ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানই এ দেশের জাতীয় আদর্শ

7

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ মুহাম্মদ ফরিদুল হক খান এমপি বলেছেন, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া দেশে সব ধর্মের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি, সহিষ্ণুতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহাবস্থানের পরিবেশ বিরাজ করছে যুগ যুগ ধরে। ধর্ম যার যার, দেশটা সবার। ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানই বাংলাদেশের জাতীয় আদর্শ। এই ঐতিহ্য কেউ ম্লান করতে পারবে না। এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য আমরা এ দেশ নিয়ে গর্ববোধ করি।
গতকাল বুধবার নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের চতুর্থ দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তুল ফালাহ’র খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আলকাদেরী।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি বলেন, নবী-ওলী এবং সাহাবায়ে কেরামের প্রতি অসম্মান ও কটূক্তি আমরা কিছুতেই বরদাশত করবো না। যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের পাঁয়তারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। তিনি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের প্রথম খতিব অধ্যক্ষ আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরী (র.) ও সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বদান্যতায় এ শাহাদাতে কারবালা মাহফিল চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক উজ্জ্বলতার দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেন।
মাহফিলে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সূফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) প্রতি যথাযথ সম্মান ও মুহাব্বত প্রদর্শনই ইসলামের মূল নির্দেশনা। এ ধরনের শাহাদাতে কারবালা মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে আমরা মুমিন মুসলমানদের মাঝে আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মুহাব্বত প্রোথিত করতে চাই। তিনি সমবেত জনতা ও অতিথি আলোচকদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
মাহফিলে আলোচক ছিলেন শ্রীলঙ্কার আল্লামা শাহছুফি এহছান ইকবাল আলকাদেরী। কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন বিশ্বনন্দিত কারী শায়খ আহমদ নায়না।
সাহাবি ও আহলে বায়তের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ঈমানের দাবি বিষয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান আলকাদেরী। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি। তাঁরা আকাশের নক্ষত্রতুল্য। তাদের সমালোচনা করা কুফুরি। যারা তাদের নিন্দা করে তাদের স্থান হবে জাহান্নাম। সাহাবায়ে কেরামের প্রতি যথাযথ সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের মূল আক্বিদা দর্শন। তিনি সাহাবা বিদ্বেষীদের ভয়ংকর পরিণামের কথা উল্লেখ করেন।
মিডিয়ায় আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) চর্চার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করেন ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক। তিনি বলেন, মিডিয়া তথা গণমাধ্যমে ইসলামের মূল আদর্শ ও দর্শন যথাযথভাবে উঠে আসছে না। একশ্রেণির ইসলাম বিদ্বেষী ও ভ্রষ্ট আলেম-বক্তা মিডিয়ায় প্রিয় নবী (দ), সাহাবা ও ওলী বিরোধী কটূক্তি করে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথচ্যুত করছে। এদের ব্যাপারে সুন্নি উলামা মাশায়েখ ও লেখক গবেষকদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
বিদেশী আলোচক আল্লামা এহছান ইকবাল আলকাদেরী বলেন, হযরত ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) এর প্রতি মহব্বত ভালোবাসাই ঈমানের দাবি। কারবালা প্রান্তরে নবী পরিবারের আত্মত্যাগ ন্যায় সত্য ও ইনসাফের পতাকাকেই সমুন্নত করেছে।
অতিথি ছিলেন পিএইচপি ফ্যামিলির ডাইরেক্টর আলহাজ আলী হোসেন চৌধুরী, শাহজাদা সৈয়দ এহছানুল করিম ইছাপুরী, সমাজ সেবক হেলাল উদ্দিন তুফান, সমাজ সেবক সৈয়দ সেহাব উদ্দিন আলম শাহ।
আলোচক ছিলেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার আরবী প্রভাষক মাওলানা গোলাম মুস্তফা মুহাম্মদ নুরুন্নবী। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যগণ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশীন ও মতোয়াল্লীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে সালাত-সালাম শেষে দেশ-জাতির কল্যাণ ও বিশ্বের নির্যাতিত মানবতার মুক্তি কামনায় মুনাজাত করা হয়। বিজ্ঞপ্তি