নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাশার পথে শুরু হোক নবযাত্রা

17

 

সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিযুক্ত করা হয়েছে সাবেক আইন ও প্রতিরক্ষা সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। বাকি চার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান। আপাতত নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্যদের সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে কোন প্রশ্ন কোন পক্ষ থেকে উত্থাপন হয়নি বিধায় ধারণা করা যায়, নির্বাচন কমিশন ভালোই হয়েছে। এখন দেশের জনগণ এ ভালো, অভিজ্ঞ ও দক্ষ মানুষগুলো থেকে একটি ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করে। নব নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আগামী বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে জেলা পরিষদসহ কয়েকটি মেয়াদ উত্তীর্ণ স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে কমিশনকে জাতীয় নির্বাচনে তাদের সততা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সর্বোপরি যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। আমরা আশাকরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনের সুদৃঢ় নেতৃত্বে প্রত্যাশার পথে যাত্রা শুরু হবে নতুন ইসির।
সূত্র জানায়, নতুন নির্বাচন কমিশনে সিইসি পদে নিয়োগ পাওয়া সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল চট্টগ্রামের স›দ্বীপের অধিবাসী। একজন সৎ, মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসর নিয়েছিলেন। তিনি বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আগে তিনি আইন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি চাকরি থেকে বিদায় নেয়ার পর তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। চার নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে বেগম রাশিদা সুলতানা জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। আহসান হাবীব খান, সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে থাকা অবস্থায় অবসর গ্রহণ করেন। সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ আলমগীর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব ছিলেন। আর সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান জ্বালানি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
সার্চ কমিটির কাছ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য সুপারিশকৃত ১০ জনের নামের তালিকা পাওয়ার পর থেকেই যাচাই-বাছাই শুরু করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ব্যাপক পর্যালোচনা করে সেখান থেকে অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন ১ জনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও ৪ জনকে কমিশনার নিয়োগ করেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শও নেন। এই ইসি পরবর্তী ৫ বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন পরিচালনা করবে।
উল্লেখ্য যে, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য ১০ নাম সুপারিশ করতে ৫ ফেব্রæয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আপীল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে গেজেট প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির শেষ বৈঠকে ব্যাপক পর্যালোচনার পর ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তবে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সিলগালা করে কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হেফাজতে রাখা হয়। আনুষ্ঠানিকভাব ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়া হয়। এর আগে ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সার্চ কমিটির বৈঠকে ব্যাপক পর্যালোচনা করে ১২-১৩টি নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হয়। নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য ২৬ রাজনৈতিক দল, ৬ পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করা ৩২২ নামের মধ্য থেকে ১০ জনের তালিকা ঠিক করতে বেশ ক’দফা দফা বৈঠক করে সার্চ কমিটি। সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ২০ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ১২-১৩ জনের নাম ঠিক করা হয়। এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে প্রস্তাবিত ৩২২ নাম থেকে ২০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে সার্চ কমিটি। তার আগে বৈঠক হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। ওই বৈঠকে ৩২২ নাম নিয়ে পর্যালোচনা হয়।
আমরা জানি, ১৭ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন ও অনুমোদন করা হয়। এরপর কিছু সংশোধনীসহ ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের শিরোনামেও সামান্য সংশোধন হয়। সংশোধনীসহ বিলটি পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ শিরোনামে। ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি এ বিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়। বলাবাহুল্য যে, স্বাধীনতার পর দেশে এবারই প্রথম সংবিধান অনুসারে আইন প্রণয়ন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর আগে ইসি নিয়োগের আইন না থাকলেও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ২০১২ সালে জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ২০১৭ সালে নিয়োগ দেয়া নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ওই সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুসারে ২০১৭ সালে ৫ বছরের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন ওই বছর ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং মেয়াদ শেষে বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেয়।