‘নগর ভবন’ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়

80

সিটি মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পরের বছরেই আধুনিক নগর ভবন করার উদ্যোগ নেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু সে সময় প্রস্তাবিত প্রকল্প নাকচ করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শতকোটি টাকার সহায়তায় নিজস্ব অর্থায়নে নগর ভবন করতে চেয়েছিলেন মেয়র। মন্ত্রণালয়টির কোনো সাড়া না পেয়ে থমকে যায় সে প্রকল্প। তারপরও হাল না ছেড়ে আবারও অত্যাধুনিক সুবিধা যোগ করে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশন। দুই দফা সংশোধনীর পর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রি-একনেক সভায় পাস হয়েছে প্রকল্পটি। এবার একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পটি। এসব বিষয় নিশ্চিত করেছেন চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ। জানা গেছে, গতমাসে একটি আইকনিক ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন নগর ভবন নির্মাণের প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (আইপিইসি) সভায় অনুমোদিত হয়েছে। গতকালের প্রি-একনেক সভা প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে, তবে তৃতীয় কোনো পক্ষ দিয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে সভাটি। এরপরই প্রকল্পটি একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উঠবে। আরও জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট ২০২ কোটি টাকার নগর ভবনের প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (আইপিইসি) সভায় উঠেছিল। সে সভা প্রস্তাবিত নগর ভবনে ‘অটোমেটেড’ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা সংশোধনের নির্দেশ দেয়। এখন দেশের সর্বাধুনিক ও ই-কন্ট্রোলিং সিস্টেম সুবিধাসম্পন্নভাবে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় ২৭ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ২২৯ কোটি।
অবশ্য এর আগে ২০১৭ সালে নগর ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। মন্ত্রণালয় সেটি বাতিল করে দেয়। পরবর্তীতে গত বছরের ৫ আগস্ট নতুন নগর ভবন নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে একটি দাপ্তরিক পত্র দিয়েছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেটারও কোনো সুরাহা মেলেনি।
প্রকল্পের ডিপিপি থেকে জানা যায়, ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫৪ বর্গফুটের ২৩ তলাবিশিষ্ট সিটি ভবনের ২ বেইজমেন্ট ও ফাউন্ডেশনসহ ২৩ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণ ও আনুষাঙ্গিক অন্যান্য কাজে ব্যয় হবে ১১৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা, ফার্নিচার সরবরাহসহ ইন্টেরিয়র কাজে ব্যয় ২৫ কোটি, ৬টি লিফট সরবরাহ ও স্থাপনে ৬ কোটি টাকা, ২০০টি এয়ারকুলার সরবরাহ ও স্থাপনে ২ কোটি টাকা, ১টি সাব-স্টেশন, জেনারেটর এবং সোলার প্যানেল সরবরাহ ও স্থাপনে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই প্রকল্পের ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সির জন্য রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৮৯৫ শতাংশ এবং প্রাইস কনটিনজেন্সির জন্য রাখা হয়েছে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। এগুলো প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৮৯৫ শতাংশ। প্রকল্পের ডিপিপিতে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের সামগ্রিক উদ্দেশ্য হচ্ছে নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত এবং নাগরিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করা। নগরবাসীর আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা, বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মপ্রবাহ নিশ্চিত করে সময়ের অপচয় রোধ করা, নগরবাসীকে ডিজিটাল সেবা প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা প্রদান করা।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরবাসীর স্মার্ট সেবা নিশ্চিতে স্মার্ট নগর ভবনের খুব প্রয়োজন। আমি সেটার প্রয়োজনীয়তা থেকে নগর ভবনের প্রকল্পটি হাতে নিয়েছি। এখানে যেসব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, তা বাংলাদেশের আর কোনো সিটি করপোরেশনের নেই। অনেক দেন-দরবার করার পর প্রকল্পটি অনুমোদনের পথে। আশা করছি শীঘ্রই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হবে।