দ্রুত প্রত্যাবাসনের আশায় বুক বেঁধেছে রোহিঙ্গারা

44

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ২ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বেশ কয়েকবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসেনর জন্য দিনক্ষণ ঠিক করেছিল দু’দেশ। কিন্তু প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা সেসময় স্বদেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে চীনকে জোর দাবি জানিয়েছেন। এসময় চীন সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে রাজী করানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন। এছাড়া গত ১০ জুলাই জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার জন্যে আকুতি জানান। এ সময় তিনি তাদের আশ্বস্ত করলে রোহিঙ্গাদের মাঝে নতুন করে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আশা জাগে।
কুতুপালং লম্বাশিয়া ১নং ক্যাম্পের মাঝি কলিম উল্লাহ জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন করে আবারো আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি চীন সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে রাজী করাতে চীনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সরকারের এই আর্ন্তরিক ভ‚মিকায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
মধুরছড়া ক্যাম্পের আরেক রোহিঙ্গা মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি যে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করছে। তাছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে এলে আমরাও তাকে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে জোর আকুতি জানিয়েছি। তিনিও আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন।
একই ক্যাম্পের নুর বেগম নামের এক বিধবা জানান, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট তার স্বামী আব্দুর রশিদকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে। ১ ছেলে ১ মেয়েকে নিয়ে সে কোন রকম প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসতে পেরেছে। কিন্তু গত ২ বছরে তার কোন আত্মীয়-স্বজনের দেখা এখনো সে পায়নি। তার চিন্তা কখন মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবে। স্বদেশে ফিরতে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে জানিয়েছেন নুর বেগম।
থাইংখালী তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মো. আলী জানান, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিলে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বন-জঙ্গলসহ নাফ নদীতে মরতে হত। এজন্যে আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন আমরা মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের দাবি মিয়ানমারে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করার।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হলে আমাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। তাই সরকারের প্রতি আমাদের দাবি যেন দ্রুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।