নগরীর খাল, নদী ও ফুটপাত সব দখলে দুর্ভোগমুক্ত নগর চাই

11

 

চট্টগ্রাম নগরীর ফুটপাত থেকে শুরু করে নদী, খাল, নালা-নর্দমা সবকিছুই হকার আর ভূমিদস্যুদের দখলে। লক্ষ কোটি টাকার সরকারের মেগা প্রকল্প চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হলেও নগরীর প্রভাবশালী রাজনীতিক, প্রশাসন আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মানসিকতার উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে সরকারের বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ সাধারণ জনগণের কাছে দৃশ্যমান হচ্ছে না। বরং উন্নয়ন কর্মকাÐ নিয়ে মুখরোচর কথাই শোনা যায় বেশি। একদিকে যানজট নিরসন ও দ্রæত গন্তব্যে পৌঁছতে উড়াল সড়ক, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, রিংরোড, লিংরোড ও মেট্রোরেল অপরদিকে নাগরিক সাধারণের হাঁটার ফুটপাত, নগরীর পয়ঃ ও পানি নিষ্কাশনের খাল, নালা-নর্দমা আর যে নদীর উপর চট্টগ্রাম শহরের অস্তিত্ব, সেই নদী দখল করে ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মত প্রকাশ্য অপরাধ চললেও প্রতিকারের কোন বালাই নেই কারো। দীর্ঘ তিনদশক প্রায় নগরীকে একধরনের সংকোচিত করার নানা অবৈধ কর্মকাÐ চলছে। অথচ নগর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিম প্রশাসন, জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সবাই যেন নির্বিকার। মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে লেখালেখি বা উচ্চ আদালত থেকে কোন নির্দেশনা বা সামাজিক আন্দোলনের মুখে কর্তৃপক্ষগুলো নড়েচড়ে বসলেও অবৈধ দখরদারদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ এবং নাগরিক চলাচলের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। এর পেছনের অদৃশ্য কারণ কী? কেনইবা ফুটপাত অবেধ হকারমুক্ত করা যাচ্ছেনা, কর্ণফুলীকে কেন দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা কোথায়! এসব প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত সকলেরই জানা। এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, কয়েক স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল বা প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে নগরবাসীকে দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক ও আধুনিক দেশের এমন চরিত্র থাকাটা মোটেই বাঞ্চনীয় নয়। সরকার দেশের উন্নয়ন ও নাগরিক জীবনে স্বস্তি ও শান্তির জন্য যে কর্মযজ্ঞ সাধন করে চলছে, তা দৃশ্যত সফলতা লাভে রাজনৈতিক ব্যক্তি, সেবা সংস্থা ও কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে দখল আর অবৈধ স্থাপনার জন্য নাগরিক দুর্ভোগের চরম অবস্থা ফুটে উঠেছে। অভিজ্ঞমহল মনে করছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসন এককভাবে এ সংকটের সমাধান করতে পারবে না। এরজন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, সেবা কর্তৃপক্ষগুলোর কঠোর আইনি পদক্ষেপ, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের আন্তরিকতা জরুরি। আমরা জানি, চট্টগ্রামের ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করতে অতীতে বহু পদক্ষেপ নিয়েও সুফল পাওয়া যায়নি। নিকট অতীতে ফুটপাতে অন্তত হকারদের শৃঙ্খলায় ফেরাতে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন হকারদের তালিকা ও পরিচয়পত্রের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আংশিক তালিকা হলেও পুরো নগরে ছড়িয়ে থাকা হকারদের তালিকা করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। একইসাথে তিনি বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হকার বসার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। করোনাকালে সে সময় কমিয়ে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা করেছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। এসব উদ্যোগ ছাড়াও ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চললেও তা স্থায়ী হয়নি। অর্থাৎ স্থায়ী কোনো সমাধানের পথ উন্মেচিত হয়নি। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর জলের এক তৃতীয়াংশসহ তীরের অধিকাংশই রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ভূমিদস্যুদের দখলে। এখানে বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পরও কর্ণফুলীকে দখলমুক্ত করা যায়নি। সর্বশেষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কিছুটা উচ্ছেদ অভিযান চলানো হলেও গর্জনেই থেমে যায় ওই অভিযান। এখন চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন আদালতের নির্দেশ অনুসারে কর্তৃপক্ষগুলো উচ্ছেদ অভিযান না চালানো অন্যায়। তারা এর প্রতিকারে আদালত অবমাননা মামলা করবে। আমরা আন্দোলনকারীদের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। বস্তুতঃ চট্টগ্রামবাসীর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সবগুলো দায়সরা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ দেশের অর্থনীতির প্রধান সুতিকাগার এ চট্টগ্রাম। জনগণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও আন্তর্জাতিক লেনদেন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেলেও চট্টগ্রামের সীমানা যেন সংকোচিত হয়ে আসছে। এখন সময় হয়েছে, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো স্ব স্ব অবস্থানে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে চট্টগ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে। সরকারের উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করতে পারবে।