নাইক্ষ্যংছড়িতে কারেন্টপোকা দমনে কৃষি কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ

248

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাদামী ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত ঝলসে যাওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে কৃষি কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাগণ প্রত্যেকটা এলাকায় সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের হাতে কলমে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচার পন্থা শিখিয়ে দিচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস ও উদ্ভিদ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, উপজেলা পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখেন। এসময় কিভাবে পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচা যায়, তা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন।
কৃষক ক্যাভাই মার্মা জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ করে রোগ দেখা দেয়। প্রথমে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ছিটিয়েছেন তিনি। তারপরও কোন সুফল পাননি। মধ্যম বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কৃষক নুরুল আজিম জানান- তিনি ৩০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ কোন রকমেই তিনি বুঝতে পারেননি। হঠাৎ ধানের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাল হয়ে সব ধান ঝলসে গেছে। বর্তমানে ধান সবে মাত্র শীষ বের হওয়ার পথে। এ অবস্থায় পুরো ধান ক্ষেত ধীরে ধীরে ঝলসে গেছে। কৃষক মনিরুল হক জানান, ১ একর জমিতে তিনি ধান-৫২ ও হাইব্রিড ধান রোপণ করেছেন। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু শীষ বের হওয়ার পর থেকে পোকার আক্রমণ দেখতে পেয়ে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক ছিটিয়ে কোন রকমে রক্ষা পেয়েছেন। তারপরও তিনি আতংকে রয়েছেন। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমার জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও আশেপাশের কৃষকরা তাদের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ না করায় আবারো পোকার আক্রমণের শিকার হতে পারে। কৃষক আবুল হাশেম জানান, এক বিঘা জমিতে চাষাবাদে ব্যয় দাঁড়ায় দশ হাজার টাকা। একদিকে ধানের সঠিক মূল্য নেই। লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়েই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি।
স্থানীয়রা জানান- এবছরের মত ধানের রোগ বালাই আর দেখি নাই। সরজমিনে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় ধান খুব ভাল হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ পোকার আক্রমণে সব শেষ। কৃষি কর্মকর্তাগণ ধান ক্ষেত বাঁচাতে তাদের চেষ্টার কমতি না রাখলেও পোকার আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন- চলতি বছরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩ শত ৩৪ হেক্টর জমি। সে অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রায় রোপা আমন আবাদ করা হয়েছে। হঠাৎ করে উপজেলার কয়েকটি জায়গায় বাদামী ঘাস ফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে কিছু কিছু ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। মঙ্গলবার সরজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকদের ধানের ক্ষতিকারক বিভিন্ন পোকা চিহ্নিতকরণ ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সতর্ক এবং কৃষকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তারা।