নতুন বিয়ে করেছি, নতুন স্ত্রীও বুঝতে পারেনি আমি কেমন মানুষ

56

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিনা টিকিটে ভ্রমণ করায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের তিন স্বজনকে জরিমানা করে বরখাস্ত ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরিদর্শক (টিটিই) মো. শফিকুল ইসলামকে কাজে বহাল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম।
বোনের ছেলেদের জরিমানা করায় তার স্ত্রীর টেলিফোনের পর তাক্ষৎণিকভাবে ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও সে বিষয়ে রেলমন্ত্রী কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন। যদিও শনিবার তিনি বলেছিলেন, বিনা টিকিটের ভ্রমণকারীরা তার আত্মীয় কিনা, তা তিনি জানেন না।
মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কীভাবে এই বরখাস্তের আদেশ দেয়া হলো, সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গতকাল রোববার রেল ভবনে সাংবাদিকদের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেহেতু এটা ডিউ প্রসেস (নিয়ম মেনে) করা হয়নি, তাই তার সাসপেনশন অর্ডার (বরখাস্তের আদেশ) আমরা উইথড্র (প্রত্যাহার) করেছি। এবং যে ডিসিও (ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল অফিসার) এই ধরনের অর্ডার দিয়েছে, তাকে শোকজ করছি যে, সে এই অর্ডার কীভাবে দিল।
একজন যাত্রী ঢাকা আসতেছেন, এই অল্প সময়ের মধ্যে সে লিখিত অভিযোগটা কীভাবে পেল। বোঝা গেল, টেলিফোনে অভিযোগের ভিত্তিতে সে ব্যবস্থা নিয়েছে। এটার ব্যাখ্যা আমরা চেয়েছি।
রেলমন্ত্রী জানান, বিনা টিকিটের যাত্রীদের জরিমানা করার পর তার স্ত্রী রেলের একজন কর্মকর্তাকে টেলিফোন করে অভিযোগ করেছিলেন। এরপরেই ওই ব্যবস্থা নেয়া হয়।
মন্ত্রী বলেন, সে তো অভিযোগ করেছে। আমার ওয়াইফও একই রকমের অভিযোগ দিয়েছে। যে লিখিত অভিযোগটা দেয়া হয়েছে, সেটা যখন তাকে জানানো হয়, তখন আমার ওয়াইফও একই রকমের অভিযোগ দিয়েছে যে, এদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়নি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে (টিটিইকে বরখাস্ত) করছে কিনা, সেজন্য তো শোকজ করতেছি আমরা। এখনো তো ডিসিওর বক্তব্য আমরা পাইনি।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা তৈরি করার পর তিনি তার স্ত্রীর কাছে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। তার কথায় টিটিই বরখাস্ত হয়েছেন, সেটাও তিনি জানতেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আমার ওয়াইফকে আমি এই ঘটনার পরে টেলিফোন করেছি। ওয়াইফ যেটা বলেছে, সে ওখানে ছিল। সে টেলিফোন করেছে (রেল কর্মকর্তাদের কাছে), এই ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে, বিষয়টা আপনারা দেখেন।
তবে সেই সময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে তার স্ত্রীর বড় বোন (মামাতো বোন) যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে তিনি দাবি করেন। আমার সঙ্গে তার বড় বোন কথা বলেছেন, এই যে কথা বলেছেন, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কোন কথাই হয়নি। তিনি বলছেন।
টিটিই শফিকুল ইসলাম সেদিন তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, টিটিইর কাজ হল রেলে শৃঙ্খলা আনা। তার কাজই তো রেলে যাত্রীদের সহযোগিতা করা, তাকে সাহায্য করা, সঠিক জায়গায় সেবা দেওয়া।
পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী রেলওয়ে বিভাগের ব্যবস্থাপক শহীদুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলবে। ১১ মে পর্যন্ত তদন্ত চলবে। যারা দোষী সাব্যস্ত হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরাসরি শফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত না করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভালো হতো। এ ক্ষেত্রে যে কর্মকর্তা তাকে বরখাস্ত করেছেন, সেই কর্মকর্তা যদি কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন; তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, টিকিট ছাড়াই পাবনা থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে উঠে এসি কামরায় বসে ছিলেন তিন যাত্রী। টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম এলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলামের আত্মীয় পরিচয় দিয়েছিলেন তারা। তখন টিটিই বিনা টিকিটে ভ্রমণের জন্য তাদের কাছ থেকে জরিমানাসহ ভাড়া আদায় করেন। পাশাপাশি এসি কামরা ছাড়তে হয় তাদের। গত বৃহস্পতিবার রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিইকে মুঠোফোনে বরখাস্ত করার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন শুক্রবার তিনি আর কাজে যোগ দিতে পারেননি। টিটিই শফিকুল পশ্চিম রেলের সদর দপ্তর ঈশ্বরদীতে সংযুক্ত।

টিটিই শফিকুল বললেন, ‘শুকরিয়া’
সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানালেন রেলওয়ের ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে পাবনার পাকশীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। যেহেতু আমি রেলওয়ের জন্য কাজ করি, দেশের জন্য কাজ করি, আমাকে আবার কাজে যোগদানের সুযোগ দিয়েছে, তাতে আমি খুশি।
দুপুরে পাকশীতে শফিকুল সাংবাদিকদের বলেন, এটাই আমার প্রথম সাময়িক বরখাস্ত। এর আগে কখনও সাময়িক বরখাস্ত হইনি। ওই রাতে যখন আমি গাড়িতে দায়িত্ব পালন করেছি, সেদিন আপ অ্যান্ড ডাউনে ৭৮ হাজার টাকার রাজস্ব আদায় করে জমা দিয়েছি।
মন্ত্রীর স্বজন হলেও বাড়তি সুবিধা নয়
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের স্বজনদের কেলেঙ্কারির পর এই ধরনের পরিচয়ে কেউ বাড়তি সুবিধা চাইলেও তা না দিতে রেলকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল এমন এক আদেশ রেলপথ মন্ত্রণালয় জারি করেছে। তা পাঠানো হয়েছে রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সব স্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার, ট্রেনের পরিচালককে।
রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, স¤প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে।
এসব বিষয় জানার পর তা রেলপথ মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা যারা চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং যেসব মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঠিক পরিচয় জানার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় মন্ত্রী, বলা হয় আদেশে।
এই ধরনের ক্ষেত্রে রেল কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত না হয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।