নানা সংকটে মিরসরাইয়ের কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়

128

জরাজীর্ণ ভবন, ভবন সংকট, আসবাবপত্র সংকট, বিদ্যুৎ, আর্থিক সংকট, টিউবওয়েলসহ নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে ধুঁকে ধুঁকে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পাঠদান চলছে মিরসরাইয়ের কয়লা পশ্চিম সোনাই উচ্চ বিদ্যালয়ে। উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাই গ্রামে অবস্থিত এ বিদ্যালয় ১৯৯৫ সালের ১ জানুয়ারি চালু হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিউদ্দিন। সেসময় তার সঙ্গ দেন ডা. ফজলুল করিমসহ স্থানীয়রা। একশ শিক্ষার্থী নিয়ে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর পাঠদানের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হওয়া এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিগত কয়েকবছর ধরে জেএসসিতে শতভাগ ফলাফল অর্জন করে আসছে। কিন্তু নানা সংকটের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না। সংকটের কারণে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও দশম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। ফলে আশপাশের গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা না করে পাশ্ববর্তী অন্য বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে। জানা যায়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুতে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির পাঠদান করা হতো। পরবর্তী বছর ১৯৯৬ সালে ৮ম শ্রেণির পাঠদানও চালু হয়। এরপর দীর্ঘ সময়ান্তে ২০১৯ সালে নবম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চালু হয় তাও শুধুমাত্র ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালুর মধ্যদিয়ে, শিক্ষক ও ভবন সংকটের কারণে অন্য বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। জয়পুর পূর্বজোয়ার আঙ্কুুরের নেছা ওবায়দুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অধীনে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। জেএসসিতে গত ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ সালে শতভাগ পাশ করে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ শত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করেন ৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আর্থিক সংকটের কারণে নামমাত্র সম্মানি দেওয়া হয় শিক্ষকদের। এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কয়লা, ইসলামাবাদ, রহমতপুর, পশ্চিম সোনাই, মঘপাথর, জিলতলী, শহীদপুর, সুবলছড়ি, গুজাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থীরা। ভাঙ্গা বেড়া ও টিনশেড়ের জরাজীর্ণ ৪ টি কক্ষে চলে নিত্য পাঠদান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মৌলভী কামাল উদ্দিন, শারমিন আক্তার, আব্দুল হান্নান, সাজেদা আক্তার, শেফালী চৌধুরী, এমরানুল হক। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ডা. ফজলুল করিম, সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, দাতা সদস্য মহি উদ্দিন মেম্বার, শিক্ষক প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন, সদস্য তপন কুমার ত্রিপুরা, ডা. কামাল হোসেন দুলাল, আবু বক্কর ছিদ্দিক, মুজিবুল হক মিন্টু, ছাদেক সর্দার, আব্দুল মোমিন, আমীর হোসেন, নুর মোহাম্মদ ছুট্টু। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মহি উদ্দিন জানান, এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়াশোনা করতো। শিক্ষার আলো জ্বালাতে এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। সেই থেকে এখনো এ বিদ্যালয়ের সার্বিক দিক দেখাশোনা করে আসছি।
তবে বর্তমানে বিরাজমান নানা সংকট থেকে বিদ্যালয়কে কাটিয়ে তুলতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. ফজলুল করিম জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আমি নিজেই শুরুর দিকে শিক্ষকতা করেছি শুধুমাত্র নানা সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য। কিন্তু সংকট থেকে দুই দশক পার হয়ে গেলেও উত্তরণ হয়নি। স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতায় দীর্ঘ ২৪ বছর যাবত ধুঁকে ধুঁকে পাঠদান চলছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা এগিয়ে এলে এই বিদ্যালয় একসময় মডেল বিদ্যালয় হবে বলে প্রত্যাশী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, নামমাত্র সম্মানিতে শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত কয়েকবছর ধরে শিক্ষকদের আপ্রাণ প্রচেষ্টার ফলে জেএসসিতে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ভবন সংকট, পাঠদানের অনুমতি অর্জিত হলে, আর্থিক সংকট ও আসবাবপত্র সংকট কাটিয়ে উঠলে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরো ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে।