নগর মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে

18

২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) চট্টগ্রাম নগর মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২১ সালে এপ্রিল মাসে এ উদ্যোগ নেয়া হলেও এর দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হয়েছে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর মাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মনে করেন, এ নগর শাসন, সেবা ও ভাবনার সব গোষ্ঠীকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হবে। অর্থাৎ স্টেকহোল্ডার বা অংশীদারদের সাথে নিয়ে আগামীর চট্টগ্রামের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ আপাতত ভালোই মনে হয়। এ নগরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে অংশীদার হলে পরিকল্পনাটি নির্ভুল হবে, গ্রহণযোগ্য হবে সর্বোপরি বাস্তবায়নযোগ্য হবে বলে আশা রাখা যায়। আমরা জানি এর আগে ১৯৯৫ সালে এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম নগর মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। একটি আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও সমৃদ্ধ নগর গড়ে তোলার প্রত্যাশা নিয়ে ওই মাস্টার প্ø্যান গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘ ২০ বছরে এর ন্যূনতম ১০ ভাগ পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৫ সালে প্ল্যানটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। তিন বছর পর নতুন মাস্টার প্লান গ্রহণের উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও তা কার্যক্রম শুরু করতে লাগে আরো তিন বছর। এখন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, এরপর নিরীক্ষণ, পর্যালোচনা ইত্যাদি শেষে বাস্তবায়নের কথা আসবে। এ সুদূর পথ অতিক্রম করা সময়ের ব্যাপার। এরপরও আমরা মনে করি, মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা বড় কথা নয়, এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারা বা আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করাটাই বড় কথা। অতীতের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, ১৯৯৫ সালের গৃহীত মাস্টার প্ল্যানের কিছুটা হলেও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলে, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হত না, পাহাড়গুলো অক্ষয় থাকত, নদী, খাল, জলাশয়, পুকুর ও দিঘি ভরাট হত না, অবৈধ দখলদারদের করালগ্রাসে সর্বনাশ হতনা চট্টগ্রাম নগরীর। বললে অত্যুক্তি হবেনা যে, একসময়ের প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রাম এখন রূপরস হীন এক বয়োবৃদ্ধ নারীতে পরিণত করা হয়েছে। সিডিএ কর্তৃপক্ষ এ নগরকে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে তার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত নগরায়ন ও গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে নতুন করে ২০ বছরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এতে প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ করা হবে। এই মাস্টারপ্ল্যান ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর উন্নয়নের জন্য ১৯৯৫ সালে করা মহাপরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। এবার পাঁচ বছর ব্যবধান রেখে ২০২০ সাল থেকে ২০৪১ সালের জন্য নতুন মহাপরিকল্পনা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পরিকল্পিত নগরায়ন, গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ২০ বছরের জন্য নতুন এই মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটির আওতায় স্ট্রাকচার প্ল্যান, তিনটি নির্ধারিত এলাকার জন্য অ্যাকশন এরিয়া প্ল্যান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাস্টারপ্ল্যান, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এর আগে ১৯৯৫ সালে ২৫ বছর মেয়াদি সর্বশেষ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়। এদিকে স¤প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে মহাপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজন সভা করেছে সিডিএ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে আগামী ২০২০-৪১ সালের জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরনগরীকে বাণিজ্যিক এবং পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে পেশাজীবী প্রতিনিধি, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, চাকরিজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। শুধু পরিকল্পনা গ্রহণ করলে হবে না, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সকলকে আন্তরিক হতে হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ১৯৬১ সালে। নিয়মানুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে দ্বিতীয় দফায় মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু তারপর আর মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়নি। এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হলে আবারও মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। তাছাড়া নিয়মানুযায়ী মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার পর তা আইনে পরিণত হয়। মহাপরিকল্পনার নির্দেশনা মেনেই নগরীর উন্নয়ন কর্মকাÐ পরিচালিত হয়ে থাকে। আমরা আশা করি, সিডিএ’র এ উদ্যোগ সঠিক সময়ে সম্পন্ন হবে। তবে প্ল্যান বাস্তবায়নে সকলের আন্তরিকতার বিকল্প নেই।