নগরীতে ‘গা ঢাকা’ দেওয়া সন্ত্রাসীরা আবার প্রকাশ্যে

92

গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড় শুরুর পর গ্রেপ্তার এড়াতে আড়ালে চলে যায় চট্টগ্রাম নগরীর তালিকাভুক্ত আসামিরা। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো বায়েজিদ এলাকার মহিউদ্দিন, দিদার প্রকাশ (ল্যান্ড দিদার)। কিন্তু দুই মাস না পেরুতেই আবারও প্রকাশ্যে চলে এসেছেন তারা। গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন স্থানীয়রা। শুধু এই দুজন নয়, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে র‌্যাব অভিযান শুরুর পর যেসব ব্যক্তিরা গা-ঢাকা দিয়েছিল, তাদের অনেকেই আবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।
ফলে আবারও নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, তিন মাস পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব সন্ত্রাসীরা এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল মোস্তফা টিনু। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে র‌্যাব তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর আত্মগোপনে চলে যায় তার সহযোগী সাদ্দাম হোসেন ওরফে ইভান, কায়সার হামিদ, শাহাদাত হোসেন ওরফে লেংড়া রিফাত, মোহাম্মদ নাছির ওরফে লম্বা নাছির, সৌরভ ওরফে বাপ্পা, রবিউল ইসলাম, জসিম উদ্দিন। কিন্তু তারা আবার প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুধু প্রকাশ্যে এসেছে তা নয়, তারা আবারও ফুটপাত, কাঁচাবাজার, টমটম গাড়ি, জুয়ার আসর, নির্মাণাধীন ভবন, কোচিং সেন্টার, শপিং মল থেকে চাঁদা তোলা শুরু করেছে।
খুলশী ও আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে মশিউর রহমান দিদার। নগরীর ঢেবারপাড়ার শিল্পপতি জাকির হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামি সে। এছাড়া খুলশী এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, অবৈধ রেস্টহাউজ ও গেস্টহাউজ পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নগরীর বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও মোহরা এলাকায় বিভিন্ন সময়ে ইয়াবা, অবৈধ ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করে চান্দগাঁওয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী এসরার।
অন্যদিকে নগরীর নন্দনকানন, সিআরবি এলাকা ও রিয়াজউদ্দিন বাজার নিয়ন্ত্রণ করে যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। সিআরবি জোড়া খুনসহ ১৫টির অধিক মামলার এই আসামি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে রয়েছে। তবে তার অবর্তমানে এসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছেন সহযোগীরা। একই এলাকায় তার প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করে সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম লিমন। খুন, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামে অভিযান শুরু করার পর এসব সন্ত্রাসীসহ সরকার দলীয় সংগঠনের অনেক নেতাই গা ঢাকা দিয়েছিলেন। অভিযান থেমে যাওয়ায় তারা আবারও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন। পলাতকদের মধ্য থেকে অনেক নেতাকে এখন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ এলাকায় ব্যানার-পোস্টারও সাঁটিয়েছেন তারা। নগরীর চকবাজার এলাকায় সরেজমিনে এমন পোস্টার দেখা যায়।
নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি, চন্দ্রনগর, শেরশাহ ও পলিটেকনিক্যাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন মহিউদ্দিন ও মোহাম্মদ দিদার। সরকার দলীয় পরিচয়ে জমি দখল ও চাঁদাবাজি করাই তাদের কাজ। তাদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন মিল্টন বড়ুয়া, নুরুল হক মনির, মহিউদ্দিন তুষার ও মোস্তাফা কামাল পাশা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পলিটেকনিক্যাল এলাকার এক দোকানদার জানিয়েছেন, কারও খালি জায়গা দেখলেই রাতারাতি টিনের ঘর তৈরি করে দখল করে চক্রটি। তারপর দখল ছাড়তে কোটি টাকার চাঁদা দাবি করে বসে। না দিতে চাইলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা আদায় করে এই চক্রের সদস্যরা। এই চক্রের অনেক সদস্যের কাছে পিস্তল থাকে। কথায় কথায় তারা পিস্তল বের করে মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
এই সর্ম্পকে র‌্যাব-৭ এর উপ-পরিচালক মেজর শামীম সরকার বলেন, আর কয়েক মাস পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এসময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে নির্বাচনকেন্দ্রীক বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ব্যস্ততার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসময় কেউ কেউ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর চেষ্টা করতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি, কারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালিত করতে পারে তাদের একটি তালিকা আমরা তৈরি করছি। ওই তালিকা ধরে আমরা অভিযান শুরু করবো।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, নির্বাচনের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। কারও নামে মামলা থাকলে তাকে অবশ্যই পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। আধিপত্য বিস্তারের নামে যদি কেউ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করার চেষ্টা করে, তাদের অবশ্যই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।