নগর ও উত্তরে ছাত্রলীগের কমিটির তোড়জোড় নেই

68

দেশের সকল সাংগঠনিক ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে অনেকেই কমিটি জমা দেয়নি। যে কারণে গত ৯ জুলাই এক বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে সশরীরে উপস্থিত হয়ে কমিটি জমা না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। অন্যথায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এমন ঘোষণাতেও টনক নড়েনি চট্টগ্রাম উত্তর ও নগর ছাত্রলীগের। নগর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও নতুন কমিটি গঠনে তোড়জোড় নেই। অন্যদিকে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠনের পর বছর পার হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে পারেনি। এক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের গতকাল ঘোষিত আংশিক কমিটি। এছাড়া দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে দপ্তর সেলে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার কমিটি জমা পড়েছে। উত্তর ও নগরের কমিটি জমা দেয়নি। কেন কমিটি জমা দেয়নি, তা আমরা দেখবো। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে মো. রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মো. ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠনে এবারও ‘রীতি’ মানা হয়েছে। চবি ছাত্রলীগে নগর আওয়ামী লীগের দুই নেতা প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা সক্রিয় ছিলেন।
সাবেক সিটি মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেলে তাঁর অনুসারীরা শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছায়াতলে চলে যায়। যে কারণে গত কমিটিতে আ জ ম নাছির উদ্দিন পক্ষের আলমগীর টিপু সভাপতি হলেও এবার নওফেল অনুসারী রুবেল সভাপতি হয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মহিউদ্দিন অনুসারী সুজনের পরিবর্তে নাছির অনুসারী ইকবাল টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন টিপু পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগে ক্যাম্পাসে গিয়ে সবার সাথে কথা বলে সম্প্রীতির ক্যাম্পাস উপহার দিতে চাই। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকায় নতুন কমিটি নিয়ে সবার মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করছে। অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। আমাদের দুইজনের মধ্যে সমন্বয় আছে। এ সমন্বয় যাতে অব্যাহত থাকে এবং ক্যাম্পাসে অতীতের ঘটনাগুলো যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেদিকে নজর রাখবো। ছাত্রলীগের ইমেজ রক্ষা করতে সবসময় সচেষ্ট থাকবো।’
২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লেও পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর উভয় পক্ষ সমঝোতায় আসে। এরপর কয়েকদফা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষতক তা হয়নি।
এরমধ্যে ২০১৮ সালের এপ্রিলে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি পদত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। নগর ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। সম্প্রতি নতুন কমিটির দাবিতে মিছিল-সমাবেশ করছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘আমরা দ্রæত সময়ের মধ্যে ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা ও কলেজ কমিটি চাই। এগুলো আমাদের চ্যালেঞ্জ। কমিটিগুলো করার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যখনই নির্দেশনা দিবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।’
নগরীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৫ মে তানভীর হোসেন চৌধুরী তপুকে সভাপতি ও মোহাম্মদ রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির বছর পার হলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি।
উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়ে যাবে। প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করেছি। তবে কেন্দ্রে এখনও জমা দেওয়া হয়নি। কয়েকজন এমপি তালিকা না দেওয়ায় একটু দেরি হচ্ছে। এমপিদের তালিকা পেলেই কেন্দ্রে জমা দিব।’
২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনা মোতাবেক নতুন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যেই কমিটি আসছে- এমন ঘোষণায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছি। কেন্দ্র যে কোন মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা করতে পারে। যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে একটি সুন্দর কমিটি আসবে বলে আশা করছি।’