নাগরিকদের জন্য ফুটপাত অবারিত হোক হকারদেরও পুনর্বাসন জরুরি

27

নগরায়নের অপরিহার্য বিষয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা করা। পৌরসভা সৃষ্টির মূলেই রয়েছে শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। ইতিহাসের অমুক নিয়ম হচ্ছে শিল্পাঞ্চল এলাকায় শহর গড়ে উঠা। এরফলে কর্মজীবীদের যাতায়াত ও আবাসন সুবিধা সুনিশ্চিত হয়। বাংলাদেশ এর থেকে মুক্ত নয়। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম শহরজুড়ে রয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। জীবনের তাগিদে মানুষ শহরমুখী হয়েছে এবং হচ্ছে। নগরে বাড়ছে মানুষ। একইসাথে বাড়ছে যান্ত্রিক যোগাযোগ। গাড়ি আর বিশাল অট্টালিকার বাড়ি-অফিসের শহর আগের মত নৈসর্গিক নয়। আধুনিকতা ও সভ্যতার সোপান বাড়লেও সীমিত হয়ে আসছে সাগরিক সুবিধা। এমনকি নাগরিকদের জন্য সড়কের পাশে নির্মিত ফুটপাতও আজ আর নাগরিকদের হাঁটার অবস্থা নেই। হরেকরকম হকার, দোকানদার আর ভিক্ষুকদের দখলে ফুটপাত। শহরের বিভিন্ন বিপণিবিতানের সামনে কিংবা বাজারের নিকটে হকার আর গাড়ি পার্কিং ফুটপাত ছুঁয়ে সড়কের ক্রিয়দাংশ দখল করে নেয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে ফুটপাত হকারমুক্ত করলেও তা একেবারে ক্ষণস্থায়ী। হকার উচ্ছেদ, ফুটপাতের উপর দোকান উচ্ছেদ ইত্যাদি হয় তবে, রাজনীতির মারপেছে ফুটপাত আবারও সেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। বর্তমান মেয়র এম. রেজাউর করিম চৌধুরী নতুন করে ফুটপাত মুক্ত করা ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী নিয়ে মাঠে নেমেছেন। গত পক্ষকালব্যাপী নগরজুড়ে এ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। সড়ক ও ফুটপাত কিছুটা হকার মুক্ত হয়েছে, তবে দেখার বিষয় মেয়রের এ উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন হয় । আমরা মনে করি, হকারদের পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদ করলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। কেননা এতে অনেকের স্বার্থ জড়িত। শ্রমিক সংগঠনগুলোও এখানে সক্রিয়। হকারদের নিজস্ব সংগঠন আছে, যাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল থেকে। তাদের মদদেই হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ পান। আমরা মনে করি, আগে এ চক্রকে ভাঙতে হবে। এটা সবাই অবগত যে, চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে পসরা সাজানো হকারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, সাব-এরিয়া, চকবাজার, আগ্রাবাদ, ২নং গেইট, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, লালদিঘী, বন্দর- ইপিজেড এলাকায় দিন দিন বাড়ছে হকারের সংখ্যা, বাড়ছে চাঁদার হারও। আর এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। হকাররা রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে ফুটপাতে ব্যবসা করলেও তাদের আয়ের একটি বড় অংশ চাঁদাবাজদের পকেটে চলে যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এদিকে নজরদারি দরকার। দুই সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নগরীর প্রায় ৮০ ভাগ ফুটপাতই রয়েছে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে। এ ছাড়া সড়কের বিশাল অংশ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বসেছে পণ্যের পসরা। পথচারীরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন পদে পদে। ফুটপাত নিয়ে চলছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য।
জানা গেছে, ফুটপাতে পসরা সাজানো হকারদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা পরিচয়ে ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রীর দোকান থেকে তোলা হচ্ছে এই বিপুল অঙ্কের চাঁদা। এই চাঁদার ভাগ পাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। একাধিকবার সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পরে আবারো ফুটপাত চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদদেই হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ পান। এ চক্র ভাঙতে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। সেইসঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় বাড়ানো ও হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা আশা করি, বর্তমান মেয়র বিভিন্ন পর্যায়ে হকারদের পুনর্বাসনের বিষয়টি তুলেছেন। ফুটপাত স্থায়ীভাবে নাগরিকদের চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হলে অবশ্যই গঠনমূলক ও স্থায়ী পরিকল্পনা নিতে হবে। এক্ষেত্রে মেয়র যথাযথ উদ্যোগ নেবেন এ প্রত্যাশা নগরবাসীর।