নগরে আরও ১০ লাখ প্রি-পেইড মিটার

66

মনিরুল ইসলাম মুন্না

ব্যাটারি জটিলতা, মিটার হ্যাং বা লক হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হয় বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে ছিলেন নগরবাসী। তবে শীঘ্রই এই ভোগান্তি শেষ হতে যাচ্ছে। কারণ পুরো নগরীকে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনতে আরও দশ লাখ মিটার আনার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্যে বেশিরভাগ মিটার পাবে দক্ষিণাঞ্চল।
আগামী ২০২২ সালের জুনের আগে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বলে জানিয়েছেন পিডিবি’র দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আগামী ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। এ দশ লাখ মিটারের বেশির ভাগ মিটার আমরা পাবো। আমরা চাই পুরো নগরীকে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসতে। এছাড়াও বর্তমানে যেসব মিটারে সমস্যা পাচ্ছি, সেগুলো দ্রæত সারিয়ে দিচ্ছি। পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে তাও করে দিচ্ছি।
বর্তমানে প্রদানকৃত মিটারে হ্যাং হয়ে যাওয়া, প্রি-পেইড মিটারে ভুল ডিজিট প্রবেশ করলে লক হয়ে যাওয়াসহ নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ গ্রাহক এখনো প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসেননি। এখন যেসব প্রি-পেইড মিটার আছে সেগুলোর বেশিরভাগেরই স্থাপন কাজ শেষ হয় প্রায় দুই বছর আগে।
ফেজ-১ প্রকল্পের আওতায় নগরীর খুলশী, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, স্টেডিয়াম জোনের ১ লাখ ৩৯ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসে। পরবর্তীতে নগরীর মাদারবাড়ি, বাকলিয়া, রামপুর, স্টেডিয়াম, খুলশী, পাহাড়তলী ও আগ্রাবাদ ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬১ হাজার ১৭৫ (সিঙ্গেল ও থ্রি ফেজ) গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আসে।
এদিকে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল হিসাবে পরিচিত পিডিবি, চট্টগ্রাম। এই পাঁচ জেলায় মোট সাড়ে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ২২৮ গ্রাহক রয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৪ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন। অর্থাৎ, মাত্র ৪০ শতাংশ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের সুবিধা পাচ্ছেন। আবার এই গ্রাহকদের প্রায়ই চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা। বাকি সব গ্রাহক পূর্বের মত পোস্ট পেইড মিটারে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন।
কদমতলী এলাকার গ্রাহক মো. নাহিদ আলম বলেন, যত সমস্যা সব হেক্সিং মিটারগুলোতে। বিভিন্ন সময় ব্যাটারি নষ্ট ও হ্যাং জটিলতায় আমরা নাকাল ছিলাম। অথচ শুনেছি ইনহে মিটার নামক আরও একটি প্রতিষ্ঠান প্রি-পেইড মিটার সরবরাহ করেছে। তাদের দেয়া মিটারে এখনও কোনো সমস্যা দেখা যায়নি।
নগরীর চারটি বিভাগে এসব প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয় গত দুই বছর আগে। এখন সেসব মিটারে ব্যাটারি ড্যামেজ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে হেক্সিং মিটার প্রতিষ্ঠান যে স্থায়ীত্বের কথা বলেছে তা রাখছে না বলে জানান প্রকৌশলীরা।
