নাগ-নাগিনীর পদচারণায় চক্রান্তের চাষাবাদ

32

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

কবিগুরু রবীঠাকুরের প্রান্তিক কাব্যগ্রন্থে উপস্থাপিত কবিতার পংক্তি ‘নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,/ শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস-/ বিদায় নেবার আগে তাই ডাক দিয়ে যাই/ দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে প্রস্তুত হইতেছে ঘরে ঘরে’ উচ্চারণে নিবন্ধের সূচনা করছি। দেশবাসী সম্যক অবগত আছেন বৈশ্বিক মহামন্দার পূর্বাভাস পুরো বিশ্বে সমগ্র নাগরিক সমাজের হৃদয়ে গভীর আতঙ্ক-আশঙ্কার দেয়াল নির্মাণ করছে। প্রাসঙ্গিকতায় খাদ্যশস্য-জ্বালানি তেল-গ্যাসসহ জীবন জীবিকার সচল প্রবাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি দেশের গণমাধ্যমে প্রতিনিয়তই প্রচারিত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের দেশসমূহের সংবাদ পর্যালোচনায় এই ধরনের পরিবেশনা এতবেশি প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে হয় না। বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকে বা অন্যান্য বিশ্বখ্যাত ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন না করার যৌক্তিকতা সচেতন মহল উপলব্ধি করতে পারলেও দেশের অভ্যন্তরে মাত্রাতিরিক্ত উপস্থাপনা মোটেও বোধগম্য নয়। বিজ্ঞজনের মতে জনগণের দুর্ভোগকে অতিরঞ্জিত করে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো-দেশকে অস্থিতিশীল করার কোন অশুভ অপকৌশল কিনা তার প্রয়োগিক বিশ্লেষণ একান্তই জরুরি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বা দল-নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ-শিষ্টাচার সুরক্ষা-সহিষ্ণুতা-সকল প্রকার বিরোধ বিচ্ছেদ সংহার করে আলাপ-আলোচনা-সমঝোতার পরিবেশ অক্ষুন্ন রেখে দেশ ধ্বংসের অশুভ পন্থা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই সুস্থ রাজনীতির পরিচায়ক।
অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সু হিং¯্র দানবগোষ্ঠী অবৈধ সুযোগ সুবিধা গ্রহণের হীন উদ্দেশ্যে সকল সময়ে রাজনৈতিক কলহ-বাকবিতÐা জিয়ে রাখার পক্ষেই অপচেষ্টা অব্যাহত রাখে। মিথ্যাচার-প্রতারণা-জালিয়াতি-ছলচাতুরী-অভিনয় শৈলী প্রদর্শনে পারঙ্গম নাগ-নাগিনীরা তথাকথিত খুঁটির জোরের বদৌলতে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রায় সকল সংস্থা-প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদ-পদক-পদায়ন দখলে নিয়ে শুধু দেশকে নয়, পুরো দেশবাসীকে জিম্মি করে ফেলে। জনগণের কল্যাণ সাধনে কথিত বাচনিক বুলিতে-সম্পূর্ণ অনৈতিক আচ্ছাদনে অনুকম্পা ও আশির্বাদপ্রাপ্ত এসব নষ্ট চরিত্রের মানুষগুলো জনগণের বিরুদ্ধেই অতি সঙ্গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। নানামুখী অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির বেড়াজালে জনগণের বন্ধু সেজে মুখোশধারী এসব ব্যক্তিরা সমাজে কমবেশি চিহ্নিত। এদের ক্ষমতার বলয়-প্রভাব অধিকমাত্রায় প্রবল বলে সৎ-যোগ্য-দক্ষ-নীতি নৈতিকতায় ঋদ্ধ ত্যাগী গণমানুষ এদের বিরুদ্ধে সাহস করে সত্য প্রকাশের সুযোগ পায় না। ক্ষেত্রবিশেষে পরীক্ষিত-সমাজস্বীকৃত-জননন্দিত ব্যক্তিদের নানাভাবে ফাঁসিয়ে দিয়ে অযথা হয়রানি-অপমানিত-লাঞ্ছিত করতে এরা কুণ্ঠাবোধ করে না। অপমানের তীব্র তাড়নায় এদের আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার দৃষ্টান্ত দেশে-বিদেশে কম নয় বলেও জনশ্রæতি রয়েছে। সমকালীন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার নিগূঢ় পর্যালোচনায় এটি প্রতীয়মান যে, নূন্যতম কোনো দেশীয় ইস্যূ না থাকা সত্তে¡ও ব্যক্তিস্বার্থে তৈরি কল্পনাপ্রসূত-মনগড়া বৈরী বিষয়ের ভিত্তিতে জনরোষ-উন্মাদনা সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হচ্ছে।
