ধোপা থেকে শাক, ময়লা পানিতে পাক!

16

একসময় চট্টগ্রাম পুরনো বিমান অফিসের পাশ দিয়ে হাঁটতেই দেখা যেত আমাদের এ নগরের অনেক ধোপি বড় ড্রেনটির পানিতে কাপড় ধুয়ে আউটার স্টেডিয়ামে লম্বা রশিতে ঝুলিয়ে দিতেন রোধে শুকানোর জন্য। অবশ্যই এখন দেখা যায় না। নিশ্চয় অন্যকোন ড্রেন বা নালার পানিতে কাপড় ধোয়ার কাজ চলছে। কারণ এখন তো এ শহরে খুব একটা জলাধার কোথাও মেলা ভার। রাস্তার মোড় বা মহল্লার কোন এক চত্বরে ওয়াসার বা সিটি কর্পোরেশনের স্থাপিত কিছু পানির কল আগে দেখা গেলেও এখন খুব একটি নেই। এসব কল থেকে সর্বসাধারণ পানি পান করতেন। বাসাবাড়িতে ব্যবহার করতেন। এখন নেই জলাধার নেই পানির কল। যে কয়টি জলাধার আছে তাও দখল আর ভরাটে ছোট ছোট কুপে পরিনত হওয়ার পথে। ধোপিরা যে কাপড়গুলো ড্রেন বা নালার পানিতে ধুইয়ে পাকসাফ করছেন তা কিন্তু নগরবাসীর। টাকা দিয়ে পরিষ্কার ও আইরন করার জন্য দেয়া হয়। বাস্তবে কোথায়, কোন পানিতে ধৌত করা হয়, তা তদারকির দাবি রাখে। প্রসঙ্গটা নালার পানিতে শাক ধুয়ে বিক্রির বিষয়ে দৈনিক পূর্বদেশে যে প্রতিবেদন এসেছে তা নিয়ে আজকের সম্পাদকীয় স্তম্ভ। প্রতিবেদনটি কাট্টলি নিবাসী সাইফুদ্দিন সাকির ফেইসবুক ওয়াল থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়। সাইফুদ্দিন সাকি একজন প্রবীন এবং সচেতন নাগরিক। একসময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে বেশ সুনামের সাতে কাজ করেছেন। পদটি মিডিয়া সংশ্লিষ্ট বিধায় তার দেয়া পোস্টটির গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সংবাদকর্মীদের কাছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেকসময় সাংবাদিকের ভূমিকায় কাজ করে-এমনটি ধারণা সত্য প্রমাণ করে যখন এ জাতীয় সংকটগুলো ফেইসবুক কিংবা টুইটারে পোস্ট করা হয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। দৈনিক পূর্বদেশ এ জাতীয় একটি পোস্ট ও ছবিকে পত্রিকার শিরোনাম করে প্রকাশ করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে নিঃসন্দেহে। উত্তর কাট্টলির পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি। সাগর এবং কাট্টলির আবাসিক এলাকার (বিভিন্ন মহল্লা বা পাড়া) মধ্যভাগে বিস্তৃত এলাকা রয়েছে। যেখানে কৃষকরা ক্ষেত-খামার করেন। মৌসুমি তরিতরকারিতে প্রাঙ্গন ভরা থাকে এ শীতে। বর্তমানে যেখানে ডিসি পার্ক তৈরি করা হয় এবং ফুল উৎসব চলছে তা কিন্তু এসব ক্ষেতের গা ঘেঁষে গড়ে উঠা সাগরের তীরে। মননশীলতার চর্চা, বাহ্যিক সৌন্দর্যের রকমারি উৎসব অপরদিকে জীবন রক্ষার জন্য যে খাদ্য তার বিষক্রিয়া! প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘শাক খাবেন কী করে!! সাবধান’ এই শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বুধবার একটি পোস্ট করেন কাট্টলী এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি-চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী। সাথে জুড়ে দেন চারটি ছবি। যে ছবিগুলোতে স্পষ্ট করে দেখা যাচ্ছে, নালার পানিতে ভিজিয়ে নেওয়া হচ্ছে জমি থেকে তুলে আনা শাক। ফলে নোংরা নালার পানিতে ডুবানো শাক স্বাস্থ্যকর না হয়ে ক্ষতিকর হয়ে উঠছে।
সাইফুদ্দিন আহমদ সাকী তার পোস্টে লিখেন, ‘শীতকালে গরিব-ধনী সবাই একটু-আধটু শাক খায়। শাক পছন্দ করেন না এমন মানুষ এক্কেবারে নাই বললেই চলে। অথচ আমরা শাক খাচ্ছি না বিষ খাচ্ছি কেউ জানি না। শাক ব্যবসায় এখন প্রচুর লাভ। অন্য দামী দামী তরিতরকারি চাষ ছেড়ে দিয়ে এক ধরনের মুনাফালোভীরা শুধু শাকই চাষ করছে। সরেজমিনে ক্ষেতে গিয়ে জানতে পারলাম, শাকগাছে প্রতিনিয়ত একধরনের কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করে। ফলে দ্রæতই শাকগাছ বড় হয় এবং পাতা দুদিনে বেড়ে যায়।’
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘এছাড়া এখন যে বিষয়টি তুলে ধরব, তাতে তো বমি হবার উপক্রম। ব্যবসায়ীরা শাকগুলো ক্ষেত থেকে তুলে এনে ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধ দূষিত ড্রেনের পানিতে ধুয়ে-মুছে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে। এই ড্রেনে রয়েছে খোলা পায়খানা। আমি গত বছরও এই বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম এবং প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কদিন পরেই আবার সেই একই অবস্থা। এই শাক নগরীর বড় বড় বাজারগুলোতে যাচ্ছে এবং অজান্তে মানুষ কিনে খাচ্ছেন। সরকারি আমলা, পুলিশ অফিসার, রাজনৈতিক নেতা, সামাজিক সংগঠক কেউ কি বাদ পড়ছেন? গত এক বছর ধরে আমি বাজার থেকে শাক কিনে খাই না। নিজে সংগ্রহ করে খাই। না হলে খাই না। নো আফসোস।’ পোস্টটি পড়তে পড়তেই তো বমি আসবে অনেকের। এ জাতীয় কাজ শুধু গর্হিতই নয়, রীতিমত অপরাধ। এ অপরাধপ্রবনতা বন্ধ করতে হবে। এর দায় রয়েছে নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের। লেখক জলাধারের সংকটকে দায় করেছেন, এটি অতি বাস্তব। তবে কাট্টলিতে এখনও অনেক জলাধার আছে। তাছাড়া বিস্তৃর্ণ সাগরও আছে যেখানে পানি খুব দূরে নয়। বাস্তবতা হচ্ছে, কৃষকদের অসচেতনতা এবং কষ্ট করে পানি যোগাড়ের বাড়তি কষ্ট থেকে মুক্ত থাকা। এক্ষেত্রে সাধারণ কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি আইনগত পদক্ষেপ নেয়াও জরুরি।