নগরজুড়ে ‘সিএমপির চোখ’ উদ্যোগ প্রশংসনীয়

9

 

পুলিশ রাষ্ট্রের অপরিহার্য একটি অঙ্গ। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান তাদের দায়িত্বে। তাই প্রত্যাশা সংগত যে তারা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনকে মূলনীতি হিসেবে অনুসরণ করবে। এটি করতে গিয়ে তাদের বিভিন্ন কৌশল ও সময়োপযোগী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে সফলতা আসলেও গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা একধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ে। আমাদের মনে আছে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় অপরাধ দমন, সুশৃঙ্খলভাবে যান চলাচল, আইনি ব্যবস্থা দ্রæততার সাথে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সর্বপ্রথম নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১১০টি সিসি ক্যামরা স্থাপন করেছিলেন। এতে স্বল্প সময়ে অপরাধ শনাক্তের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায়, অপরাধীরাও থমকে দাঁড়ায়। অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা এ সিসি ক্যামরার মাধ্যমে শনাক্ত হওয়ায়, অপরাধিরা পালিয়ে যেতে পারে নি। ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে অপরাদ প্রবনতাও হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু মাত্র ৩বছরের মাথায় ক্যামরাগুলো ঠিকমত পরিচর্যা না হওয়ায় অধিকাংশই অকার্যকর হয়ে পড়ে। এসময় ব্যক্তিমালিকানাধীন সিসি ক্যামরার ফুটেজ নিয়েই পুলিশকে অপরাধী শনাক্ত করতে হয়। এরমধ্যে সম্প্রতি ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে একধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ডিজেলের দাম বাড়লেও পেট্রোল বা সিএনজি গ্যাসচালিত যাত্রীবাহী বাস, মিনিবাস, টেম্পো ও অটোরিকশার মালিক-শ্রমিকরা যাত্রী ভাড়া বাড়তি নিতে শুরু করে। এ অবস্থায় প্রতিনিয়ত যাত্রী চালক-হেল্পারের সাথে ঝগড়া-বিবাদসহ বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যায়। নৈরাজ্যকর এ পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘হ্যালো সিএমপি’র আওতায় ‘আই’স অব সিএমপি’ নামে এক নতুন কার্যক্রম শুরু করেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় জানানো হয়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি স্থানে বসানো হয়েছে ৪১১টি সিসি ক্যামেরা। এসব ক্যামরার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে অপরাধভীতি কমানো এবং অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ ভীতি বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। এসব ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে পুরো নগরীকে এক স্থান থেকে বসে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া সিএমপির নিজস্ব অ্যাপ থেকে বাসযাত্রীরা নির্ধারিত গন্তব্যের ভাড়াসহ সেবা কার্যক্রমও জানতে পারবে। উল্লেখ্য যে, সিএমপি’র নিজস্ব উদ্যোগে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও কিছু কিছু স্থানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো ক্যামেরাও এই নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হয়েছে। পরে ব্যক্তিগত ক্যামেরাগুলো সিএমপির নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা, ক্যামেরার সঙ্গে পুলিশের টহল কারের সংযোগ স্থাপন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলে জানান সিএমপি কমিশনার। নগর পুলিশ প্রধান তানভীর বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় নগরীতে গাড়ির নম্বর শনাক্তের একটি প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে। সেটিও নগর পুলিশের সাথে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া, নগরীর বিভিন্ন স্পটে ৭০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। এর মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় ৪১১টি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়, যা সিএমপি সদর দপ্তরে স্থাপন করা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত আছে। নগরীর জিইসি মোড়, ষোলশহর, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, টাইগার পাস, অক্সিজেন, পতেঙ্গাসহ ৭০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এসব ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ৩২৪টি ক্যামেরা দিন রাত পর্দায় সচল থাকবে। যেগুলোর ভিডিও ১৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে। সিএমপি সূত্রে জানা যায়, এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটা অফিসার প্যানেল করা হয়েছে। এসব ক্যামেরা সচলের বিষয়ে তারা দায়বদ্ধ থাকবে। সিএমপি’র নিজস্ব অ্যাপ ‘হ্যালো সিএমপি’ কে আরও জনবান্ধব করা হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রীরা তার নির্ধারিত গন্তব্যের ভাড়া জানতে পারবে এবং কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করলে অভিযোগ দিতে পারবেন।
আমরা অপরাধ দমন ও নগরবাসীর সেবার মানসে সিএমপির এধরনের আধুনিক ও ডিজিটাল উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তবে এ কার্যক্রম যেন ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত থাকে সেইদিকে মনোযোগ দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।