নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ

22

পূর্বদেশ ডেস্ক

নির্বাচন সামনে রেখে ‘সরকার পতনের আন্দোলনে জোর দিতে’ বাম গণতান্ত্রিক জোট ছেড়ে আসা দুই দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই দলসহ সাত সংগঠন মিলে যে নতুন জোট গড়ছে, সেই ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ জোটের যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
জেএসডির সঙ্গে এই জোটে আছে নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের আকাক্সক্ষাভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ইতিহাসের অনিবার্য প্রয়োজনে আজকে গণতন্ত্র মঞ্চ আত্মপ্রকাশ করছে। স্বৈরাচারী সরকারের পতন, রাষ্ট্রব্যবস্থার বদল, শাসনব্যবস্থা ও সাংবিধানিক সংস্কার, রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই মঞ্চে করা হয়েছে।
মহান জনগণের মুক্তিসংগ্রামের এই কাফেলা, এই আন্দোলন-সংগ্রামের সাংবাদিক-আইনজীবী-পেশাজীবী-শ্রমিক-ছাত্র
যুবক-শিক্ষক-প্রকৌশলী-ডাক্তার-বুদ্ধিজীবী-শ্রমজীবীসহ সকল শ্রেণি-পেশার জনগণ এবং দেশবাসীকে আমি আহবান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা, সকল শিল্পকারখানা, সকল সংগঠনে গণতন্ত্র মঞ্চের সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার জন্য উদাত্ত আহŸান জানাচ্ছি।
নতুন এ জোট গঠনকে কেন্দ্র করে মাস কয়েক আগে বাম গণতান্ত্রিক জোটে ভাঙন দেখা দেয়। বাম জোট থেকে বেরিয়ে এসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন মে মাসে নতুন জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে প্রগতিশীল দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে ২০১৩ সালে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা গঠনের পর ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠনের ঘোষণা আসে। ওই বছর জোটগতভাবেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলগুলো। কিন্তু নির্বাচন বা আন্দোলন- কোনো দিকেই সাফল্য আসেনি।
নতুন জোটের দুই দল নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি গত নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ছিল। আর গণঅধিকার পরিষদের নেতা রেজা কিবরিয়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম থেকেই নির্বাচন করেছিলেন।
গণফোরামের ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটে পেয়েছিল সব মিলিয়ে সাতটি আসন। সেই ভরাডুবির পর ধীরে ধীরে ওই ফ্রন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
রেজা কিবরিয়া সম্প্রতি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক নেতা নুরুল হক নূরকে নিয়ে নেতুন দল গড়েন। ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনও গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে ছিল।
নতুন জোট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’র ঘোষণায় রব বলেন, আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের সাথে যারা জড়িত, জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-সাহিত্যে-সংস্কৃতিতে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির পেশা ও সংগঠনের ব্যক্তিকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা হবে। এটাই হবে কার্যকরী জাতীয় ঐক্য। এই ঐক্য গণজাগরণ, গণবিস্ফোরণ, গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত করবে।
জনগণকে আন্দোলনে শরিক হতে বলছি। রাস্তায় সকলকে নামতে হবে। এই লড়াই গণতন্ত্রের লড়াই, এই লড়াই বাঁচা-মারার লড়াই, এই লড়াইয়ে জিততে হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে, যারা জনগণের ওপর অত্যাচার করেছে তাদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদেরকে পালাতে দেয়া যাবে না, তারা যেন পালাতে না পারে।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের রূপরেখা উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ চায় এখন পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও দিশা নিয়ে রাজপথে জনগণের বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এই কারণে আমরা দেশের জনণের আকাক্সক্ষার পাশে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার সংগঠন ও সামাজিক শক্তিগুলোর বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলাকে আমরা জরুরি কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করি।
আমরা মনে করি, বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তিতে গণআন্দোলন-গণসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকে বিদায় দিতে না পারলে মানুষের ভোটের অধিকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কিছুই অর্জন করা যাবে না।
মান্না বলেন, আমরা জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলে দেশে এক নতুন সংগ্রামের সূচনা করতে চাই। আমরা চাই, রাজপথে যুগপৎ ধারায় জনগণের বৃহত্তর কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে যাতে বর্তমান সরকার ও বিদ্যমান শাসনব্যবস্থা বদলাতে জনগণের এক ব্যাপক উত্থান ঘটানো সম্ভব হয়। আমরা জনগণকে এই লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহŸান জানাচ্ছি।
গণতন্ত্র মঞ্চের লক্ষ্য তুলে ধরে মান্না বলেন, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হবার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে এবং ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো ও প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এই গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন করতে পারে।
সরকার যাতে কখনো স্বৈরতন্ত্রী না হতে পারে, সেজন্য নতুন গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় গণতন্ত্র মঞ্চের সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের ৭ দফা এবং জনগণের সার্বিক মঙ্গলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনে ৭ দফা প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন মান্না।
কর্মসূচি
‘পুলিশি অত্যাচার-নির্যাতন-হামলা ’, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলসহ সব জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, সরকারের ‘উদাসীনতার’ প্রতিবাদে আগামী ১১ আগস্ট বেলা ১১টায় গণতান্ত্রিক মঞ্চ ঢাকার রাজপথে বিক্ষোভ করবে। কোথায় সেই কর্মসূচি হবে, তা পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানান আয়োজকরা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহŸায়ক রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নূর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, জেএসডির সানোয়ার হোসেন তালুকদার, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, রাষ্ট্রচিন্তা সংস্কারের আসিফ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।