নগরপিতাও পানিবন্দী

11

নিজস্ব প্রতিবেদক

আষাঢ়ের শুরুতেই টানা দু’দিনের ভারী বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এর মধ্যে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বহদ্দারহাটের বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে নগরপিতার পরিবার। গতকাল শনিবার সকালে নগরীর বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়ি ও মেয়রের বাড়ি সংলগ্ন মূল সড়ক থেকে ভেতর পর্যন্ত হাঁটুপানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় দুপুর গড়িয়ে বিকালের দিকেও ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী ছিল। হাঁটু পানি ডিঙেয়েই দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন নগরপিতা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আমার বাড়ির উঠানে এবং ঘরের ভেতরও এক হাঁটু পানি। পানি ডিঙিয়েই আমাকে দুপুরে বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে। জলাবদ্ধ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাহাড়ধসের পর ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার কাজ দেখতে গেছি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলার ব্যবস্থা করেছি।
গত পরশু থেকে টানা বৃষ্টিতে শুক্রবার রাতে নগরীর নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। শনিবার সকালে জলাবদ্ধ এলাকার পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। গত শুক্র ও শনিবার দু’দিন মিলিয়ে নগরীতে দুইশ’ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আমবাগান আবহাওয়া অফিস সর্বশেষ শনিবার বিকাল তিনটা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় একশ’ ৭২ দশমিক পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। নগরীতে স্বাভাবিক সময়ে ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। তার সাথে নদীর জোয়ারের পানি যুক্ত হলে পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে মেয়র বলেন, আমরা বারবার খাল থেকে বাঁধ অপসারণের জন্য বলেছি। মাটি যতক্ষণ খালে থাকবে ততক্ষণ পানি সরতে পারবে না। আবার কাজ শেষ না করে বাঁধ সরালেও সমস্যা। কারণ বর্ষা মৌসুম শেষে বাঁধের ওখান থেকেই আবার কাজ শুরু করতে হবে। আসলে পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কমবেশি এই সমস্যা থাকবে। টানা ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় কাটা মাটি ও আবর্জনা জমে অনেক পরিষ্কার খাল-নালাও ভরাট হয়ে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর মুষলধারে বৃষ্টি নামে নগরীতে। ওইদির রাত আটটা থেকে নগরীর বহদ্দারহাট, কেবি আমান আলী রোড, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, হালিশহরের বিভিন্ন অংশ, ফইল্যাতলি বাজার, ষোলশহর দুই নম্বর গেট, মুরাদপুর, শুলকবহর, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়ার কয়েকটি অংশ ও চকবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় এই সমস্যা রাত পেরিয়ে গতকাল শনিবারও অব্যাহত ছিল। তবে দুপুরের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট ও ময়মনমিংহ অঞ্চলেই বেশি বৃষ্টিপাত হতে দেখা গেছে। এর মধ্যে বন্যাকবলিত সিলেটেই দেশের সর্বোচ্চ দুইশ’ ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়াও বিভাগের মধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় একশ’ ১১ ও উপক‚লবর্তী এলাকা সীতাকুন্ডে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্ষা মৌসুমের চলমান এই বৃষ্টিধারা আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত কমবেশি অব্যাহত থাকতে পারে। বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে বলে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।