নতুন নয়, পুরনো সড়ক সংস্কারে জোর দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

13

পূর্বদেশ ডেস্ক

দেশে নতুন রাস্তা করার চেয়ে বিদ্যমান সড়কগুলোকে রক্ষণবেক্ষণ করা প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা জানান। বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা প্রচুর রোড করেছি। এখন আমাদের মেইন টার্গেট হওয়া উচিত বিল্ডিংয়ের চেয়ে মেইনটেইন্যান্স। যে সড়কগুলো আমরা বানিয়েছি এগুলোর সুরক্ষা দিতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে, আপগ্রেডিং করতে হবে, প্রশস্ত করতে হবে। খালি নতুন নতুন সড়ক না বানিয়ে বর্তমানে হাতের সড়কগুলোকে চালু রাখেন, ভালো করেন এবং রিপেয়ার করেন। এটাই ছিল আজকে তার মেইন বার্তা। মান্নান বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন প্রচুর সড়ক হয়ে গেছে। আপাতত একটু ব্রেক দেন নতুন নির্মাণে।পুরনোগুলোকে সংরক্ষণ করুণ।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরেন।
তার ধারণা আইটি ট্রেনিং সম্পর্কে আরও বেশি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। ভালো একটা সম্ভাবনা এ সেক্টরে। কমবয়সী ছেলে মেয়ে অথবা নারী পুরুষ দেশের অনেকেই ভালো আর্ন (আয়) করছে। এটা সকলের ভালো করে জানা উচিত।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ খাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন।
৫ হাজার ৮২৫.৭৪ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন
এদিন জাতীয় অর্থনীতি পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫ হাজার ৮২৫ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১১৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকার ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেইনিং ইনকিউবেশন সেন্টার (১৪)’ রয়েছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আজ (মঙ্গলবার) আনুমানিক মোট ৫ হাজার ৮২৫ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অনুমোদিত ১১টি প্রকল্পের মধ্যে ৮টি নতুন। অপর তিনটি সংশোধিত।
তিনি আরো বলেন, মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৩ হাজার ৯৬৩ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা সরকার দেবে এবং ১ হাজার ২২০ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা সংগঠনগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে ও ৬৪১ দশমিক ৯০ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা থেকে আসবে।
মান্নান জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ ১ হাজার ১১৪ দশমিক ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করবে।
তিনি আরো বলেন, সাত বিভাগের ১৪টি জেলায় এই ১৪টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিভাগগুলো হচ্ছে- ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে শক্তি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৩টি প্রকল্প, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুটি, সড়ক, পরিবহন ও যোগাযোগ বিভাগের আওতায় দুটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি, নৌমন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি প্রকল্প রয়েছে।
শক্তি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুটি প্রকল্প হচ্ছে- ৬৭৯ দশমিক৭২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি উডেন পোল মাউন্টেড সাবস্টেশনস ইন বিআরইবি (পর্যায়-১)। ২৪১ দশমিক ০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব স্মার্ট ডিস্ট্রিবিশন সিস্টেম ইন নেসকো এরিয়া’ প্রকল্প এবং ৫৫৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ইন্সটলেশন অবসোল্যুট পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন (থার্ড রিভিশন) প্রকল্প।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতায় দুটি প্রকল্প হচ্ছে- ১৩৭ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর স্থানীয় সরকারের উদ্যোগ প্রকল্প ও ১৯৮ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘যশোরে শেখ জহিরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্থাপন’ প্রকল্প।
সড়ক, পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় দুটি প্রকল্প হচ্ছে- ৪৬৩ দশমিক ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর জেলা সড়ক বিভাগের আওতায় ‘হিলি (স্থল বন্দর)-ডুগডুগি-ঘোরঘাট জাতীয় মহাসড়কের যথযথ উন্নয়ন’ ও মার্কেট এলাকায় চত্বর ও নর্দমা নির্মাণ ও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ভগ্নপ্রায় অথবা সরু কালভার্ট পুনঃনির্মাণ প্রকল্প এবং ১ হাজার ৮৪২ দশমিক ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-পরাণগঞ্জ-ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প।
সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে-৩৪২ দশমিক ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মিঠামাইন উপজেলা অংশের গোড়াউত্রা, ইটনা উপজিলা অংশের বলাই-শ্রীনগর নদী, ধানু নদী ও নামাকুরান নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা অংশের ধলেশ্বরী নদীর উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এবং ৬৪ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার নির্মাণ (প্রথম পর্যায় ৪০) এবং ২ হাজার ৫২০ দশমিক ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০টি উপজিলায় কারিগরি স্কুল স্থাপন। খবর বিডিনিউজ/ বাসস।