৩০ অক্টোবর ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার একজন দায়িত্বশীল সদস্য জানান, ‘ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে বঙ্গবন্ধুর কথা অনেকে মুখে বেশি বেশি বলেন। কিন্তু অন্তরে তার নির্দেশনা ধারণ করে না। আজকাল এ সংখ্যাটা অনেক। চারদিকে সব খন্দকার মোশতাকের দল। যাদের অনেকে বিভিন্ন স্থানে কৌশলে ঢুকে পড়ে আমাদের সরকারের ক্ষতি করার অপচেষ্টা করছে। এছাড়া দেশ ও সরকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র তো হচ্ছেই। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহর রহমতে শক্ত হাতে সাহসের সঙ্গে সবকিছু মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। তার দূরদর্শিতার ফলে আমরা করোনা পরিস্থিতি অনেক দেশের তুলনায় ভালোভাবে ফেস করতে পেরেছি। সরকার আসলে অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশটাকে উন্নতির কাঙ্খিত সোপানে নিয়ে যেতে। কিন্তু করোনা মহামারি এবং অনাকাক্সিক্ষত চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো পরপর দুটি বিপর্যয় বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের অগ্রগতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তবে এটাও সত্য, সবকিছু প্রধানমন্ত্রীর একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য দেশের স্বার্থে সৎ নিয়তে সবাইকে সহোযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে গণমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করাসহ যৌক্তিক ও বস্তনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে মনোনিবেশ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, “এটা সত্য যে একশ্রোণির ব্যক্তি ‘আমাদের লোক’ বলে তাদের নিজস্ব লোকদের প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হয়েছে। এখনো হয়তো সে অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে আমাদের সরকার এসব বিষয়ে আরও সজাগ ও সচেতন।”
উক্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, প্রশাসনসহ সর্বক্ষেত্রে দলবাজি ও দলাদলির একটা অপসংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। পেশাজীবীদের অনেকে বুদ্ধিজীবী হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের পেশিশক্তিতে পরিণত করেছেন। এর ফলে রাতারাতি রং ও ভোল পাল্টানো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যার সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। সুবিধাবাদী কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ ব্যক্তিস্বার্থে দ্রæত পদোন্নতিসহ প্রাইজ পোস্টিং নিতে মরিয়া। বিশেষ করে ‘পাওয়ার হাউজগুলোয়’ একধরনের অদৃশ্য নিজস্ব বলয় তৈরি করতে অনেকে সক্ষম হন। এর ফলে প্রকৃতপক্ষে পেশাদার, মেধাবী এবং ক্ষেত্রবিশেষে যারা সরকারের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষায় পারিবারিক ও শিক্ষাজীবন থেকে পরীক্ষিত, তাদের পথকে রুদ্ধ করে দেয়। প্রশাসনসহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে একধরনের হাইব্রিড চাটুকার ও ক্ষমতাধরদের দ্রæতই জয়জয়কার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে একদিকে দলীয় সরকার এবং অপরদিকে দেশও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের সিংহভাগ সমানে ক্ষমতার অপব্যবহারে নিজেরা মোটাতাজা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রমতে, এরা সুকৌশলে দুর্নীতি করেছে এবং দুর্নীতির অর্থ অবৈধ উপায়ে বিদেশে পাচার করেছে।
