ধর্ম ও অংক

15

ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

পরপর বেশ কয়েকজন শিশু রোগী। দিন-সপ্তাহের ব্যবধানে। কিশোর-কিশোরী। সারল্যভরা মুখ। ক্লিষ্ট চেহারা। স্বাস্থ্যে ঘাটতি। ওজন পরিমাপে বৃদ্ধি-বিকাশ রেখার নিচে অবস্থান। উচ্চতায়ও তেমন অবস্থা।
মা-বাবার বর্ণনা মতে, উপসর্গাদি এরকম- ‘শিশু খাওয়া-দাওয়া করে না। সব সময় নিস্তেজ হয়ে থাকে।’ ‘আর কোনো উপসর্গ!’ ‘হ্যাঁ পেটে ব্যথার কথা বলে।’ স্বাভাবিক নিয়ম মেনে শিশুর পূর্ণাঙ্গ রোগ ইতিহাস- নাম, নিখুঁত বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা, উপসর্গাদির ক্রম বিবরণ, রোগের পূর্ব ইতিহাস, জন্মকালীন ইতিহাস, খাবার-দাবার, টিকাদান, বেড়ে ওঠা, পারিবারিক ইতিহাস সব মিলিয়ে। হিস্ট্রি এতটা গুরুত্বপূর্ণ, বলা হয়ে থাকে শিশুর রোগ নির্ণয়ের প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ এর ভিত্তিতে হয়ে থাকে। বাকী ১০ শতাংশের অবদান দৈহিক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্টে।
এসব পড়ুয়ারা অপুষ্টির শিকার। অপুষ্টি নানা ধরনের সংক্রমণ ও অপুষ্টি চক্র গড়ে তোলে। অপুষ্টিগ্রস্থ শিশু খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ পদার্থের ঘাটতিতে পড়ে, খিদে মন্দার কবলে পড়ে।
শিশুর পেটে ব্যথার কারণও অনুসন্ধান করা হলোÑ সাধারণভাবে শিশুর পেট ব্যথা হয়Ñকোষ্ঠকাঠিন্য, কৃমি সংক্রমণ ও কোনো খাবার সহ্য না হওয়ার কারণে।
কিন্তু এসব শিশুরা পেটে ব্যথার স্থান দেখাচ্ছিল নাভির কাছে। সাধারণত নাভি থেকে দূরে নির্দেশিত পেটে ব্যথার সাথে পেটের কোনো অসুখ জড়িত থাকে। নাভির কাছে নির্দেশিত পেট ব্যথা সচরাচরভাবে ‘না অসুখের ব্যথা’।
‘না অসুখ’ শিশুর মনোরোগ। ভয় রোগ। তাই আবার বিশদ ইতিহাসে যাওয়া হলো। স্কুলে, বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ঘিরে ইতিহাস কান্ড।
সরাসরি প্রশ্ন- ‘কোনো টিচার কি তোমাকে মারে।’
শিশু ভয়ার্থ চোখে বলে-‘হ্যাঁ।’
‘কোন শিক্ষক মারে বেশি।’
‘ধর্ম শিক্ষক।’
আর কোন কোন শিক্ষক বেশি মারে? ‘অংক টিচার।’ অংক ধর্ম । ছোটকাল থেকে শিশুর জন্য ভয়ংকর নিশানা মেলে দেয়।

লেখক : প্রফেসর ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।