃত ৫ নারী হল, হামিদা আক্তার রুনা (৩০), মনোয়ারা বেগম মিনু (৩৫), রিয়া বেগম (২৭), জনি রাণী দে (২৪) ও জোবাইদা সুলতানা হিরা (২০)। একই সাথে চক্রের সহযোগী মো. আবু তাহেরকেও (৪৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার নারীরা জানিয়েছে, অনলাইন চ্যাটিং অ্যাপস ও সামাজিক মাধ্যমে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক পাতে। পরে বাসায় ডেকে এনে নগ্ন ছবি তুলে বিশাল অংকের টাকা দাবি করে ব্ল্যাকমেইল করে ওরা।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, নগরীতে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এ চক্র ১৫ গ্রূপে বিভক্ত। তারা নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এ চক্রে নারী সদস্যের সংখ্যাই বেশি। পুরুষ সদস্য থাকে সংখ্যায় কম। পুরুষরা একাজে নারী সদস্যদের ব্যবহার করে। সামাজিক বা অন্য কোন অনুষ্ঠানাদিতে নিজে গিয়ে পরিচিত হয় এসব তরুণী-যুবতীরা। ফোন নাম্বারও দিয়ে আসে। এরপর শুরু হয় ফোনালাপ। এক পর্যায়ে প্রেমের অভিনয় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পরিচিত হয় চক্রের সদস্যরা। প্রোফাইল দেখে ব্যবসায়ী-ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে তারা। চ্যাটিং করতে গিয়ে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে ফেলে। এরপর প্রলোভন দিয়ে চক্রের সদস্যরা নারী সদস্যদের মাধ্যমে বাসায় ডেকে আনে। তারপর চক্রের সদস্যরা প্রবেশ করে ওই নারীর সাথে জোরপূর্বক অশ্লীল ছবি তুলে, ভিডিও ধারণ করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় অর্থ। তাদের হাতে অস্ত্রও থাকে। উপস্থিত তার কাছে যা আছে তা কেড়ে নিয়ে নেয় তারা। পরবর্তীতে মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে আসা হয়। চাহিদামত টাকা পেলে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই তা প্রকাশ করে না।
তথ্যটি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) আসিফ মহিউদ্দীন জানান, নারীদের একটি চক্র নগরে রয়েছে। তারা প্রেমের অভিনয় করে লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকে বিষয়টি চেপে যায়। তবে চক্রের নাম ঠিকানা আমরা পেয়েছি। তাদের ধরতে কৌশলে এগুচ্ছি।
জানা যায়, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বাসাভাড়া নেন তারা। তাদের বাসার ড্রইং রুমে হালকা আসবাবপত্র থাকলেও বাকি রুমগুলোতে কোনো কিছু থাকে না। আসলে তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। তারা ঘন ঘন বাসা পাল্টায়।। যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য এক জায়গায় বেশিদিন থাকে না।
পুলিশ জানায়, এসব নারী প্রতারকরা ভয়ংকর। তারা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের পাশাপাশি মারধরও করে ভুক্তভোগীকে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারধর করা হয়।