নগরীতে তীব্র পানিসংকট

43

কোথাও সাতদিন, কোথাও পাঁচদিন ধরে পানি নেই। কোথাও আবার ওয়াসার পানি আসলেও তা ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত। কিছ কিছুু এলাকায় পানি থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় পানি নেই। সপ্তাহজুড়ে পানি সংকটের এমন চিত্র পুরো নগরের। নগরীর কিছু কিছু এলাকায় জনগণ চরম পানি সংকটে ভুগলেও চট্টগ্রাম ওয়াসা এখনো পৌঁছাতে পারেনি পানি। তবে গতকাল রোববার থেকে কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে বলে দাবি ওয়াসার।
নগরীর বহদ্দারহাট বুস্টার স্টেশনে সমস্যার কারণেই মূলত বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়। পাইপলাইন ফুটো হওয়ার কারণে বহদ্দারহাট বুস্টার স্টেশন বন্ধ হয়ে পড়ে। একই সাথে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। বহদ্দারহাট, খতিবের হাট, চকবাজার, বাদুরতলা মাজার গেট, পশ্চিম বাকলিয়া, আসকারদিঘির পাড়, চান্দগাঁও, ডিসি রোড, কেবি আমান আলী রোড, সৈয়দ শাহ রোড, রাহাত্তারপুল, আতুরার দোকান, বড় মিয়া মসজিদ, রসুলবাগ আবাসিক, দেওয়ানবাজার, আন্দরকিল্লা, বংশাল রোডসহ বিশাল এলাকাজুড়ে পানি সংকট দেখা দেয়। টানা কয়েকদিন পানি না থাকায় এ এলাকাগুলোতে হাহাকার শুরু হয়। অপরদিকে হালিশহর, আগ্রাবাদ, দেওয়ান হাট এলাকার কিছু অংশেও পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়। সপ্তাহব্যাপী চলা পানি সংকট গতকাল রোববার আংশিক নিরসন হয়। গতকাল বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ কিছু কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ করে ওয়াসা। তবে এখনো নগরীর অনেক এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। ওয়াসা বলছে আজকের (সোমবার) মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে। কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, দুই-তিন দিন থেকে এ অবস্থা চলছে। একটা পাইপলাইন ফেটে গেছে। এটা রিপিয়ার করতে তিনদিনের মতো সময় লেগেছে। আজকে (রোববার) তিনটা পাম্প চালানো হয়েছে। পানি পেয়ে যাবে সবাই। এখন শুধু সতীষবাবু লেন ও কোরবানিগঞ্জ এলাকায় পানি যায়নি। পানির চাপ বাড়লে সব জায়গায় পৌঁছে যাবে।
দুর্গন্ধযুক্ত পানি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি।
অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিব। আমাদের লাইনের পানিতে কোনো দুর্গন্ধ নেই। ওনার (গ্রাহকের) লাইন কোথাও হয়তো ফেটে গেছে। আমাদের জানালে চেক করে ব্যবস্থা নিব।
এদিকে টানা কয়েকদিন পানি না পেয়ে চরম মানবেতর অবস্থায় দিনযাপন করতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। কিছু গ্রাহক টিউবওয়েলে ভরসা করলেও অনেকে জারের পানি কিনে ব্যবহার করছেন।
ঘাটফরহাদবেগ এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ঘাটফরহাদবেগ, কাটাপাহাড়, দেওয়ানবাজার এলাকায় অনেকদিন ধরে পানি নেই। আমরা পুরোপুরি টিউবওয়েল নির্ভর হয়ে পড়েছি। ওয়াসার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখছি না।
দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে পানি অত্যাবশ্যকীয়। অথচ নগরীর বেশকিছু এলাকা এখনো চরম পানি সংকটের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে পানি সংকট নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। মিনহাজুল ইসলাম তুহিন নামে একজন লিখেন, নয়াবাজারে ওয়াসার পানি সবসময় আসে না। আসলেও পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। আল রাহমান লিখেন, আসকার দীঘির পূর্ব পাড়, ঝর্ণাপাড়া, বারকোয়ার্টার, সরাইপাড়া, পাহাড়তলীসহ বেশকিছু এলাকায় তীব্র পানি সংকট চলছে। প্রায় এক সপ্তাহ যাবত ওয়াসার পানি পাচ্ছে না এসব এলাকার মানুষ। পানি না থাকার কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে এসব এলাকার।
মিটুন দাশ গুপ্ত লিখেন, দেওয়ান বাজার ঘাটফরহাদবেগসহ অনেক এলাকায় আজ ৫/৬ দিন যাবত ওয়াসার পানি নেই।
সাইফুল জিকু লিখেন, পানি নাই, তবে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির শেষ নাই। এত খোঁড়াখুঁড়ির পরও পানি কই? গত ২ বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায় অর্ধেক রাস্তার বুক কেড়ে নিয়েছে ওয়াসা। এ দায় তারা কখনো এড়াতে পারে না।
ঊর্ষা আশ্চার্য লিখেন, কোতোয়ালী, ফিরিঙ্গিবাজার, বংশাল রোড়ে নলকূপের পানিও নাই। কাল (শনিবার) বস্তিতে গিয়ে লাইন ধরে পানি নিয়েছেন নামিদামি মানুষজন।
কুতুব উদ্দিন লিখেন, পূর্ব মাদারবাড়ী জামে মসজিদ এলাকায় ওয়াসার পানি খুবই কম পাওয়া যায়। যা আসে তা আয়রনে ভরা।
গ্রাহকদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী ইয়াকুব সিরাজ-উদদৌল্লাহ বলেন, আমাদের একটা পাইপলাইন লিকেজ ছিলো। ওটা মেরামত করা হয়েছে, অনেক জায়গায় পানি পৌঁছে গেছে। গতকালই (শনিবার) রিপিয়ার করা হয়েছে। এখন অধিকাংশ এলাকায় মানুষ পানি পাচ্ছে। কিছু এলাকায় এখনো পায়নি, সেখানে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, টুকটাক কিছু জায়গায় একটু সমস্যা আছে। লাইন খালি হলে সেটা ভরাট হতে সময় লাগে। বেশি প্রেসার (চাপ) দিলে আবার ফেটে যাবে। পুরানো লাইন বেশি প্রেসার দেওয়া যায় না। বুস্টার সকাল থেকে চালু করে দিয়েছি। সব জায়গায় পানি যেতে সময় লাগবে। আজ (রোববার) রাত থেকে কালকের (সোমবার) মধ্যে সব জায়গায় পানি চলে যাবে আশা করি।
এদিকে একটা পাইপলাইনের লিকেজের কারণে বিশাল এলাকায় পানি সরবরাহের ধস নামলেও ওয়াসার তৎপরতা তেমন জোরালো নয় বলে দাবি করেছেন অনেক গ্রাহক। একটা লিকেজের জন্য বিশাল এলাকায় পানি সরবরাহে ধস নামলেও ওয়াসা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। পানির সংকট চললেও ওয়াসা কোনো ভাউচার পাঠায়নি এসব এলাকায়। এলাকার বাসিন্দারা ডিপটিউবওয়েল থেকেই নিত্যব্যবহার্য পানির চাহিদা পূরণ করে। যাদের টিউবওয়েল নেই তাদের ভরসা করতে হয়েছে আশপাশের লোকজনের উপর। অনেকে বাধ্য হয়ে পানি কিনে ব্যবহার করেছেন।