নগরে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু প্রথম দিন টিকা পেল ১৯ হাজার শিক্ষার্থী কেন্দ্রে হুড়োহুড়ি-বিশৃংখলা, উধাও স্বাস্থ্যবিধি

33

১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। নগরীতে প্রথম দিন ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে টিকা দেয়ার বড় এ আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য তিনটি কমিউনিটি সেন্টারে শিক্ষার্থীদের জড়ো হতে বলা হয়। এ কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সকাল থেকেই তিন কমিউনিটি সেন্টারে জড়ো হতে থাকে। সাথে তাদের অভিভাবকরাও। আশপাশের রাস্তা লোকে লোকারণ্য। কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরে মানুষে টইটুম্বুর অবস্থা। জড়ো হওয়া অধিকাংশের মুখে নেই মাস্ক, নেই সামাজিক দূরত্ব। আবার দাঁড়িয়ে আছেন গাদাগাদি করে। দেখে বুঝার উপায় নেই টিকাদান কেন্দ্র। আসকার দিঘির পাড় রীমা কমিউনিটি সেন্টারের চিত্র এটি। একই দৃশ্য দেখা গেছে সিরাজউদ্দৌলা রোডের হল সেভেন-ইলাভেন ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আব্দুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারের টিকাদান কেন্দ্রে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোর ভেতরে বাইরে যেন মানুষের মেলা। আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যানবাহন ও যাত্রীদের। ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য টিকাদানে ব্যবস্থাপনার গাফেলতিকে দুষলেন সকলে। এ অবস্থায় আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আব্দুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে আজ থেকে টিকা দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে নগরীতে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের প্রথম দিন গতকাল টিকা নিয়েছে ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। তবে এদিন কর্তৃপক্ষের অব্যস্থাপনায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষের তত্ত¡াবধানে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জামালখান রীমা কমিনিউটি সেন্টার, সিরাজদৌলা সড়কের হল সেভেন-ইলেভেন ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আবদুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় বাড়তে থাকে। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একসাথে আসায় টিকাকেন্দ্রে ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেকে আহতও হয়েছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে পুলিশ থাকলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি তারা।
গতকাল ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর টিকাদানের লক্ষ্যমাত্র ছিল। তবে এদিন টিকা নিতে পেরেছে ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ এবং ২ হাজার শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে টিকা গ্রহণকারীদের প্রতিষ্ঠান ও ক্লাসভিত্তিক ভাগ করে না দেওয়ায় সকল শিক্ষার্থী একসাথে টিকাকেন্দ্রে এসে ভিড় করে। এতে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়।
এদিকে কমিউনিটি সেন্টারগুলোর সামনে শিক্ষার্থীদের জটলার কারণে সৃষ্ট যানজটে নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে জামালখান, এস খালেদ রোড ও চকবাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল থমকে যায়।
রীমা কমিউনিটি সেন্টারে টিকা নিতে আসা শিক্ষার্থী আদনানের অভিভাবক মোহাম্মদ আমিন জানান, সকালে ছেলেকে নিয়ে টিকা কেন্দ্রে এসেছি। রীমা ক্লাব থেকে বের হয়ে চকবাজার আসতে একঘণ্টা সময় লেগেছে। অনেক অভিভাবক পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিতে বাধ্য হয়েছেন। সকল শিক্ষার্থীকে একই দিনে না দিয়ে ভাগ করে টিকা নিতে আসতে বললে এই সমস্যা হতো না। একদিনে টিকা নিতে পারবে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। এখন সকল শিক্ষার্থী একদিনে কেন্দ্রে চলে এসেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল আলম হোসাইনী পূর্বদেশকে বলেন, আজ (সোমবার) ২৫ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার শিক্ষার্থীকে। প্রথমদিন একটু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে বিশৃঙ্খলা কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে স্বস্তিতে টিকা নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে এই তিন কমিউনিটি সেন্টার ছাড়াও নগরীর ৫টি স্কুলে। তবে কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম হোসাইনী বলেন, টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ভিড় দেখে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। প্রয়োজনে প্রতিদিন যে পরিমাণ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তার অর্ধেক করে পরবর্তীতে আরও একদিন কার্যক্রম চালানো হবে। যারা টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় আসবে না, তাদের ক্লাসে আসতে দেওয়া হবে না। নগরের বাইরে ১৪ উপজেলায় চলছে টিকাদান কার্যক্রম। এসব উপজেলায় লোকবলের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি জানান, শুধু নগরেই ৬৫টি বুথে এ কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) এক নির্দেশনায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে করোনা প্রতিরোধে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ১২-১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীর টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। তবে সেটি বাড়িয়ে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। টিকা কার্যক্রম চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এ টিকা গ্রহণে সার্বিক সহযোগিতা করে বিএনসিসি ও পুলিশ সদস্যরা। টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত আছে সিনিয়র স্টাফ নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের দেড়শ’ জনের টিম। এ সময় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন রাস্তায় চলে এলে বেশ যানজটের সৃষ্টি হয়। টিকা নিতে আসা সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফ জানায়, সকালে স্কুল থেকে বলার সাথে সাথেই এখানে চলে আসি। কিন্তু দীর্ঘ লাইনের কারণে টিকা নিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে। প্রথমে একটু ভয় পাচ্ছিলাম। তবে টিকা নেওয়ার সময় কিছুই বুঝতে পারিনি। টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের বেশ উৎফুল্ল দেখালেও কিছুটা আতঙ্কিত ছিলেন অভিভাবকরা।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত ক্রাউডের (ভিড়) কারণে আমরা টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছি। আগে যেখানে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে দেওয়ার কথা ছিল সেখানে ৬ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের আবদুল্লাহ কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্র পরিবর্তন করে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষ, একই স্থানে ডিসি ও সম্পাদকের রুমে টিকাদান কর্মসূচি চলবে। বাকি দুই কেন্দ্র পরিবর্তন হবে না।’ আজ আমরা ১৭ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চলবে। তবে শিক্ষার্থীদের লাইনের সারি দীর্ঘ হলে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয় ততক্ষণ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হবে, যোগ করেন এ কর্মকর্তা।