নগর আওয়ামী লীগে শঙ্কা উত্তর-দক্ষিণে উচ্ছ্বাস

45

চট্টগ্রামে আয়োজিত ছয় জেলার প্রতিনিধি সভায় সম্মেলন ঘিরে দিক-নির্দেশনা দিয়ে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সোমবার মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করার কথা ছিল। বর্ধিত সভাটি হয়নি। যে কারণে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে লুকোচুরি রয়ে গেছে। আর সম্মেলন না হওয়ায় নগরীর তৃণমূলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে নীরবতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে উত্তর জেলায় সম্মেলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। দক্ষিণেও চারটি উপজেলার সম্মেলন হওয়া নিয়ে শঙ্কা থাকলেও জেলা সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ায় নেতা-কর্মীরা বেশ উচ্ছ্বাসিত। গ্রাম-শহর সর্বত্রই সম্মেলন আলোচনায় সরগরম আওয়ামী লীগের রাজনীতি অঙ্গন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ পূর্বদেশকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জাতীয় সম্মেলনের আগে অবশ্যই সম্মেলন করতে হবে। কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি’।
জানা গেছে, আগামিকাল বুধবার আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে। এসময় তিনি চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে বৈঠক করে সম্মেলন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে নগর আওয়ামী লীগের সব ওয়ার্ডের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ২৭ আগস্ট ঢাকা থেকে সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হলে ওয়ার্ড সম্মেলন ভেস্তে যায়। পরে গত ২৭ অক্টোবর আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা বর্ধিত সভার আয়োজন করেই সেখান থেকেই সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করার ঘোষণা দেন। কিন্তু বর্ধিত সভা না হওয়ায় সম্মেলন হওয়া না হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নগরীতে দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সম্মেলন হবে ৭ ডিসেম্বর। সম্মেলনের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে দলের নেতারা। জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম সম্মেলন সফল করতে দফায় দফায় সভা করছেন। ইতোমধ্যে সাতটি উপ-কমিটি গঠন করেছেন। এছাড়াও আগামি ১৬ নভেম্বর মিরসরাই, ২২ নভেম্বর সীতাকুন্ড, ২৬ নভেম্বর হাটহাজারী ও ৩০ নভেম্বর স›দ্বীপ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। উপজেলা ও জেলা সম্মেলনের আগে বিভিন্ন উপজেলায় পৌরসভা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে সম্মেলন হচ্ছে। তৃণমূলে এমন সম্মেলন আওয়াজে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ৮ ডিসেম্বর। সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ বিরাজ করলেও উপজেলার সম্মেলন না হওয়ায় কিছুটা শঙ্কা বিরাজ করছে। আগামি ১৫ নভেম্বর বোয়ালখালী উপজেলায় সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও সেখানেও বিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দুইটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে একই জায়গায় সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত সেখানে সম্মেলন হওয়া না হওয়া নির্ভর করছে জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতার সিদ্ধান্তের উপর। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারাও বোয়ালখালীর সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলীর সম্মেলন ঘিরেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগ সম্মেলন না হওয়া বাঁশখালী আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম। তবে জাতীয় সম্মেলনের আগে এ উপজেলার সম্মেলন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর সম্মেলন দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে নেতা-কর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপজেলায় এ চার কমিটির সম্মেলন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে জেলা সম্মেলন অনেকটা নিশ্চিত। জেলা কমিটিতে আসতে অনেকেই ইতোমধ্যে লবিং-তদবির শুরু করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন পূর্বদেশকে বলেন, ‘বর্ধিত সভা হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। দ্রুত ওয়ার্কিং কমিটির সভা করে সম্মেলন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ইতোমধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য দলীয় সভানেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই সম্মেলন করতে হবে। উত্তর ও দক্ষিণ জেলার পরেই মহানগরের সম্মেলন হবে এবং তা জাতীয় সম্মেলনের আগেই হবে’।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, আগামি ৭ ডিসেম্বর সম্মেলনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে সম্মেলন হবে। জেলার সম্মেলনের আগেই চারটি উপজেলার সম্মেলন করতে তারিখ দেয়া হয়েছে। উত্তর জেলার বর্তমান কমিটি ও সাতটি সাব-কমিটি সম্মেলনের যাবতীয় কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বোয়ালখালী ও বাঁশখালীর সম্মেলন জাতীয় সম্মেলনের পর হবে। আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে সম্মেলনের বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী তৃণমূল নেতাদের সাথে আলাপ করে তারিখ নির্ধারণ করবেন’।
উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলায় সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে খাগড়াছড়িতে ২৪ নভেম্বর, রাঙামাটিতে ২৫ নভেম্বর, বান্দরবানে ২৬ নভেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।