নগরীতে অপরিপক্ব চালকের হাতে অটোটেম্পুর স্টিয়ারিং

135

নগরীর ওয়াসা থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) পর্যন্ত অটোটেম্পুর স্টিয়ারিং এখন অপরিপক্ব চালকের হাতে। এ কারণে ওই রুটে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। উল্লেখ্য, ওয়াসা থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত রুটে টেম্পু চলাচলের কথা থাকলেও চলছে ষোলশহর ২ নং গেট থেকে।
জানা যায়, নগরীতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নির্ধারিত ১৭টি রুটে অটোটেম্পু হিসেবে দুই হাজারের কিছু কম গাড়ির পারমিট রয়েছে। পারমিটযুক্ত এসব গাড়ির সাথে চলছে পারমিটবিহীন দুই হাজারেরও বেশি গাড়ি। যার মধ্যে রয়েছে টিকটিকি (সবুজ টেম্পু), এইচ-পাওয়ার, লেগুনা, টমটম, ম্যাক্সিমাও। এসব গাড়ি চলাচলের জন্য পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। আবার লাইনভুক্তির জন্যও এককালীন ৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত গুণতে হয়। দৈনিক লাইন খরচ দিতে হয় ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল শনিবার বহদ্দারহাট, বাকলিয়া নতুন ব্রিজ এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
অভিযোগ আছে, ওই রুটের বহদ্দারহাট অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে প্রায় ২০০টি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে লোকাল পুলিশের মাধ্যমে। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছেন, আমাদের সবকিছু ঠিক আছে, লাইনম্যানদের বেতন উত্তোলনের জন্য প্রত্যেক গাড়ি থেকে ওয়েবিল আদায় করি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাকলিয়া শাহ আমানত সেতু (নতুনব্রিজ) হতে ষোলশহর ২ নং গেট পর্যন্ত প্রায় ২০০ থেকে ২২০টি মাহিন্দ্র, ম্যাক্সিমা অটোটেম্পু চলাচল করে। এ লাইনে সংযুক্ত করতে হলে প্রতিটি গাড়ি বাবদ ৮ হাজার টাকা আদায় করে বহদ্দারহাট অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়ন। একই সাথে দৈনিক নতুন ব্রিজ, রাহাত্তারপুল, বহদ্দারহাট এবং ২ নং গেট এলাকায় প্রতিটি টেম্পু থেকে ওয়েবিল প্রদান করতে হয়।
নতুন ব্রিজে ওয়েবিল গাড়িপ্রতি ২০ টাকা আদায় করেন রাবেয়া বসরি বকলির নেতৃত্বে আলাউদ্দিন, রাহাত্তারপুলে গাড়ি প্রতি ৫ টাকা আদায় করেন মো. কামাল হোসেন, বহদ্দারহাটে গাড়িপ্রতি ১৩০ টাকা আদায় করেন মো. জাবেদ এবং ২নং গেটে গাড়ি প্রতি ১০ টাকা আদায় করেন বাবুল। তারা প্রত্যেকেই লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত।
অর্থাৎ প্রতিটি গাড়ি থেকে দৈনিক ১৬৫ টাকা করে শ্রমিক ইউনিয়নকে দিয়ে দিতে হয়। যা প্রতিমাসে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৯৫০ টাকা। তাহলে ২০০ গাড়ি থেকে প্রতিমাসে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা আসে। তাহলে এতটাকা যায় কোথায়? এমন প্রশ্ন অনেকের।
এছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বাকলিয়ার ট্রাফিক পরিদর্শককে ৭ হাজার টাকা এবং চান্দগাঁওয়ের ট্রাফিক পরিদর্শককে ৫ হাজার টাকা মাসোহারা দিতে হয়। আবার চান্দগাঁও থানাকে ৭ হাজার টাকা এবং বাকলিয়া থানাকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানালেন কয়েকজন চালক।
তবে তা সরাসরি অস্বীকার করে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, গাড়ির সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। ওগুলো সব ট্রাফিক বিভাগের কাজ। আমাদের নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো অনৈতিক সুবিধা আদায় করছে।
এদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপরিপক্ক চালকরা তিন চাকার পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার কিছু কিছু চালক অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করেন। ফলে প্রতিদিন ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।
মো. ইয়াসির আরাফাত নামে এক যাত্রী বলেন, ট্রাফিক পুলিশের উচিত এসব চালকদের উচিত শাস্তি দেয়া। কারণ একজন চালকের জন্য ৫ জনের প্রাণহানি ঘটতে পারে। আমরা একজনের জন্য ৫ জন মারা যাক, তা চাই না।
আরেক যাত্রী আবছার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মালিকদের উচিত লাইসেন্সধারী পরিপক্ক চালকের হাতে গাড়ি তুলে দেয়া। এখন মালিকরা টাকা ইনকামের আশায় অন্য যাত্রীদের কথা ভাবেন না।
বহদ্দারহাটের লাইনম্যান মো. জাবেদ বলেন, আমাদের চালকরা ঠিকমত গাড়ি চালায় এবং তাদের ডকুমেন্ট ক্লিয়ার আছে। আপনি আমাদের সেক্রেটারি হোসেন ভাইয়ের সাথে কথা বলুন।
বহদ্দারহাট অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের কিছু চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, এটা সত্য। আপনার কথা সঠিক। তবে সবার যে লাইসেন্স নেই, তা বলা ভুল হবে। তারপরও যারা এখনও লাইসেন্স করেনি, তাদের দ্রুত লাইসেন্স করাতে বলে দিয়েছি।
অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা কয়েকজন অতিলোভী চালকের জন্য হয়ে থাকে। কিছু যাত্রী ওভাবে উঠতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তাই চালকও কিছু বলে না। আমি তাদেরকে বলে দিবো, যাতে ঝুলিয়ে যাত্রী না তোলে।
পুলিশকে মাসোহারা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের সকল ডকুমেন্টস ঠিক থাকলে পুলিশকে টাকা দেওয়ার কি আছে। আমরা তাদের কোন টাকা-পয়সা দিই না। চালকরা এসবের কি জানে? আমরা যেসব ওয়েবিল আদায় করি, তা শুধু আমাদের স্টাফদের বেতন প্রদানের জন্য।
এ ব্যাপারে চান্দগাঁও থানার ট্রাফিক পরিদর্শক প্রশান্ত কুমার দাশ পূর্বদেশকে বলেন, চালক এবং গাড়ির অসঙ্গতিতে আমরা এতদিন মামলা দিইনি, তবে আমরা এখন থেকে মামলা দিবো। আর আমরা তাদের কাছ থেকে কোন অর্থ নিই না। আপনি হোসাইনের সাথে কথা বললে সব বুঝতে পারবেন।
বাকলিয়া থানা ট্রাফিক পরিদর্শক সামছুদ্দিন বলেন, আমাদের সামনে এসব অসঙ্গতিপূর্ণ গাড়ি দাঁড়াতে পারে না। এসবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।