ধর্মে বর্ণে সবার মনে বৈশাখী উৎসব

118

আমরা সকলেই জানি, বাঙালি উৎসব মুখর জাতি। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালির প্রাণের উৎসব যেনো আজ বৈশাখী উৎসব। বর্ষ বিদায় আর বর্ষবরণের পেছনে রয়েছে নানা রকম ইতিহাস, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আমাদের চলমান ইতিহাস ঐতিহ্য ও সমাজ সংস্কৃতির মাঝে অনেক ধরণের কথা বার্তা প্রচলিত আছে। সে সময়কালে গ্রামে গ্রামে মেলা হতো, হতো গরুর দৌড়, মোরগের লড়াই,গম্ভীরা গান, যাত্রা, জারি, সারি, কবিগান। আর এসব কিছু নিয়েই চলতো উৎসবের আয়োজন। এখনো আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ফিরে মেলা বসে। সেই মেলা থেকে সারা বছরের প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী সংগ্রহের তাগিদটাও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল নাবাংলা নববর্ষ পালনের মূলে আছে কৃষি । আগে বছর গণনার ভিত্তি ছিল চন্দ্রকলা। পরে ফসল বোনা ও কাটার বা কৃষির কারণে চন্দ্র ও সূর্যের উৎসব ভিত্তিক গননা শুরু হয়। পরে ঋতুর পরিবর্তন দেখেই পালিত হচ্ছে নববর্ষ। আমরা বাঙালিরা নববর্ষ পালন করি বাংলা সনের প্রথম দিন। এটি এমন একটি উৎসব যা হিন্দু , মুসলমান বা বৌদ্ধদের একক কোনো উৎসবের দিন নয়। এর চরিত্র সার্বজনীন। ধর্ম এর ভিত্তি নয়,তাই সার্বজনীন এমন উৎসব পৃথিবীতে বিরল। জানা যায়, পৃথিবীর নানাদেশে নানা বর্ণে উৎসবকে ঘিরেই নববর্ষ পালনের রেওয়াজ চালু হয়েছে । যুগের চাহিদা ও পরম্পরায় উৎসবরে ব্যাপারটির উন্মাদনা বর্র্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আমাদের বর্তমান প্রচলিত ধারাতে ডিসেম্বরের বিজয় উৎসব দল মত ধর্ম গোত্র নিরপেক্ষ একটা জাতীয় উৎসব। বহুকাল আগে থেকে মুসলমানদের নববর্ষ বলতে আশুরাকে বোঝায় (যা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। পারস্য বা ইরানে নওরাজ উৎসবের প্রচলন হয়েছিল। যা এক সময় মদিনাতেও প্রচলিত ছিলো। আমাদের প্রিয় রাসুল (সা:) মাদিনা হিজরতের দুই বছর পর মুসলামানদের জন্য ঈদ উৎসবের প্রবর্তন করেন।
সম্রাট আকবর সিংহাসনের আরোহণের পর হিজরি ৯৬৩ সালে বাংলা নববর্ষের সূচনা হয়। এ সময় তাঁর বিজ্ঞ রাজ জ্যোতিষী আমীর ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে নির্দেশ দিলে তিনি সবিশেষ পরিশ্রমের মাধ্যমে হিজেরী সন বা চন্দ্র বৎসরকে চতুরতার সাথে সৌর বৎসরে পরিণত করেন। মূলত এর সূচনা হয়, ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দের পর থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় চন্দ্র বৎসরের সাথে মিল রেখে অত্যন্ত সুকৌশলে ১৫৮৪ খৃষ্টাব্দের ১০/১১ মার্চ এ ফসলী সন বা বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি ঘটে। যা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। এর মাধ্যমেই ঋতুধমী উৎসব হিসেবে যাত্রা শুরু করে বাংলা সন। যার শুরুটা ছিলো পয়লা বৈশাখ দিয়ে। এ ফসলী সন চালুর পর থেকে কৃষিকাজ নির্ভরতাকে কেন্দ্র করে গ্রাম গঞ্জের ব্যবসায়ীরা হিসাবের খাতা খুলতেন নববর্ষের শুরুতে। এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে ওঠে খাজনা আদায়ের সূচনা মাস হিসেবে। অন্যদিকে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্মিলনের ফলে এই বাংলা অব্দটি পেয়ে যায় ব্যাপকতা। আকবরের আমলে প্রচলিত বাংলা নববষের শেষ দিকে বা চৈত্রমাসে ভূস্বামীরা প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করতেন। জমিদারি বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই প্রথা বলবৎ ছিলো। তবে আমাদের সরকারি ব্যবস্থাপনাতে এখনো ভূমির খাজনা আদায় করা হয় বাংলা সন তারিখ ধরে। হিসাব ও সেই ভাবে প্রচলিত আছে। আকবরের রাজ সভা থেকে হিজরী সন পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা সনের যে অভূতপূর্ব বিস্তার লাভ করেছিল তা এখন বাঙালির ঐতিহ্য চেতনা ও সংস্কৃতির মধ্যে ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির সবার মধ্যে মেলবন্ধন গড়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাইতো আজকাল সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় উৎসবে পরিণত করতে বোনাস ভাতা ও ছুটি ও আনন্দের মহা সম্মিলনে পরিণত করেন। ছোট্টবন্ধুরা আমাদের প্রিয় জননেত্রী বলে থাকেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। সুতরাং আমরাও উৎসবে আয়োজনে সবার যোগে যুক্ত হতে পারি অনায়াসে।