নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

56

খ্যাতিমান কথাশিল্পী, চলচ্চিত্র-নাটক নির্মাতা, বাংলা সাহিত্যের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, নন্দিত কথা মানব প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই বাংলা সাহিত্যের এই সৃষ্টিশীল ও জনপ্রিয় লেখক যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু দিবসে কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পক্ষ থেকে নুহাশ পল্লীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রকাশনা শিল্পের সাথে যুক্ত প্রকাশকরা নুহাশ পল্লীতে বরেণ্য এই কথাশিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে’ দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জে জন্মগহণ করেন এই কথাশিল্পী। তাঁর বাবা ফয়জুর রহমানকে একাত্তরে পাকবাহিনী হত্যা করে। মা আয়েশা ফয়েজ নানান প্রতিকূলতার মধ্যেই তাঁর সন্তানদের লালন-পালন করেন। স্কুল জীবনে হুমায়ূন আহমেদকে তাঁর বাবার চাকুরীস্থলে কুমিল্লা, সিলেট, বগুড়া, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতে হয়। তিনি ১৯৬৭ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (রাজশাহী বিভাগে মেধাতালিকায় দ্বিতীয়), ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্র থাকাবস্থাতেই তাঁর লেখালেখি শুরু। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশ পায় ১৯৭২ সালে। তখন তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। এই দু’টি বই প্রকাশের পর হুমায়ূন আহমেদ একজন শক্তিশালী কথাশিল্পী হিসেবে পাঠকমহলে সমাদৃত হন। তাঁর মৃত্যুর আগপর্যন্ত দুই শতাধিক বই প্রকাশিত হয় যা ছিল আলোচিত-নন্দিত। তাঁর প্রতিটি বই থেকে মানুষ নতুন নতুন শব্দ পেতো যা পাঠককূলকে অনুপ্রেরণা দিতো। দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর তিনি লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর লেখায় বাঙালি সমাজ ও জীবনধারার গল্পমালা ভিন্ন আঙ্গিকে এবং রসাত্বক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। গল্প বলায় ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব একটা কৌশল এবং বর্ণনায় লোকজধারাকে প্রাধান্য দেন তিনি। বাস্তবতা থেকেই উঠে এসেছে তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম। বাংলা সাহিত্যের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে তাঁকে পথিকৃৎ বলেছেন সমোলোচকেরা। তিনি উপন্যাস, গল্প, জীবনী, নাটক, চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি উপন্যাস, কয়েকটি নাটক, চলচ্চিত্র কালজয়ী কর্ম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হুমায়ূন আহমেদ গত শতকের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। তাঁর সৃষ্টিশীলতার জন্যই তিনি এই জনপ্রিয়তা পান। মৃত্যুর পরেও পাঠকরা তাঁর বই কিনছেন। তরুণ সমাজ ও নতুন পাঠকরা এখনো তাঁর বইগুলা কিনেন, ফলে তাঁর রচিত প্রকাশনাগুলোর বিক্রির মাত্রা আজও কমেনি। পুরনো বইগুলোও এখন বিভিন্ন বয়সের পাঠক সংগ্রহ করছেন। বাংলা সাহিত্যে এই লেখকের সৃষ্টি অনাদিকাল অক্ষয় থাকবে বলে তাঁর পাঠককূল মনে করেন।
তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে জ্যোস্না ও জননীর গল্প, মধ্যাহ্ন, কিশোর সমগ্র, হিমুর আছে জল, লীলাবতী, হরতন ইস্কাপন, হিমুর বাবার কথামালা, গল্প পঞ্চাশ, আমিই মিছির আলী, হিমু রিমান্ডে, মিছির আলীর চশমা, দিঘির জলে কার ছায়া গো, আজ হিমুর বিয়ে, লিলুয়া বাতাস, কিছু শৈশব, হুমায়ূন আহমেদের ভৌতিক অমনিবাস, আগুনের পরশমনি, পাপ, ৭১, শ্রাবণ মেঘের দিন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা ও শ্যামল ছায়া।
হুমায়ূন আহমেদ শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরববর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষকতা থেকে তিনি অবসর নেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে হুমায়ূন আহমেদ গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নুহাশ পল্লী’। তাঁর এই অকৃত্রিম জনপ্রিয় বিচরণের ফলে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন হুমায়ুন আহমেদ।