ধান-চালের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকেরা আগ্রহ হারাচ্ছে চাষাবাদে

80

ধান-চালের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চন্দনাইশের কৃষকেরা চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছে। সরকারিভাবে যে পরিমান ধান সংগ্রহ করা হয়েছে তাতে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ না দেখায় চলতি মৌসুমে চাষাবাদ করছেনা অনেক কৃষক। চলতি বর্ষা মৌসুমে সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধানের চাষাবাদ হয়নি চন্দনাইশে। সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচিতে উপজেলা পর্যায়ে ধান সংগ্রহ কম করায় বিপাকে পড়েছে চন্দনাইশের কৃষকেরা। সরকারিভাবে ধান প্রতি কেজি ২৬ টাকা। ফড়িয়া দালালরা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান ১৩-১৪ ধরে ক্রয় করছে। অথচ প্রতি কেজি ধানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২-২৪ টাকা। সে সাথে চলতি বর্ষা মৌসুমে সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় চন্দনাইশে আউশ ধানের চাষাবাদ হয়নি। আমন ধানের বীজতলা ও খালি রয়েছে প্রচুর পরিমানে। প্রতি বোরো মৌসুমে নতুন গোলায় তোলার পর ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করে সরকার। গত ২৫ এপ্রিল থেকে এ কর্মসূচি শুরু হয়ে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম জেলায় এ বারে ১৪ হাজার ৬শ ৩৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে সরকার। সরকারের এ কর্মসূচিতে মিল মালিকেরা চাল বিক্রি করে বড় ধরনের লাভবান হলেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক। ফড়িয়া ও দালালরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনছে প্রতি মণ ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা, প্রতি কেজি ১২-১৩ টাকা। অথচ ধান উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২-২৪ টাকা। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। তবে কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা দরে প্রতি কেজি ধান কিনছে সরকার। কিন্তু খাদ্য বিভাগের হয়রানির ভয়ে কৃষকেরা খাদ্য গুদামে যেতে আগ্রহী নয়। ধান বিক্রয়ে ন্যায্য মূল্য থেকে কৃষক চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, ৩৩ হাজার কৃষকদের কাছ থেকে চন্দনাইশ উপজেলায় মাত্র ১শ ৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি, খাদ্য কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটির অধীনে খাদ্য বিভাগ চন্দনাইশের ৩০ হাজার ৩শ ৩৩ টি কৃষক পরিবার থেকে ইতোমধ্যে ১শ ৩ মেট্রিক টনের প্রায় ধান সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা যায়। চন্দনাইশে বিশাল কৃষি জনগোষ্টির উৎপাদিত ধান থেকে মাত্র ১শ ৩ মেট্রিক টন সরকার প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা মূল্যে ক্রয় করছে। কৃষকের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে প্রতি কৃষক থেকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ৩ মেট্রিক টন নেয়ার কথা থাকলেও নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ১ জন কৃষক থেকে ১ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। ফলে ১শ ৩ জন কৃষক সরকারিভাবে ধান বিক্রয়ের সুযোগ পেয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত ধান সরকারি নির্ধারিত দাম অনুযায়ী বিক্রয় করতে না পারায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্বভোগী ও দালালেরা। তাছাড়া এ বিশাল জনগোষ্ঠির আবাদি ১০ হাজার ৩শ ৬ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদিত হয়। এ বিশাল উৎপাদিত ধান থেকে সরকারিভাবে মাত্র ১শ ৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করায় কৃষকদের উৎপাদিত ধান বিক্রি হচ্ছে মধ্যসত্বভোগীদের কাছে কম মূল্যে। এর প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। তাছাড়া চলতি মৌসুমে সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় অনাবাদী রয়ে গেছে আউশ ধানের জমি। সে সাথে আমন ধানের বীজতলাও খালি পড়ে আছে। কৃষকেরা জানালেন চাষাবাদ করে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় অনেক কৃষক চলতি মৌসুমে চাষাবাদ করবেনা। চন্দনাইশে দোহাজারীতে ৩, বাগিচাহাটে ৪, রৌশনহাটে ২, বিওসি’র মোড়ে ৩, মৌলভীর দোকান এলাকায় ৭টিসহ ১৯ টি রাইচ মিল রয়েছে। সে সাথে এ সব এলাকায় ১৫ জনের অধিক ধান ব্যবসায়ী তথা মধ্যসত্বভোগী রয়েছে। বাগিচাহাটের রাইচ মিলের মালিক মজিদ, রৌশন হাটের ফজল জানান, গত ১ সপ্তাহ ধরে রাইচ মিলে ধান থেকে চাউল তৈরি করে রাখলেও চাউল কেনার কোন ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাছাড়া স্থানীয় ধানের চাউলগুলো ধামেও সস্তা। প্রতি বস্তা চালের মূল্য ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা। ফলে প্রতি কেজি চাউলের মূল্য ২০-২২ টাকা। আবার স্থানীয় লোকের এ সকল চাউলের ভাত খেতেও অভ্যস্ত নয়। ধানের ব্যবসায়ী আলমগীর, মোসলেম মিয়া জানালেন, গত ১ সপ্তাহ ধরে রাইচ মিলে চাউল বিক্রি না হওয়ার কারনে তারাও ধান ক্রয় করছে না। তাছাড়া কৃষকদের কাছে প্রচুর পরিমান উৎপাদিত ধান থাকলেও বিক্রয় করার সুযোগ না পেয়ে বিপাকে পড়েছে অনেক কৃষক। ফলে চলতি আউশ মৌসুমে ও আমন মৌসুমে চাষাবাদের আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকেরা। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেছেন, সরকার যথানিয়মে ধান সংগ্রহ করছে। বৃষ্টিপাত যথাসময়ে না হওয়ায় চাষাবাদ শুরু হয়নি।
তবে বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে কৃষকেরা মাঠে নেমে পড়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করছেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চাষাবাদ করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে সরকারিভাবে কৃষকদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ও সময়মত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে কৃষকেরা ধান উৎপাদন থেকে সরে পড়তে পারে। ফলে দেশে যে কোন সময় খাদ্য ঘাটতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। সে সাথে দেশের ধানী জমিগুলি ঘাসে ভরে গিয়ে চাষাবাদে অনুপোযোগি হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তারা মত প্রকাশ করেন।