নাগরিক তথ্য সংগ্রহ ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুর প্রস্তাব

20

নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের জন্য ভবিষ্যতে এলাকাভিত্তিক ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালুর প্রস্তাব রেখে ‘ডিজিটাইজড’ কর্মপন্থা বের করার সুপারিশ এসেছে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। সম্প্রতি ‘ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ এবং ভোটার নিবন্ধন সংক্রান্ত ফরমসমূহ পুনর্বিন্যাসকরণ’ সংক্রান্ত কর্মশালায় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব আসে, তাতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের বিষয়টিও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইসির এনআইডি উইংয়ের কমিনিউকেশন শাখার অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বলেন, আগামীতে কম বয়সীদের তথ্য সংগ্রহকে সামনে রেখে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন সুপারিশগুলো নির্বাচন কমিশনের পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরুর হয়। এরপর থেকে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ, মৃতদের বাদ দেওয়াসহ হালনাগাদ কাজ চলে বাড় বাড়ি গিয়ে। ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে হালনাগাদ করা হয়।
বর্তমানে দেশে ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকের সংখ্যা ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি। একই সঙ্গে এবারের হালনাগাদে (১৫-১৮ বছর বয়সী) চার বছরের তথ্য সংগ্রহ চলছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম ডিজিটাইজ করা এবং পরবর্তী কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে গত রোব ও সোমবার কর্মশালা করে ইসি।
কর্মশালায় বাড়ি বাড়ি না গিয়ে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহে কী ধরনের নিবন্ধন ফরম করা প্রয়োজন, আইন-বিধিমালায় কী ধরনের সংশোধন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন প্রয়োজন- সেসব নিয়েও আলোচনা হয়। খবর বিডিনিউজের
এনআইডি উইংয়ের কর্মকর্তা কাজী আশিকুজ্জামান বলেন, এখন আইন-বিধি মেনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যখন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে আরও বড় পরিসরের কাজ হবে তখনকার জন্য নতুন কর্মপন্থা নিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে কর্মশালায়।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহে সুবিধা, অসুবিধা; মৃতদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, বাড়িতে ভোটারের অনুপস্থিতি সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে ডিজিটাইজ কী পদ্ধতি বের করা যায় তা নিয়ে উপায় খোঁজা হবে।
তিনি জানান, এ জন্য বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা, আইন-বিধি-নীতিমালা সংস্কার ও বাজেটের প্রয়োজন। কমিশনে এ নিয়ে আলোচনা হলেই ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।
আগামীতে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিকের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিতে চায় কমিশন। প্রাথমিকভাবে ১০ বছর বয়সী, পরবর্তীতে ৫ বছর বয়সীদেরও এনআইডি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন। এজন্য থানা বা উপজেলা পর্যায়ে স্থায়ীভাবে নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালে তৎকালীন ইসিও বলেছিল, দেশের সব উপজেলায় সার্ভার স্টেশন হয়ে গেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজটি আর রাখা হবে না, সারা বছর কাজটি চলবে।
বর্তমানে ৫১৮টি উপজেলা নির্বাচন অফিসে সার্ভার স্টেশন রয়েছে। এখন তথ্য সংগ্রহ নিয়ে বিকল্প কিছু ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় আইনে থাকলেও কিছু তথ্য সংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তেমনি বাড়িতে গেলেও অনেক সময় নাগরিকদের পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ঢাকা বা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে বাড়িতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন তথ্য সংগ্রহকারীরা।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করার সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক নিবন্ধন কেন্দ্র খুলে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ দেওয়া যেতে পারে বলে ওই কর্মশালায় মত দেওয়া হয়। এ ধরনের নেবন্ধন কেন্দ্রে তথ্য ফরম পূরণ করা, নাগরিকদের চোখের আইরিশ ও ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়ার কাজ করার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এ পদ্ধতিতে (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কি ধরনের সমস্যা তৈরি হবে, তথ্য ফরমে নাগরিকদের কী কী তথ্য উল্লেখ করতে হবে, ভোটার হতে নিজে থেকে নাগরিকরা নিবন্ধন কেন্দ্রে আসবেন কিনা- এসব বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ-সুপারিশ ও গবেষণাও করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও কর্মশালায় জানানো হয়।