নগরীর ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির

48

টানা ভারি বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিকিকিনি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য এলাকায়ও ক্রেতা নেই। ব্যবসায়ীরা বসে বসে অলস দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে গণপরিবহন সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গত চারদিন ধরে টানা বর্ষণ হচ্ছে। কখনো হালকা কখনো ভারি। বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। মুরাদপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক সবখানে পানি আর পানি।
ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এখনো নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, দুই নম্বর গেট, পাহাড়তলী রোড, বাকলিয়া, চকবাজার, মেহেদীবাগ, অক্সিজেন মোড়, মুরাদপুর, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট, পাঁচলাইশ, শুলকবহর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, হালিশহরসহ নগরীর বড় অংশজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভারি বর্ষণে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বেশ কিছু দোকান ও গুদামে পানি প্রবেশ করে পণ্য নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজার, আমির মার্কেট, আসাদগঞ্জ, শুটকিপট্টি এবং কোরবানিগঞ্জের অনেক দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। চাক্তাই এলাকায়ও একই অবস্থা।
দেখা যায়, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের অনেক এলাকায় পানি উঠেছে। উভয় এলাকায় গুদাম রয়েছে ৫ শতাধিক। গুদামের ভেতর বা মুখে পানি প্রবেশ করেছে। ফলে পেঁয়াজ, রসুন, আদা এবং মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য পানিতে ভিজে গেছে। চাক্তাই এলাকায় চালের দোকান ও গুদামেও পানি প্রবেশ করেছে।
ব্যবসায়ীরা দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে আছেন। কিন্তু বিকিকিনি নেই। পাইকারি-খুচরা কোনোধরনের ব্যবসায়ী আসছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসত। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে ক্রেতারা বাজারমুখি হচ্ছেন না। প্রতিদিন শত কোটি টাকা বিকিকিনি হলেও বর্তমানে ৫ কোটি টাকারও বিকিকিনি নেই। লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাজুড়ে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে। কোনো গাড়িতেই পণ্য নেই। মিনি ট্রাকগুলো থেকে কিছু কিছু পণ্য খালাস করা হচ্ছে। বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই।
চাক্তাই এলাকায়ও একই অবস্থা দেখা গেছে। চালের দোকানে ব্যবসায়ীরা বসে আছেন। ক্রেতার দেখা নেই।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকলেও গোটা দিন মিলে একজন ক্রেতাও নেই। তিনি বলেন, বেশি দামে আমদানি করে কম দামে বিক্রি করতে চাইলেও পারছি না। চারিদিকে পানি উঠায় ক্রেতারা আসতে পারছে না।
মো. নাজিম উদ্দিন নামে একজন পাইকারী বিক্রেতা জানান, প্রতিদিন তিনি কোটি টাকার পণ্য বিকিকিনি করেন। কিন্তু গত চার দিনে এক লাখ টাকার মালামালও বিক্রি হয়নি। বসে বসে দিন অলস কাটানো ছাড়া আর কিছু করার নেই।
পাহাড়তলী বাজারও ব্যবসায় নামকরা। কিন্তু সেখানেও ব্যবসা-বাািণজ্য নেই। সেখানে পাইকারী চালের ব্যবসা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতা আসছেন না। এ বাজারে আগে দিনে অর্ধশত কোটি টাকার বিকিকিনি হলেও বর্তমানে এক তা দশমাংশে নেমে এসেছে।
মাবুদ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ী জানান, তিনি দিনে দু’ কোটি টাকার ব্যবসা করতেন। কিন্তু গত চার দিনে ৫ লাখ টাকার ব্যবসাও হয়নি।
নগরীর অন্যান্য এলাকায়ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নিউ মার্কেট, আমিন সেন্টার, সানমার ওসান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, রেয়াজউদ্দিন বাজার, হকার্স মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্সসহ শতাধিক বিপণি ও মার্কেটেও ব্যবসা প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এসব মার্কেটেও চার দিন ধরে কিকিকিনি প্রায় শূন্যের কোটায়।
এসব মার্কেট প্রতিদিনই জমজমাট থাকে। ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে সারাদিন। কিন্তু গত চারদিন ধরে তা আর নেই। কোনো দোকানেই ক্রেতা নেই। পানির কারণে লোকজন আসতে পারছেন না। মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় মার্কেটগুলো খালি।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নেই বললেই চলে। চার দিন ধরে বসেই আছি। বেচাবিক্রি নেই।
ফুটপাতেও বিকিকিনি বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানিরা বসতেও পারছেন না। কিছু কিছু বসলেও বিক্রি নেই।
অপরদিকে নগরীতে গণপরিবহনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। একারণে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে গেছেন।
জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে আগ্রাবাদ হয়ে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কে গণপরিবহন নেই বললেই চলে। এ সড়কে গত তিন দিন ধরে যানজট চলছে। সকাল থেকে রাত অবধি দফায় দফায় যানজট। ৩০ মিনিটের রাস্তা চার ঘণ্টায়ও পার হতে পারছে না।
এ যানজটের কারণে গণপরিবহনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে এ রুটে। যানবাহন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। ফলে বাস, হিউম্যান হলার, টেম্পো মিলছে না। অন্যান্য রুটেরও একই অবস্থা।
বহদ্দারহাট থেকে আন্দরকিল্লা হয়ে নিউ মার্কেট, কালুরঘাট থেকে বহদ্দারহাট হয়ে নিউ মার্কেটসহ প্রতিটি রুটেই গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সকালে অফিস ও স্কুলগামিদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। বিকালে অফিস ছুটির পর আবারো বিপাকে পড়েন লোকজন।