দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ জরুরি

42

রতন কুমার তুরী

পবিত্র রমজান মাস আসার আগেই বাজারে বেড়ে গিয়েছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য। এদিকে করোনা সংক্রমণ এবং এ সংক্রমণে মৃত্যুও দিনদিন বাড়তে থাকায় চলছে লকডাউন, ফলে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তরা পড়েছে চরম বিপদে। ইতিপূর্বে দফায় দফায় চালের মূল্য বাড়লেও তা কিছুতেই কমেনি এখনও চালের মূল্য বাড়তি পর্যায়ে রয়েছে এর পাশাপাশি দাম বেড়েছে তেল, ডাল, ছোলা, চিনিসহ অন্যান্য জিনিসপত্রেরও। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার বিষয়। মূলতঃ পবিত্র রমজান মাস প্রায় চলে আসায় এবং করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সরকারকে যা সিদ্ধান্ত নেয়ার তা এখনই নিতে হবে, তা নাহলে পবিত্র রমজান মাসে এবিষয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায়না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কমাতে ইতিমধ্যে সরকার টিসিবিকে আরো গতিশীল করার কথা বললেও তা এখনও কোথাও পরিলক্ষিত হয়নি, টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের গাড়ি আগে যাই ছিল এখনও পথে ঘাটে তাই দেখা যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে টিসিবিকে গতিশীল করতে হলে প্রতিটি এলাকায় তাদের ন্যায্য মূল্যের গাড়ি এবং জিনিসপত্রের সরবরাহ বাড়াতে হবে, যেসমস্ত জিনিসপত্রের দাম বাজারে বাড়তি আছে সেসমস্ত জিনিস টিসিবিকে খুববেশি পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে। অনেক সময় টিসিবি কর্তৃক বিক্রিকৃত দ্রব্যের মধ্যে এইটা না কিনলে অন্যটা বিক্রি করা যাবেনা এমন শর্ত জুড়ে দেয়া হয় অর্থাৎ এরা বেশ কয়েকটি জিনিস প্যাকেজে একসাথে বিক্রি করে এতে করে গরিব মানুষেরা একসাথে ছয় সাত শ টাকার জিনিস কিনতে পারেনা ফলে সে তার জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসটি পায়না। যেমন কিছু টিসিবির গাড়িতে আপনি পাঁচ কেজি পেঁয়াজ নিলেই কেবল আপনাকে অন্যান্য দ্রব্যাদি দেবে অন্যথা দেবেনা। যদিও তাদের কাছে পেঁয়াজের দাম বাজারের চাইতে অনেক কম তারপরও গরিব এবং মধ্যবিত্তরা সহজে একসাথে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কখনও কেনেনা। কারণ পেঁয়াজের সাথে তাদের অন্যান্য নিত্যপ্রয়োনীয় জিনিসপত্র কিনতে হয়, এই বিষয়টি টিসিবি’র ভ্রাম্যমাণ গাড়ির দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাবা উচিত। যার যা প্রয়োজন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে তা তাদের সরবরাহ করা উচিত। অন্যদিকে টিসিবি তাদের কার্যক্রম শহরকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ রাখায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামীণ পর্যায়ের ব্যাপক জনগোষ্ঠী বলতে গেলে দেশের সিংহভাগ মানুষই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। দেশের ব্যাপক দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষ্ট থেকে বাঁচাতে টিসিবিকে তাদের কার্যক্রম দেশের গ্রামীণ জনপদ পর্যন্ত স¤প্রসারণ করতে হবে,শুধুমাত্র শহরকেন্দ্রিক টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সুফল সকল জনগণের কাছে পৌঁছানো আদৌ সম্ভব না। এর বাইরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমাতে সরকারকে বাজার ব্যবস্থার মনিটরিং জোরদার করতে হবে এ বিষয়ে জনবলের কমতি থাকলে তা দ্রুত বাড়াতে হবে। একটা বিষয় লক্ষণীয় যে পবিত্র রমজান মাস আসলেই এদেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেয় কিছুকিছু সময় এদের সাথে রাজনৈতিক দলের কিছু মানুষও জড়িয়ে পড়ে যা আমরা অতীতে লক্ষ করেছি। এধরনের সিন্ডিকেট যদি তদন্তের মাধ্যমে প্রমানিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই বিভিন্ন অজুহাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ি শুধুমাত্র অধিক মুনাফার জন্য দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয় এতে জনগণের ভোগান্তি হলেও তারা দিব্যি আরামআয়াসে দিনযাপন করে, এমন অসাধু ব্যবসায়িদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। মূলতঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায়না। যে মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ থাকেনা তা জনগণ মেনে নেবেইবা কেনো ! আমরা প্রত্যাশা করবো সরকার টিসিবিকে গতিশীল করাসহ বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে প্রয়োজনে জনগণের প্রয়োজনে কিছুকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাইরের দেশ থেকে আমদানি করে হলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হবেন। জনগণ প্রত্যাশা করে সরকার যেকোনো মূল্যে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে অচিরেই নিয়ন্ত্রণে আনবে এবং দেশের ব্যাপক গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের মনে স্বস্তি এনে দেবে।

লেখক : কলেজ শিক্ষক এবং প্রাবন্ধিক