নারী ও তারুণ্যের ক্ষমতায়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে

48

শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এবার শতকরা ৬০ ভাগ তরুণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। গত শনিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘অপরাজেয় বাংলাদেশ’ আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সমাবেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, গত দশ বছরে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে বিবেচনা করে তরুণ প্রজন্ম আবারো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ক্ষমতায় আনবে। বিডিনিউজ।
গত দশ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সমৃদ্ধি, সামাজিক খাতে সমৃদ্ধি দেখেছে বর্তমান প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছিল, তা থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। এখন তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি অন্ধকারের পথে চলে যাবে নাকি আলোর পথে যাবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণায় সামাজিক বৈষম্য হ্রাসের বিষয়টি উল্লেখ করায় ‘বৈষম্য হ্রাস’ পাবে বলেও মনে করেন তিনি। শিক্ষা খাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর অনুপাত সমান হলেও উচ্চশিক্ষায় তা এখনও অর্জিত হয়নি জানিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়ে শিক্ষার্থীর হার শতকরা ৪৩ ভাগ। এই বিষয়ে সমতা আনতে হলে প্রতি বছর ০.৫ শতাংশ হারে বরাদ্দ করতে হবে। তাহলে ২০২৩ সালের আগে সমগ্র বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে সমতা আসবে। নারী ও তরুণদের ক্ষমতায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হওয়া জামায়াত নেতাদের প্রসঙ্গও আসে ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ নির্বাচনের পর তাদের ভোটাধিকার হরণ করা উচিৎ। সাংবাদিক সামিয়া জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় যোগ দেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলাদেশে ব্যাংকের দুই সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন, আতিউর রহমান, লেখক-অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ভোটাররা মৌলবাদ, সামপ্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে বলে প্রত্যাশা করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। তিনি বলেন, যারা প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যান-ধারণা লালন করে, যারা সামাজিক অগ্রগতি রোধ করতে চায়, যারা নারীর ক্ষমতায়ন খন্ডিত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে জনগণ সর্বউপায়ে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি। নতুন প্রজন্মকে উদ্দেশ্য করে মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, নতুন প্রজন্মের সে স্বপ্নের বাস্তবায়নে বাংলাদেশ তৈরি করাই হবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করা। জীবনকে উপভোগ করার পাশাপাশি অন্যের জন্য কিছু করে দেখানোর আহবানও জানান তিনি। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম, তোমরা জীবনকে উপভোগ করার জন্য প্রস্তুত হও। জীবনেকে উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল, অন্যের জন্য কিছু করা। তোমরা বল- নতুন বাংলাদেশ অন্যের জন্য কিছু করব। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার আনন্দকে আমরা উপভোগ করব। গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক খাতের অগ্রগতি নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। সে জরিপে বলা হয়, ৬২ শতাংশ জনগণ মনে করেন বাংলাদেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে। ৬৯ শতাংশ তরুণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারায় সন্তুষ্ট। ৬৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন করে। ৬৭ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে, ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে, ৬১ শতাংশ রাস্তাঘাট-সেতু নির্মাণ কর্মকান্ডে ‘সন্তুষ্ট’ বলে সে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বলে জানান আতিউর। আতিউর রহমান বলেন, ৮১ শতাংশ তরুণ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে অংশ নেবে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আলোচনায় যোগ দিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শেখ হাসিনা এখন তৃতীয় বিশ্বের ‘মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন’। জাতীয় নির্বাচনের আগে তথ্য বিকৃতি রোধে সতর্কতা অবলম্বনে পরামর্শ দেন সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান।
কিছু সংবাদকে টুইস্ট করে তথ্য বিকৃত করা হয়। যারা তথ্যের বিকৃতি করে তাদের একটি মোটিফ রয়েছে, উদ্দেশ্য রয়েছে। পঁচাত্তরের পরে একুশ বছর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ছিল না। এ সময়ে বেনিফিসিয়ারি গ্রুপ তৈরি হয়েছে একটা। সংঘবদ্ধ এই দলটি ভুল তথ্য দিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সহ-সভাপতি হারুন হাবীব এবার নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। বিজ্ঞপ্তি