নাইক্ষ্যংছড়িতে এক মাসে ১১ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

10

মো.শাফায়েত হোসেন, বান্দরবান

মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রায় অবাধে আসছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা, স্বর্ণ, হেরোইন, ড্রাইজিন, হুইস্কিসহ হরেক রকম মাদকদ্রব্য। নাইক্ষ্যংছড়ির একটি মহল টাকার লোভে পড়ে এসব মাদক পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এসব মাদকদ্রব্য পাচারের ব্যস্ততম রুটে পরিণত হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, বাইশারি সীমান্তের ঠান্ডা ঝিরি, ঘুমধুম নয়া পাড়া, রেজু আমতলী পাড়া, বরইতলী, পাত্রাঝিরিসহ বিভিন্ন পয়েন্ট। রোহিঙ্গাসহ স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট জড়িয়ে পড়েছে এসব পাচার কাজে। ইতোমধ্যে বিজিবি ও পুলিশ বিভিন্ন সময় অভিযানে ইয়াবা ও স্বর্ণ পাচারকারী সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে আটক করে। নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে গত এক মাসে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি ৭৪ লাখেরও বেশি। যা পূর্বের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
গেল এক মাসে ১০ জন ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে মিয়ানমার সীমান্ত উপজেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে পুলিশের অভিযানে ব্যাপক পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে ইয়াবা উদ্ধারের পাশাপাশি আটক হচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীরাও। ওসি মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় যোগদানের পর থেকে মাদকবিরোধি অভিযান অব্যাহত রাখায় বেশ সফলতা পেয়েছেন। সফলতা স্মারক হিসেবে তিনি অসংখ্যবার পেয়েছেন জেলার সেরা ওসির পুরস্কারও। প্রশাসনিক পুরস্কারের পাশাপাশি প্রশংসা কুড়াচ্ছে স্থানীয়দের কাছ থেকেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- ফেসবুকে ওসির প্রশংসায় মুখর রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গ থেকে সাধারণ মানুষও।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২ আগস্ট ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৯৫০ ইয়াবা সহ বশির আহমদ, ৩ আগস্ট ৯ শত ৩০ ইয়াবাসহ রবিউল আলম, ১৩ আগস্ট ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৯ শত ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা রহমত উল্লাহ, ১৫ আগস্ট ২ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের ৯ শত ৪০ ইয়াবা সহ রোহিঙ্গা জুবাইর, ১৬ আগস্ট ১ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৪৬ হাজার ৫ শত ইয়াবাসহ ছৈয়দ উল্লাহ, ছৈয়দ আলম, আবুল কাশেম, রোহিঙ্গা ছাবের আহমদ, রোহিঙ্গা ইব্রাহিম খলিল, ২০ আগস্ট ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ১ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবাসহ সোনাইছড়ি যুবলীগ সভাপতি উছালা মার্মা পিন্টু এবং সর্বশেষ ২৫ আগস্ট ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের ১ লাখ ৩৫ হাজার ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা আনোয়ারকে আটক করে পুলিশ। সব মিলে গত এক মাসে ৩ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশি ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকারও বেশি। আটক ব্যক্তিদের মাঝে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি সরকারি দলীয় লোকজনও রয়েছে।
সূত্র জানায়, পুরাতন রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা ইয়াবা, স্বর্ণ ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি হঠাৎ টাকাপয়সার মালিক হওয়ার আশায় ইয়াবা পাচার ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার স্থানীয় লোকজন। অনেকেই রাজনৈতিক দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা পাচার। অনেকেই ইতিমধ্যে আটক হয়েছে পুলিশের হাতে। তবে স্থানীয়রা ইয়াবার বড় বড় রাঘব-বোয়ালদের ধরতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা বাড়াতে জোর দাবি জানিয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন বলেন, যারা মাদক কারবারি তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি আরো বলেন, যাতে মাদক বহন করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া না যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ইয়াবা উদ্ধারসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরো বলেন, আমার থানা পুলিশের প্রতিটি সদস্য এ ব্যাপারে সোচ্চার। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান আরো জোরদার করা হবে। বড় বড় মাদক কারবারিকে আমরা আটক করব। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীর পরিবর্তন হচ্ছে। ভিন্ন কৌশলে ইয়াবা এবং স্বর্ণ পাচারে সংযুক্ত হচ্ছে। প্রত্যেকটি বিষয়কে আমরা নজরদারিতে রেখেছি। এজন্য নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের বিশেষ একটি ইউনিট কাজ করছে।