নারিকেলের দামেও সিন্ডিকেটের হাত!

83

মনিরুল ইসলাম মুন্না

বাজারে সবকিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার অভিযোগ এখন পুরনো। তবে সেই কাতারে এবার যুক্ত হয়ে গেলো নারিকেলও। নগরীতে এক জোড়া নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা দরে। পাইকারি পর্যায়ে ২১৫ থেকে ২২০ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে আসতে আসতে তা ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায় পরিণত হচ্ছে।
ভোক্তারা বলছেন, সবকিছুর দাম তো অসাধু ব্যবসায়ী বা সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেছে। তাই দাম বাড়ছেই। এখন শীতকাল বলে মানুষ পিঠা বা মিষ্টান্ন তৈরি করে থাকেন। শেষ পর্যন্ত নারিকেলের দামও সিন্ডিকেটের হাতে চলে গেল?
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের মতে, শীতকালে ঘরে ঘরে পিঠার উৎসব চলায় নারিকেলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দামও বাড়তি। চট্টগ্রামে নারিকেলের কোনো সিন্ডিকেট নেই। সরবরাহ যেখান থেকে হচ্ছে সেখানে প্রশাসন অভিযান চালালে সত্যতা বের হবে।
গতকাল রবিবার নগরীর খাতুনগঞ্জ বাজার,রিয়াজউদ্দিন বাজার ও বিভিন্ন খুচরা দোকান ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার তৈরির অন্যতম উপকরণ নারিকেল। এটি না হলেই যেন পূর্ণতা মিলে না মিষ্টান্ন তৈরিতে। আসন্ন রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে পণ্যটির চাহিদা ইতোমধ্যে আরও বেড়েছে। সেই চাহিদার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নারিকেলেও দামও। শুধু নারিকেলের দাম বেড়েছে এমনটিই নয়। প্রতি জোড়া ডাব বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে।
একসময় এই ডাব ও নারিকেলের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকলেও এখন আকাশচুম্বি। ছোট-বড় প্রতিটির দাম বেড়েছে প্রায় ৭০ টাকার মত। বাজারে প্রতি পিস নারিকেল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। যা অনেক বেশি বলছেন ভোক্তারা।
নগরীর বাকলিয়া এলাকার গ্রাহক রহিমা আক্তার বলেন, ‘কিছুদিন আগেও একটা নারিকেলের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। কিন্তু এখন নারিকেলের নাম নেয়াও যাচ্ছে না। একটা নারিকেল কেমনে ১২০ টাকা হয়?’
পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট থেকে মাঝারি আকারের প্রতি একশ নারিকেলের পাইকারি দাম সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। বড় আকারের নারিকেলের দাম সাড়ে সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা।
জানা গেছে, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কক্সবাজার, টেকনাফ ও ফেনী থেকে পাইকারি দরে কিনে এনে খাতুনগঞ্জ ও রিয়াজউদ্দীন বাজারের আড়তগুলোতে বিক্রি করা হয় নারিকেল। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকেও আসে নারিকেল। প্রকারভেদে দামেরও তারতম্য হয়ে থাকে। প্রতিটি নারিকেল এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে।
ছোট, বড়, মাঝারি তিন প্রকারের নারিকেল বিক্রি হয় দোকানে। দামও তিন রকমের।
রিয়াজউদ্দীন বাজারের জে কে স্টোরের ব্যবস্থাপক মো. মামুন বলেন, ‘নোয়াখালী ও মিয়ানমারের নারিকেল বেশি পাওয়া যায়। তবে নোয়াখালী অঞ্চলের নারিকেল বেশ ভালো মানের। মিয়ানমারের নারিকেল কেউ তেমন কিনতে চায় না। কারণ এসব নারিকেলের বেশিরভাগই পচা। একশ নারিকেলের মধ্যে ১০টি নারিকেলও যদি পচা পড়ে, তাহলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। তাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হয়’।
সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ বা রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদারদের হাতে নারিকেলের দাম নেই। যেখান থেকে নারিকেল আসছে সেখানে হয়তো সিন্ডিকেট থাকতে পারে। প্রশাসনের উচিত সেখানে নজরদারি বাড়ানো’।
আন্দরকিল্লা এলাকার কুতুব উদ্দিন নামে এক মুদি দোকানি বলেন, ‘প্রতিশত নারিকেল কিনতে হয় ১১ হাজার টাকায়। তাহলে প্রতি পিসের দাম পড়ে ১১০ টাকা। এছাড়াও পরিবহন, শ্রমিক খরচ যুক্ত করতে হয়। ফলে ১২০ টাকা করে বিক্রি করছি আমরা। আবার ১০০ নারিকেলের মধ্যে ৫-১০ পিস নষ্ট পড়ে যায়। এগুলো আর বিক্রি করা যায় না। মোট কথা, নারিকেল বিক্রিতে তেমন লাভ করা যাচ্ছে না’।
এদিকে দাম বাড়ায় ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করছে, রিয়াজউদ্দিন বাজারে আসা আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘সব কিছুরই দাম বেড়েছে। সামান্য একটা নারিকেল কিনবো তাও ১২০ টাকা? নারিকেল তো জরুরি জিনিস নয়। তাহলে এতো দাম বাড়বে কেন? নাকি এখানেও সিন্ডিকেট’?
খাতুনগঞ্জ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কাদের বলেন, শীতকাল এবং রমজানের ঈদে নারিকেলের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই দামও বাড়ে। একশ’ নারিকেল কিনতে এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। গত দেড়-দুই মাস আগে যেখানে একশ নারিকেল কিনেছি ৭ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকায়, এখন তা বেড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা হয়েছে’।