ধর্ষণের আসামি চেয়ারম্যানকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

12

ধর্ষণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, ভুয়া প্রকল্পে সরকারি অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে রাঙামাটি বরকলের ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন। এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় এরই মধ্যে বরকল উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ থেকে অপসারণসহ দল থেকে বহিস্কার করা হয় ক্ষমতাসীন দলের এই ইউপি চেয়ারম্যানকে।
স্থানীয়রা জানান, চাকরি ও বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার এক তরুণী গৃহবধূকে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করেন মামুন। ধর্ষিতা বর্তমানে সাত মাসের অন্তসত্ত¡া। এ ঘটনায় বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের বিরুদ্ধে গত ২৪ জুন বরকল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ধর্ষিতার বাবা মো. নাছির উদ্দিন হাওলাদার। এ খবর জানতে পেরে গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান আসামি মামুন। এদিকে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত ৫ জুলাই তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান শেখ ফজলে সামসের নির্দেশে সরাসরি দল থেকে বহিস্কার করা হয়। দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বহিস্কারাদেশ কার্যকর করা হয়।
যুবলীগের রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ কাজল বলেন, গঠণতন্ত্রের ধারায় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক বরকল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি পদসহ মামুনুর রশিদ মামুনকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে মামুনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও ইউপি চেয়ারম্যান হতে অপসারণসহ উপযুক্ত বিচার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন। দাবিটি নিয়ে ১৯ জুলাই ভুষণছড়া ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
মুক্তিযোদ্ধা মো. সুলতান আলী, বরকল উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. আল-আমিন, যুগ্ম সম্পাদক কামাল হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবর আলীসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মী এবং স্থানীয়রা জানান, মামুন ও তার বাবা সোলাইমান এক সময় জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করতেন। ১৯৯৫-১৯৯৬ সালের শেষের দিকে বাবা-ছেলে যোগ দেন বাংলাদেশ আওয়ামী কৃষক লীগে। পরে ১৯৯৮ সালে বরকল যুবলীগের যোগদান করেন মামুন। এরপর যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই পদবি ব্যবহার করে ২০১৬ সালের শেষের দিকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪নং ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান পদটি লাভ করেন। এরপর থেকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান মামুন। রাতারাতি কোটিপতি হন তিনি। তার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সিন্ডিকেটের নানা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে গত চার বছর ধরে অতিষ্ঠ এলাকার অসহায়, গরিব ও নিরীহ লোকজন। মামুন সোলার প্যানেল বিতরণ, মসজিদ, রাস্তা সংস্কার, বিধবা ভাতা, একটি বাড়ি-একটি খামার, গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ, নলক‚প স্থাপন, সেতু, কার্লভাট নির্মাণসহ বিভিন্ন ভুয়া প্রকল্পে বিপুল সরকারি অর্থ লুট করেছেন।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, মামুনের অনৈতিক কর্মকান্ড চরিতার্থ করতে তার অস্থায়ী ইউপি কার্যালয়ে একটি রঙ্গমঞ্চ কক্ষ এবং আরেকটি টর্চার সেল কক্ষ রয়েছে। এলাকার কেউ তার কথা না শুনলে বা তার কোনো অপকর্মের প্রতিবাদ করলে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে টর্চার সেলে অত্যাচার ও নির্যাতন চালান। মামুনের কার্যকলাপের ধরণ জিকে শামীম ও এরশাদ সিকদারের মতোই ভয়াবহ। ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন মামুন।
বরকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা হয়েছে। এরপর থেকে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তাকে যেখানে পাওয়া যায়, সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হবে।
ভিকটিমের বাবা ও মামলার বাদী মো. নাছির উদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, তাদের বাড়ি একই ইউনিয়নের ছোটহরিণা আমতলা গ্রামে। বিয়ে এবং চাকরির প্রলোভনে মামুন চেয়ারম্যান আমার মেয়ের (২০) সর্বনাশ করেছেন। চেয়ারম্যান মামুনের কাছে ধর্ষণের শিকার মেয়েটি বর্তমানে সাত মাসের অন্তঃসত্ত¡া। উপযুক্ত বিচারের জন্য সর্বশেষ নিজে বাদী হয়ে বরকল থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামুনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছি।
মামুন পলাতক ও তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।