পিডিবি’র প্রকৌশলীদের দেয়া তথ্যমতে, হেক্সিং মিটারের ব্যাটারিগুলোর স্থায়িত্ব ১০ বছরের কথা বলা হলেও মিটার স্থাপনের দুই মাস থেকে ব্যাটারি ও মিটারের নানা সমস্যা শুরু হয়। কারণ মিটারের সাথে দেয়া ব্যাটারিগুলো চায়না একটি কোম্পানির ছিল। আবার ওইসব ব্যাটারি তারা আলাদাভাবে বাজারজাতও করেনি। যার কারণে গ্রাহকদের পড়তে হয় বিপাকে। এসব সমস্যার মধ্যে পিডিবি’র পক্ষ থেকে তাদেরকে (হেক্সিং মিটার প্রতিষ্ঠান) বিষয়টি বলার পর তারা ফ্রান্সের তৈরি ৪০ হাজার ব্যাটারি পিডিবি চট্টগ্রামে প্রদান করেন। এভাবে এক বছর পর্যন্ত তারা সরবরাহ করেছেন। কিন্তু ফেজ-১ প্রকল্পের আওতায় মিটারের ওয়ারেন্টির মেয়াদ তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে তারা আর ব্যাটারি প্রদান করেননি। তবে ফেজ-২ প্রকল্পের মিটারগুলোর ওয়ারেন্টির মেয়াদ এখনও আছে। তাই তারা মিটারের সমস্যা সমাধান করচ্ছেন। তবে এখনও ৪০ হাজার ব্যাটারিগু গ্রাহকদের বিনামূল্যে প্রদান করছে পিডিবি।
প্রকৌশলীরা আরও বলেন, যেসব বিতরণ বিভাগে মিটার সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত জনবলের সংকট রয়েছে। অর্থাৎ, প্রতি বিভাগে লাইনম্যান রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ জন করে। যদি ন্যূনতম চার বিভাগ ধরি, তবে সেখানে জনবল আছে ১৫০ জন। তাই অভিযোগ থাকা স্বত্তে¡ও দ্রæত ব্যাটারি সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আমরা তারপরও গ্রাহকদের সমস্যা দ্রæত নিরসন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পিডিবি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম মৃধা জানান, ফেজ-১ প্রকল্পের আওতায় মিটারের নানা জটিলতা তৈরি হওয়ার কারণে হেক্সিং মিটার প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে ৬০০টি মিটার প্রদান করেছিলো। যার মধ্যে ৫৫০টি সিঙ্গেল ফেজ মিটার বাকি ৫০টি থ্রি-ফেজ মিটার। এছাড়াও তারা ৪০ হাজার ব্যাটারি আমাদেরকে রিপ্লেসমেন্টের জন্য প্রদান করেন। বর্তমানে ফেজ-২ প্রকল্পের আওতায় যেসব মিটার প্রদান করা হয়েছিল তার ওয়ারেন্টি পিরিয়ড এখনও রয়েছে। যা আগামী দেড়-দুই বছর পর্যন্ত থাকবে। তাই ওগুলোতে যেকোনো সমস্যা হলে তা হেক্সিং মিটার প্রতিষ্ঠান দ্রহত সমাধান করে দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু পূর্বদেশকে বলেন, পুরো চট্টগ্রামকে আমরা প্রি-পেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসব। সরকারের এমনই পরিকল্পনা রয়েছে। সুতরাং, সামনে আমরা বেশকিছু মিটার পেতে যাচ্ছি। দশ লাখ মিটারের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে আর পোস্ট-পেইড গ্রাহক থাকবে না। সবাই প্রি-পেইডের আওতায় চলে আসবে।
মিটার হ্যাংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মিটার হ্যাং হওয়ার বিষয়টি ব্যাটারিজনিত সমস্যা। ব্যাটারি নষ্ট হলে মিটার কাজ করে না এটাকেই ‘হ্যাং’ বলা হচ্ছে। আর ব্যাটারি সমাধান করতে এসে লাইনম্যান কোনো অনৈতিক সুবিধা দাবি করে তাহলে তা সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানাবেন। মিটারের ব্যাটারি সমস্যা সমাধান করতে কোনো টাকা লাগে না।
মিটার লক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো গ্রাহক যদি প্রি-পেইড মিটারের ডিজিটগুলো ভালভাবে দেখে প্রবেশ করান তবে মিটার লক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গ্রাহকদের অসেচতনতার ফলে মিটার লক হয়ে যাচ্ছে। যদি ডিজিটগুলো কোনো একটি কাগজে বড় অক্ষরে লিখে রেখে প্রবেশ করায় তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা না। এছাড়াও মিটারের অভিযোগ পেলে দ্রæত সমাধান দেয়ার চেষ্টা করছি। একসাথে বেশকিছু মিটারের সমস্যা হলে সেগুলো সমাধান দেয়া একটু কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।