নতুন রাষ্ট্রপতির কাছে তারুণ্যের প্রত্যাশা

20

আজহার মাহমুদ

বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। তিনিই আমাদের বর্তমান রাষ্ট্রপতি। নতুন এই রাষ্ট্রপতির কাছে তরুণ সমাজের প্রত্যাশা অনেক। একজন রাষ্ট্রপতি চাইলে তারুণ্যের অনেকখানি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন। তরুণদের নিয়ে রাষ্ট্রের সকল নেতারা বড় বড় আশা আর স্বপ্ন দেখালেও তাদের নিয়ে আসলে কোনো পরিকল্পনা সেভাবে করা হয়নি।
বলা যায় রাষ্ট্রের তরুণদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কম। বেকারত্ব ও শিক্ষা এই দুটোই এখন আমাদের তরুণদের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে শিক্ষার মান কমছে, অন্যদিকে বছরের পর বছর সেশনজটের কারণে বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। বিশে^র ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষার মান ১২৩ তম। এতেই বুঝা যায় আমাদের বর্তমান শিক্ষার অবস্থা।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ইতোপূর্বে নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্টও হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অথচ বছরের পর বছর লাখ লাখ শিক্ষার্থীর বয়স নষ্ট হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে একটা মেধাশুন্য জাতি। গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের শিক্ষার মান যদি ভালোই হতো আমাদের দেশে সেটার অপব্যবহার হতো না। আজ আমাদের দেশে হাজার হাজার বেকার ঘুরে বেড়াতো না। এখন যুবকদের গ্র্যজুয়েশন শেষ করে সার্টিফিকেট নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। ৫/১০ বছরের অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি হয় না। দেশে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে দেশে প্রতি ১০০ জন তরুণের মধ্যে ২৫ জন বেকার। অর্থাৎ বলা যায় ২৫ শতাংশ তরুণ আজ বেকার হয়ে বসে আছে। আর অন্যান্য সংগঠনের জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২৯ শতাংশ তরুণ বেকার।
চলতি বছরের ২ মে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর এক জরিপ প্রকাশ করে। সেখানে ওঠে এসেছে, চলতি বছরের তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার। এর আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৯০ হাজার।
এভাবে দিন দিন বেকারত্বে সংখ্যা বাড়তে থাকলে সেটা দেশের তরুণ জনপদের জন্য হুমকি। আমরা বরাবরই বলে থাকি তরুণরাই এই দেশের সম্পদ। অথচ সেই তরুণদেরকেই এই সমাজ-রাষ্ট্র ছুঁড়ে ফেলছে প্রতিনিয়ত। অনেকেই জানতে চাইবেন কীভাবে ছুঁড়ে ফেলছে? যাদের এমন প্রশ্ন তাদের কাছে উল্টো প্রশ্ন, এই দেশে কজন শিক্ষার্থী পার্ট টাইম চাকরির সুযোগ পায়? এই দেশে অভিজ্ঞতা ছাড়া ফ্রেশারদের কয়টা কোম্পানি চাকরি দেয়? আসলে এর কোনো উত্তর নাই।
এদেশে আসলে তরুণদের নিয়ে গল্প লেখা যায়, মোটিভেশন দেওয়া যায়, ফিচার করা যায়। কিন্তু সুযোগ করে দেওয়া যায় না। এ পর্যন্ত যতজন তরুণ সফল হয়েছেন সকলেই নিজ প্রচেষ্টায় যুদ্ধ করে। আসলে এই সমাজ তরুণদের মূল্যায়ণ করতে জানে না, বিশ^াস করতে জানে না। তরুণদের প্রতি আস্থাও রাখে না। যদি তাই হতো তাহলে আজকের তরুণরা হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করতো না, নেশায় জড়াতো না, ভ্যালুলেস হয়ে ভবঘুরের মতো থাকতো না। এখনকার বেশিরভাগ তরুণের সময় যাচ্ছে এমন।
যাও অল্প অল্প তরুণ আত্মনির্ভশীল হতে চেষ্টা করে তারা পাচ্ছে না তাদের শ্রমের যথেষ্ট মূল্য। এই তরুণদের মাথায় লবণ রেখে বড়ই খাচ্ছে সকলে। ছোট, অনভিজ্ঞ এসব বলেই তরুণদের হতাশ করে ফেলে এই সমাজ।
এইসবকিছু থেকে এই তরুণদের বের করে আনার প্রচেষ্টা করতে পারেন মাননীয় রাষ্ট্রপতি। তিনিই চাইলে তরুণদের স্বপ্নের সারথি হতে পারেন। আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। বাংলাদেশকে তারুণ্যের শক্তিতে এগিয়ে নিতে পারেন। তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে একটাই আশা তরুণদের এই সমস্যা সমাধানে উনার যেন ভ‚মিকা থাকে।

লেখক : প্রাবন্ধিক