আমাদের সকলের জানা; লোভ-লালসা, স্বজন-পরিবার-অঞ্চল-বন্ধুপ্রীতি, তদবির-লবিং-ম্যানেজ অপসংস্কৃতির আড়ালে উচ্চ থেকে নি¤œ পর্যন্ত শিক্ষা-বাণিজ্য-ভূমি-হাসপাতাল-ব্যাংক-গণমাধ্যমসহ সমুদয় সামাজিক-রাজনৈতিক পরিমÐলে ধনসম্পদ-প্রতিপত্তিকে অতিশয় শক্তিমান করার ব্যক্তি বিশেষের সীমাহীন কুপ্রবৃত্তি সভ্য সমাজ অত্যন্ত ঘৃণার সাথে অবলোকন করছে। সমস্ত কিছু গিলে খাওয়ার এই অসম প্রবণতা ও হীন পন্থার দৃষ্টান্ত নির্মাণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। অন্যথায় ব্যর্থতার দায়ে আগামী প্রজন্মের বোধগম্য কাঠগড়ায় আমাদের অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। বর্তমানে রাজনীতির আবরণে অর্থ-ক্ষমতালিপ্সু কথিত রাজনীতিবিদদের নরপশুতুল্য বিবেকবর্জিত অবৈধ বাণিজ্য-ভূমি দখল-প্রভাব বিস্তারে প্রান্তিক পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহর-নগরের প্রতিটি অলি-গলিতে প্রোৎসাহিত হিং¯্র বাহিনীর তাÐব-দুর্ধর্ষ কর্মকাÐে জনজীবন নিস্প্রভ-নিরীহ-প্রাণস্পন্দনহীন রূপ পরিগ্রহ করে চলছে। আত্মসংযম-আত্মসমালোচনা-আত্মশুদ্ধির সকল শুভ উদ্যোগকে প্রচÐ ভ্রæক্ষেপে দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের হতাহতের ঘটনা ঘটছে। প্রকৃতপক্ষে দলের পদ-পদবী আদায়, ভূমি-ব্যবসা-বাণিজ্যের জবরদখল, চাঁদা-টেন্ডারবাজি, ঠিকাদারি-হাটের ইজারাসহ বিভিন্ন অবৈধ-অনৈতিক কর্মকাÐ নিয়ে এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে এহেন হত্যাকাÐসহ নানামুখী ভয়ংকর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংস্থার তথ্যমতে, অধিকাংশ রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। আপরাধ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশে চলছে দুর্বৃত্তায়ন। অদর্শিক রাজনীতির অভাবে প্রতিপক্ষ দল ছাড়াও নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সংঘাত-বিরোধ-বিচ্ছেদ প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান।
একান্ত স্মরণযোগ্য যে, ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির প্রথম ব্যাচের সমাপনী অনুষ্ঠানে অফিসারদের দিক-নির্দেশানামূলক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রণিধানযোগ্য। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো। মনে রেখ, মুখে হাসি বুকে বল, তেজভরা মন, মানুষ হইতে হবে, মানুষ যখন। মাঝে মাঝে আমরা অমানুষ হয়ে যাই। এত রক্ত দেওয়ার পরও যে স্বাধীনতা এনেছি, চরিত্রের পরিবর্তন অনেকের হয় নাই। এখনো ঘুসখোর, দুর্নীতিবাজ, চোরাকারবারি, মুনাফাখোরি বাংলার দুঃখী মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুয়েছে। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত এদের আমি অনুরোধ করেছি, আবেদন করেছি, হুমকি দিয়েছি। চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনি। কিন্তু আর না। বাংলার মানুষের জন্য জীবনের যৌবন আমি কারাগারে কাটিয়ে দিয়েছি। এ মানুষের দুঃখ দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই। ………… পাকিস্তানিরা সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছে। কাগজ ছাড়া আমার জন্য কিছু রেখে যায় নাই। বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আমাকে আনতে হয়, আর এই চোরের দল, আমার দুঃখী মানুষের সর্বনাশ করে, এভাবে লুটতরাজ করে খায়। এবার আমি প্রতিজ্ঞা করেছি- যদি ২৫ বছর এই পাকিস্তানি জালেমদের বিরুদ্ধে, জিন্নাহ থেকে আরম্ভ করে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে বুকের পাটা টান করে সংগ্রাম করে থাকতে পারি, আর আমার ত্রিশ লক্ষ লোকের জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারি, তাহলে পারব না? নিশ্চয় ইনশাআল্লাহ পারব।’
বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, ‘এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, এই ঘুসখোর, এই মুনাফাখোর, এই চোরাকারবারিদের নির্মূল করতেই হবে। আমিও প্রতিজ্ঞা নিয়েছি, তোমরাও প্রতিজ্ঞা নাও, বাংলার জনগণও প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করো। আর না। ধর্যের সীমা হারিয়ে ফেলেছি। এই জন্য জীবনের যৌবন নষ্ট করি নাই। এই জন্য স্বাধীনতার জন্য রক্ত দেয় নাই। যে কয়েকটা চোরাকারবারি, ঘুসখোর, মুনাফাখোর, দেশের সম্পদ বাহির করে নিয়ে আসে, জিনিসপত্র গুদামজাত করে মানুষকে না খাইয়ে মারে। উৎখাত করতে হবে বাংলার বুক থেকে তাদের। দেখি কতদূর তারা টিকতে পারে। চোরের শক্তি বেশি, না ইমানদারের শক্তি বেশি। সেইটাই এখন প্রমাণ হয়ে যাবে। অন্যায়ের কাছে কোনোদিন মাথা নত করি নাই। বারবার পাকিস্তানিরা আমাকে ফাঁসি দিতে চেয়েছে। বারবার বুক টান করে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি। কারণ আল্লাহ আমার সহায় ছিল। বাংলার জনগণের আমার উপর দোয়া ছিল। এখনো সেই দোয়া আছে। ইনশাআল্লাহ, তোমাদের সাহায্য তোমাদের সহানুভূতি, তোমাদের কাজ, জনগণের ভালোবাসা আর ইমানদার মানুষের সহযোগিতায় এই দুষ্কৃতকারীদের নির্মূল করতেই হবে।’
দেশপ্রেমিক সচেতন মহলের মতে, সুবিধাভোগীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য এবং কর্ণাশ্রিত অপবাদে লিপ্ত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারীদের অপতৎপরতায় সোনার বাংলা বিনির্মাণে সোনার মানুষ বা সৎ-যোগ্য-মেধাবী মানবসম্পদ যথাযথ মর্যাদাসীন হতে ব্যর্থ হচ্ছে। এখনো প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী-নীতি নৈতিকতায়-সততায়-দেশপ্রেমের অনন্য প্রতীক হিসেবে যারা পরীক্ষিত; তাদের মূল্যায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রে চরমভাবে উপেক্ষিত। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে বর্ণচোরা-অনুপ্রবেশকারী-অন্ধকারের শক্তির সাথে অদৃশ্য যোগসাজশ বা আপোষকামীতায় পারদর্শী কথিত রাজনীতিক-ব্যবসায়ী-পেশাজীবী ব্যক্তিদের কুৎসিত মনোবৃত্তিকে পরাস্ত করা সকল নিবন্ধিত দল-সরকার-দেশবাসীর পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। সকল স্তরের নির্মোহ ও ত্যাগী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অবমূল্যায়নের মোড়কে অপাংক্তেয়-বিতর্কিত-অযাচিত-দোষী সাব্যস্ত করার সকল পাপিষ্ঠ উদ্দেশ্য সংহার করে প্রান্তিক ও ন্যায়পরায়নতায় অবিচল ব্যক্তিবর্গকে যথাযোগ্য মূল্যায়নে যথাস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা না হলে জাতি শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; ভবিষ্যতকে আলোকময় করার সকল সৎ উদ্যোগও বিফলে যাবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অমীয় ভাষণগুলোর তাৎপর্য অনুধাবনে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ধর্মীয় ক্ষেত্রে সত্য-সুন্দর-কল্যাণ-আনন্দের উপাদানসমূহের যথার্থ পরিচর্যা এবং চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে পরিপূর্ণ উপলব্ধিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচ্য হওয়া অবশ্যম্ভাবী। চিহ্নিত আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত-অসৎ-অযোগ্য-অদক্ষ-সর্বক্ষেত্রে কুচক্র-আশ্রয়ী নিকৃষ্ট নাগ-নাগিনীদের পদচারণা স্তব্ধ করা না হলে বিরাজিত প্রতিকূল সমস্যাসমূহ দেশকে লন্ড ভন্ড করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মুক্তির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত পথপরিক্রমায় জাতিকে পরিচালনা করা সময়ের জোর দাবি হিসেবে বিবেচ্য। সার্বিক উন্নয়ন-চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের দায়ভার কোনভাবেই অবহেলিত হতে পারে না। করোনা পরিস্থিতিসহ নানাবিধ দুর্যোগ-দুর্ভোগ ব্যবস্থাপনায় সার্থক ও সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় আদর্শের মৌলিক স্তম্ভগুলোকে জাতির পরিশুদ্ধ মননে প্রোথিত-প্রোৎসাহিত করার উদ্যোগ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এর ব্যতিক্রম ফলশ্রæতির অনিবার্য পরিণতি দেশকে অন্ধকারের গহŸরে কোন পর্যায়ে নিমজ্জিত করবে তার নিবিড় বিশ্লেষণ ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করার সময় মনে হয় দ্রæত পেরিয়ে যাচ্ছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সমাজ-অপরাধবিজ্ঞানী, সাবেক উপাচার্য চ.বি