‘নবী পরিবারের ওপর জঘন্য নির্মমতা দেখিয়েছে ইয়াজিদ’

12

জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিলের ৮ম দিন ছিল গতকাল রবিবার। এদিন আহলে বায়তপ্রেমী হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে দেশি-বিদেশি আলোচকেরা বলেন, আল্লাহর নেয়ামত পানির অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। পানির ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই হচ্ছে শাহাদাতে কারবালার দর্শন। কারবালার প্রান্তরে নবী পরিবারের অবুঝ নিষ্পাপ শিশু ইমাম আলী আসগর ও আলী আকবরকে এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত দেয়নি ইয়াজিদ বাহিনী। প্রচন্ড তৃষ্ণায় প্রাণ বাঁচাতে ছটপট করছিল অবুঝ শিশু ও নারীরা। ফোরাত নদীর পানি থেকে নারী শিশুসহ নবী পরিবারকে বঞ্চিত করে জঘন্য নির্মমতার কারণে ইয়াজিদ চির ধিকৃত ও ঘৃণ্য হয়েই থাকবে। আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত নদী সমুদ্রের পানির ওপর সকল দেশের সকল মানুষের সমান অধিকার রয়েছে এটাই কারবালার অন্তর্নিহিত দর্শন ও শিক্ষা।
৮ম দিনের মাহ্ফিলে সভাপতিত্ব করেন মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ইয়াজিদের ক্ষমতার দাপট ছিল কিছু সময়ের জন্য। আর ইমাম হোসাইন (রা) জনগণকে ইয়াজিদি দুঃশাসন থেকে মুক্তি দিতেই কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদিদের সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন। সারা দুনিয়ায় আজ ইয়াজিদ নামে একজন লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর হযরত ইমাম হোসাইন (রা) এর নাম আজ ঘরে ঘরে বিদ্যমান।
মাহ্ফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন চউক চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। বিদেশি আলোচক আল্লামা সৈয়দ আফিফ উদ্দিন আল হাসানি জিলানী ও ভারতের এলাহাবাদের খতিবে লাসানি আল্লামা আকবর ইহসানি ছিলেন মূল বক্তা।
আল্লামা সৈয়দ আফিফ উদ্দিন জিলানী বলেন, আওলাদে রাসূলের (দ) স্মরণ ও সম্মান করাই ইসলামের শাশ্বত নির্দেশনা। ইয়াজিদ বাহিনী কারবালা প্রান্তরে নবী পরিবারের ওপর জঘন্য নির্মমতা দেখিয়েছে। ইয়াজিদের আদর্শিক মৃত্যু ঘটেছে কারবালা প্রান্তরে। আর হোসাইনি ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।
আল্লামা আকবর ইহসানি বলেন, কারবালার সংঘাতে হযরত ইমাম হোসাইন (রা) বিজয়ী হয়েছেন। আর ইয়াজিদের স্থান হয়েছে ইতিহাসের কালো খাতায়।
প্রধান অতিথি জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, কারবালার চেতনায় সমাজ থেকে অন্যায় অবিচারসহ যাবতীয় অপরাধ প্রবণতার বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে।
মাহ্ফিলে হানাফি মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে আলোচনা করেন চবি আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ। তিনি বলেন, চারটি বিশুদ্ধ মাযহাবের মধ্যে হানাফি মাযহাবই শ্রেষ্ঠত্বের মানদÐে উত্তীর্ণ। মাযহাব মানা ও অনুসরণ করা ফরজ। মাযহাব না মানলে ঈমানদার হওয়া যাবে না।
ইমাম হোসাইন (রা) সম্পর্কে সুলতানুল হিন্দ-এর কবিতার তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ নিয়ে বক্তব্য রাখেন পীরে তরিকত শাহসুফি মাওলানা মীর মুহাম্মদ মাঈনুদ্দিন নুরী সিদ্দিকী আল কুরাইশি। তিনি বলেন, নবী পরিবার শির দিয়েছেন, কিন্তু ইয়াজিদের বশ্যতা স্বীকার করেননি। দ্বীনের মূল ভিত্তিকে রক্ষা করেছেন হযরত ইমাম হোসাইন (রা)। যা খাজা গরিবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতি (রা) তাঁর কালজয়ী কাব্যে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। আলোচক ছিলেন জমিয়তুল ফালাহ্ মসজিদের সাবেক পেশ ইমাম আল্লামা নূর মোহাম্মদ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ইয়াজিদকে মনে প্রাণে ঘৃণা করা এবং হযরত ইমাম হোসাইন (রা) কে অন্তর দিয়ে ভালোবাসাই ঈমানের দাবি। হোসাইনি ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই নাজাতের চাবিকাঠি।
মাহ্ফিলে অতিথি ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ সোলাইমান আনছারী, রাজনীতিবিদ সোলায়মান আলম শেঠ, দরবারে ইছাপুরীর শাহজাদা সৈয়দ আমানুল্লাহ আহসান, ব্যারিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম, এম.এন. গোল্ডেন গ্রæপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান মফজল আহমদ কোম্পানি, শাহাজাদা আবুল ফোরকান হাশেমী, ফারজানা ফ্যাশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ সেলিম। শাহাদাতে কারবালা মাহ্ফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহ্ফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ, মুহাম্মদ খোরশেদুর রহমান, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ সিরাজুল মোস্তফা, অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমদ, মুহাম্মদ আব্দুল হাই মাসুম, মোহাম্মদ দিলশাদ আহমদ, জাফর আহম্মদ সাওদাগর, মুহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুহাম্মদ মনসুর সিকদার, এস এম সফি, মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম প্রমুখ। মাহ্ফিলে বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন ও মতোয়াল্লিবৃন্দ, বিভিন্ন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিবসহ সর্বস্তরের হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মিলাদ কিয়াম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি-কল্যাণ এবং বিশ্বের নির্যাতিত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মুনাজাত করা হয়। প্রতিদিন সুফি টিভি ইউটিউব ফেসবুকে মাহ্ফিইট সরাসরি লাইভ দেখানো হচ্ছে। মসজিদের নিচতলায় পর্দা সহকারে মহিলাদের জন্য আলোচনা শোনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি