দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর মনিটরিং দরকার

18

 

ইউক্রেইনে চলছে যুদ্ধ। রমজান মাস আসি আসি করছে। তৎপর হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদদাররা। গলাকাটা ব্যবসাকাÐের যেন পোয়াবারো। সরকারের উন্নয়ন সাফল্য অনেক। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী, ভোগ্যপণ্য, নির্মাণসামগ্রীসহ দেশের বাজার ব্যবস্থায় ভয়াবহ অস্থিরতা বহমান। দুর্নীতিবাজ চাকরিজীবী, কালোবাজারি, অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী, সুদিকারবারি, রাজনৈতিক সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের সাধারণ মানুষ সুখে নেই। শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং স্বল্প-আয়ের মানুষ পেন্ডুলাম ঝোলা যাপন কষ্টে অতিষ্ঠ। যে সকল চাকরিজীবী দুর্নীতি করার সুযোগ পায়না, স্বল্প বেতনে চাকরি করে তাদের অবস্থা আরো মারাত্মক পর্যায়ে। চাল, ডাল, তেল, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মুরগি, তরকারী, শাকসব্জিসহ মানুষের নৈমিত্তিক ভোগ্যপণ্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কারণে অকারণে বাড়ছে। সিন্ডিকেটি কর্মকান্ড বাড়ছে। গুদামজাত কান্ড বাড়ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে হুড়হুড় করে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। ৭০ টাকার সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম অকারণে বাড়ছে। নির্মাণসামগ্রী টিন, রড, সিমেন্ট, পেরেক, ইট, বালি, পাথরসহ সবধরনের গৃহনির্মাণ সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাচ্ছে। দিনমজুরের বেতন, ৫০০/৬০০ শত টাকা। বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় যার শিক্ষকতা করছে বিগত পাঁচ-ছয় বছরে তাদের বেতন বাড়েনি। সরকার চাকরিজীবীদের জন্য কোন মহার্ঘভাতা কিংবা নতুন পে-স্কেলও ঘোষণা করেনি। কেউ কেউ বোমা ফাঁটাচ্ছে, দেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে বলে। গড় আয় বেড়েছে দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ সুবিধাভোগী শ্রেণির। সাধারণ মানুষের গড় আয় নিয়ে যত পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হোক না কেন বাস্তবে তার কোন ভিত্তি নেই। শুভঙ্করের ফাঁকির হিসাবে সাধারণ মানুষের আয় বাড়িয়ে দেয়া যায়। কিন্তু আয়ের পরিবর্তে জীবন যাত্রার ব্যয়ভার বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বর্তমানে ঊর্ধ্বমুখী যাপনের ব্যয়ভার সহ্য করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের না থাকলেও কষ্টে শিষ্টে সময় পার করছে দেশের দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা। লাভে আর লোভে মত্ত ব্যবসায়ীরা খুবই আহ্লাদে আছে বৈকি।
দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দোকানে সয়াবিন তেলের আকাল চললেও মুরগির খামারে তেলের মজুদ ধরা পড়েছে। এসব ধরার জন্য প্রশাসনের টুকটাক অভিযানের খবর পত্রিকার পাতায় মাঝেমধ্যে দেখা যায়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধকল্পে সময় উপযোগী এবং কার্যকর, পর্যাপ্ত অভিযান বাস্তবে নেই। দেশের অস্থির বাজার ব্যবস্থার মধ্যে কোন রকম স্থিতিশীলতা আনয়নে সরকার ও প্রশাসনের কোন কার্যকর ব্যবস্থা বিগত দশ বছরে দেখা যায়নি। বরং সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ হতে অবৈধ সিন্ডিকেট এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অপকর্মকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। ভোক্তা অধিকার, বিএসটিআইসহ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষসমূহ নামে মাত্র বেঁচে আছে। মূলত তারা দেশের মানুষের জন্য কোন স্বস্তিকর বাজার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি। ভেজালকান্ড এবং প্রতারকচক্র এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সবকিছুর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশের সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষদের। যতদিন এদেশে বেড়ায় বেগুন খাবে, সর্ষেক্ষেতে ভূতের ছড়াছড়ি নিয়ন্ত্রণে আসবে না ততদিন দেশের বাজারের অস্থিরতা কাটবে না, এমন অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
আমরা আশাবাদী, যদিও ইউক্রেইন ও রাশিয়ার মধ্যে বিরাজমান যুদ্ধ পরিস্থিতি, মুসলমানদের রমজান মাসকে মাথায় রেখে ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বিরাজমান, তবু সরকার ও প্রশাসন আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ নিলে দেশের বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায়। এর জন্য সরকারের আন্তরিকতা এবং আইন প্রয়োগকারী সকল কর্তৃপক্ষ ও কর্মচারী কর্মকর্তাদের সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন আর তা করা সম্ভব হলে অবশ্যই সরকারের পক্ষে দেশের বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা অসম্ভব নয়। ব্যবসায়ীদের অধিক মোনাফা এবং রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার যে মানসিকতা তা থেকে তাদের স্বাভাবিক ব্যবসায়ী আচরণে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কঠোর মনিটরিং ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসার আহŸান দেশের সর্বসাধারণের।