নানুপুরে রোশন, খিরামে সৌরভ বিজয়ী

18

মো. এমরান হোসেন, ফটিকছড়ি

উৎসব মুখর পরিবেশে গতকাল ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ও খিরাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন্ হয়েছে। এতে নানুপুরে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন প্রার্থী নুরুন নবী রোশন (আনরস)। তিনি ৭ হাজার ১শ ৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শফিউল আজম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৪হাজার ৬শ ৭২ ভোট। এছাড়া মো. রেজাউল ইসলাম রুবেল (টেলিফোন) পেয়েছেন ৩৪ ভোট, সৈয়দ বদরুল হোসেন (অটোরিক্সা) পেয়েছেন ১শ ১৫ ভোট।
অপরদিকে খিরাম ইউপিতে পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন সৌরভ। তিনি ২ হাজার ৬শ ৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুহাম্মদ শহীদুল আলম (অটোরিক্সা) পেয়েছেন ১ হাজার ৯শ ৫৬ ভোট, মোহাম্মদ হাসান (ঘোড়া) পেয়েছেন ১ হাজার ২শ ২৬ ভোট।
উপজেলা হলরুমে গতকাল রাত ৯টায় বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অরুণ উদয় ত্রিপুরা। তিনি জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশ উৎসাহ নিয়ে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন।
এ সময় ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রাজীব ঘোষসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নানুপুর ইউপিতে সংরক্ষিত ১ আসনে মোছা. শামিন খাতুন (লাভলী), ২ নং সংরক্ষিত আসনে নার্গিস আকতার, ৩ নং সংরক্ষিত আসনে শামসুুন নাহার বিজয়ী হয়েছেন।
সাধারণ আসনে বিজয়ী হন ১ নং ওয়ার্ডে তৌহিদুল আলম, ২ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, ৩ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন, ৪ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ আফাজুর রহমান, ৫ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ মিনহাজ, ৬নং ওয়ার্ডে নরুন নবী, ৭নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ আজিজুর রহমান, ৮নং ওয়ার্ডে আহমদ ছাফা, ৯নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ রমজান আলী।
এছাড়া খিরাম ইউপিতে সংরক্ষিত ১ আসনে হাসিনা বেগম, ২ নং সংরক্ষিত আসনে ঝুনু বনিক, ৩ নং সংরক্ষিত আসনে তানজু মনি জয়ী হন।
সাধারণ আসনে নির্বাচিত হন ১ নং ওয়ার্ডে পূর্ণ মাঝি চাকমা, ২ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ ইলিয়াছ, ৩ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ আলী, ৪ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ আনোয়ার, ৫ নং ওয়ার্ডে আলা উদ্দীন ৬ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ৭ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ নাঈম উদ্দিন, ৮ নং ওয়ার্ডে মুহাম্মদ নুরুল হুদা, ৯ নং ওয়ার্ডে রাসেদুল ইসলাম।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ হয় নানুপুর ও খিরাম ইউপি নির্বাচনে। ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে ভোট প্রদান করেন ভোটারগণ। তবে ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশি।
এদিকে খিরামের ৮ নং ওর্য়াডের দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন সক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অপরাধে ১৫ জনকে ২৫ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা এবং জাল ভোট দেয়ার আপরাধে ৫ জনকে জেল দেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, বেশ উৎসাহ নিয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে ছিল।
জানা গেছে, নানুপুর ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রের ১৭টি অস্থায়ীসহ ৫৭টি বুথে এবং খিরামে ইউনিয়নে ৯টি ভোট কেন্দ্রের ৫টি অস্থায়ীসহ ২৪টি বুথে ব্যালেট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। ২ জন জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১ প্লাটুন বিজিবি, ১ প্লাটুন র‌্যাব, স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি কেন্দ্রে অস্ত্রধারী ৫ জন পুলিশ, ২ জন অস্ত্রধারী আনসার নিয়োজিত ছিল।
নানুপুর ঢালকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, গামরীতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, মজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা কেন্দ্র, নানুপুর আবু সোবহান উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র, পশ্চিম নানুপুর মন্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, পূর্ব মাইজভান্ডার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, খিরামের প্রেমপুর জমিরিয়া খায়রুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্র, আয়েশা ছিদ্দিকা (র.) মাদ্রাসা কেন্দ্র, ইমাম আবু হানিফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, খিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, দক্ষিণ খিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, কিপাইতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ একাধিক কেন্দ্রে দেখা যায়, সকাল ৮টায় ভোট শুরু হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার বাড়তে থাকে। বেশ উৎসাহ নিয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন। তবে তাদের মধ্যে নারী ভোটার বেশি ছিল। প্রায় কেন্দ্রে নবীন ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মত।
ভোট চলাকালীন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দক্ষিণ খিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক পাখার সদস্য প্রার্থী জমিল হোসেন ও ফুটবল প্রতীকের নুরুল হুদার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতন্ডা পরবর্তী ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
নানুপুর মজহারুল উলুম গাউছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুপুরে ১ টার দিকে নুরুল আবছার নামে এক ব্যাক্তিকে কেন্দ্রে অনাধিকার প্রবেশের দায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফেরদৌস আরা।
গতকাল বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা নবীন ভোটাররা ছিলেন খুবই খুশি। মাইজভান্ডার আহমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন সৈয়দা আফছানা (২২) ও সৈয়দা রোকছানা (২০) নামে দুই বোন।
তারা বলেন, গত জাতীয় নির্বাচনের পর ইউপি নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। খুবই আনন্দ লাগছে। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছি।
সেখানে ৬৮ বছর বয়সী ভোটার সৈয়দ বাবর মিয়া নিজের ভোট দিয়েছেন বলে জানান। পশ্চিম নানুপুর মন্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৫ বছর বয়সী জহুরুল ইসলাম উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছেন বলে জানান।