নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ নেই তবুও আতঙ্ক

8

পূর্বদেশ ডেস্ক

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির টানা ২৩ দিন ধরে তুমুল লড়াই চলছিল। মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া গুলি ও একাধিক মর্টার শেল সীমান্তের এপারে বাংলাদেশ ভূখন্ডেও পড়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যে গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি।
হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ বন্ধের নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলছেন সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড বাহিনীর (বিজিপি) বন্দী সদস্যদের উদ্ধারে অগ্রগতি এবং যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন। নাইক্ষ্যংছড়ির এক জনপ্রতিনিধি জানান, হঠাৎ গোলাগুলি বন্ধের ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও মিয়ানমারের মতলব বোঝা কঠিন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলছেন, গত ২৩ দিন চেষ্টা করেও আরাকান আর্মিকে দমন করতে পারেনি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কিন্তু হঠাৎ গুলিবর্ষণ বন্ধ করায় সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এখনো পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছেন না। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় কাউকে সীমান্তের দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের কোনারপাড়া এবং মিয়ানমারের ‘খা মং সেক’ পাহাড়ের মাঝখানের জায়গাটুকু ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’। এখানে আশ্রয়শিবিরে বাস করছেন রাখাইন থেকে বিতাড়িত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় আতঙ্কিত তারা।
আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য বলেন, প্রতিদিন জেট ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ হতো। তবে রবিবার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ কানে আসেনি। হঠাৎ মিয়ানমারের চুপচাপ থাকার লক্ষণ ভালো দেখাচ্ছে না। হয়তো আরও বেশি শক্তি বাড়িয়ে আরকান আর্মিকে দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।
এর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর সাথে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই চলছিল। কখনও কখনও যুদ্ধের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করছে তারা। দু দফা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া মর্টার ও গুলি এসে পড়ে। এতে বান্দরবানের নাঈক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুমের বাসিন্দাদের পাশাপাশি শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরে থাকা চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আতঙ্কে ছিলেন।
গত শনিবার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে শূন্যরেখার কাছাকাছি বাংলাদেশ ভূখন্ডের ১২০ মিটার ভেতরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দুটি গোলা এসে পড়েছিল। সকালে জনবসতিহীন পাহাড়ে এ দুটি গোলা বিস্ফোরিত হলেও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে বান্দরবানের পুলিশ সুপারের (এসপি) দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এর আগে গত ২৮ আগস্ট দুটি মর্টারের শেল নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর ঘুমধুমপাড়ার জনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসে পড়েছিল। তবে গোলা দুটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশের ভূখন্ডে মিয়ানমার বাহিনীর ছোড়া বোমা এসে পড়ার ঘটনায় গতকাল রবিবার ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অং কিউ মোয়ের কাছে মিয়ানমারের এসব কর্মকান্ডে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, এসব তৎপরতা শান্তিকামী জনগণের নিরাপত্তার জন্য গভীর হুমকি এবং তা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তার হাতে একটি কূটনৈতিক পত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ দিনের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হলো।