নগর আওয়ামী লীগের ছয় ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন

36

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন চারটি ওয়ার্ডের ছয়টি ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল দিনভর এসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের সদস্য সংগ্রহ শেষ না হওয়ায় ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল। ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে তিন ইউনিটের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই একটি নব অধ্যায় সূচিত হল। নতুন পুরাতন মিলে এই ইউনিটগুলো আগামী নেতৃত্বকে অবশ্যই সুসংগঠিত করবে। তিনি বলেন, ঘরে বসে নয়, উন্মুক্ত স্থানে আমন্ত্রিত কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল তা অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমাদের মধ্যে অভিযোগ বা মতভিন্নতা থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় কর্তব্য হল শৃঙ্খলাকে সুরক্ষা করা। এই শৃঙ্খলা সুরক্ষিত হলে দলের ভিত্তি সুদৃঢ় হবে। জানা যায়, ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডের আওতাধীন ‘খ’ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, সাড়ে ১২টায় বাগমনিরাম স্কুলের পাশের মাঠে ‘ক’ ইউনিট ও এমএ মান্নান চত্বরে ‘গ’ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘ক’ ইউনিটে আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও হাসান মনসুরের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সুনীল কুমার সরকার, উপদেষ্টা আলহাজ শফর আলী, জহরলাল হাজারী, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ ফিরোজ আহমেদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্যানেল মেয়র আলহাজ গিয়াস উদ্দিন, ইকবাল হাসান, সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ‘ক’ ইউনিটের সভাপতি শহিদুল ইসলাম খোকন প্রমুখ। সম্মেলনে কণ্ঠভোটে ‘ক’ ইউনিটে মো. শাহজাহান সভাপতি, মো. শফিউল আজম সাধারণ সম্পাদক, ‘খ’ ইউনিটে কামরুল ইসলাম সভাপতি, আনোয়ার হোসেন সাধারণ সম্পাদক ও ‘গ’ ইউনিটে রাকিব মোল্লাহ সভাপতি, জহির আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সম্মেলন সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান মনসুর পূর্বদেশকে বলেন, ‘সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কে কি বলছে তা আমরা দেখছি না। আমরা চাই সম্মেলন হোক। সম্মেলনে যোগ্য নেতৃত্ব আসুক। তৃণমূলে এমন সম্মেলন বাগমনিরামবাসী ২০ বছর পর দেখছে। সুতরাং সবার মধ্যে এই সম্মেলন নিয়ে উচ্ছ্বাস আছে।’
এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি বিদ্যালয়ের মাঠে। বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে ইসমাইল মনুকে সভাপতি ও সুজিত ঘোষকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই সম্মেলনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ১১ বছর পর এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীরা প্রাণবন্ত ছিলেন। ১৫০ জন কাউন্সিলর স্বতস্ফুর্তভাবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি পদে প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন পদপ্রত্যাশী ছিলেন। পরে তারা একজনকে মেনে নিলে কমিটি ঘোষণা করা হয়।’
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন শেষে মিলন চক্রবর্তীকে সভাপতি ও শফিউল আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে নালাপাড়া সিটি বালিকা বিদ্যালয় এলাকায় ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কমিটি গঠন হয়নি। দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। সেখানে দুটি পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। সদস্য সংগ্রহ শেষ না হওয়াসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সম্মেলন করা হয়নি বলে জানা যায়।
দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পেয়ার মোহাম্মদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন হয়নি। সদস্য সংগ্রহে কয়েকজন বাকি থাকায় এবং কেউ কেউ অনুরোধ করায় সম্মেলন পিছিয়ে ১৯ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা যখন মাইকিং করে সদস্য সংগ্রহ করেছি তখন অনেকেই আসেননি। এখন যিনি ভিন্নমত পোষণ করছেন তিনি যুবলীগ করেন। আমাদের বলা আছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ করা কেউ সদস্য ফরম পূরণ করতে চাইলে পদত্যাগ করতে হবে।’
দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডে সম্মেলনের বিরোধিতা করা রফিকুল ইসলাম বাপ্পী পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোনো উন্মুক্ত স্থানে নয়, আবুল কালাম সওদাগরের বাড়িতে সম্মেলনের বৈঠক হয়েছিল। আমরা সেখানে কাউকে যেতে দিইনি। শেষ পর্যন্ত সম্মেলন করতে পারেনি। অনৈতিক উপায়ে সম্মেলন করলে আমরা সংবাদ সম্মেলন করবো।’

টিপুকে বসাতে নিজের চেয়ার ছাড়লেন গিয়াস : চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫নং বাগমনিরাম ওয়ার্ডে ‘ক’ ইউনিটের সম্মেলন চলাকালে বিনয়ী মনোভাব দেখিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন। একইসাথে তিনি বাগমনিরাম ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে গিয়াস উদ্দিন ছিলেন প্রধান অতিথি। উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
সম্মেলন স্থলের বাইরে বানানো ফ্ল্যাগ স্টান্ড থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর মঞ্চে বসেন অতিথিরা। সেখানে ছয়টি চেয়ার বসানো হলেও অতিথি বেড়ে যাওয়ায় সম্মেলনের পর্যবেক্ষক নগর আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল লতিফ টিপুসহ কয়েকজন মঞ্চের নিচে চেয়ারে বসেন। বিষয়টি দেখে তাৎক্ষণিক নিজেই দাঁড়িয়ে টিপুকে মঞ্চে আসার আমন্ত্রণ জানান। এক পর্যায়ে নিজের চেয়ার ছেড়ে দিয়ে প্রধান অতিথি গিয়াস উদ্দিন টিপুকে বসতে দেন। এসময় গিয়াস মঞ্চের ডান পাশের একটি প্লাস্টিক চেয়ারে বসেন।
সম্মেলনস্থলে বসা দুইজন কাউন্সিলর বলেন, ‘অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন। নিজে প্রধান অতিথি হয়েও সিনিয়রদের জায়গা দিতে মঞ্চের এক পাশে চলে গেলেন। বর্তমান রাজনীতিতে এমন ভদ্রতা ও নমনীয়তা চোখে পড়ে কম। যেটি গিয়াস উদ্দিন দেখালেন।’