দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় সাধারণ মানুষ

12

চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষের সাথে মুখ লুকিয়ে মধ্যবিত্তরা কম দামে পণ্যের জন্য ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশর (টিসিবি) লাইনে ভিড় করছে। চাহিদার সাথে যোগানের ফারাকে সৃষ্ট পণ্য সংকটের হুড়োহুড়িতে অনেকে খালি হাতে ঘরে ফিরছে। সেদিন হয়তো চুলোয় আর হাঁড়ি চড়েনা। সংসারের ব্যয় মেটাতে চাহিদার কাটছাট করেও পারা যাচ্ছেনা। মাস শেষে গলির মুখের মুদি থেকে ওষুধ দোকানির চোখ রাঙানো এড়াতে লুকিয়ে চলাফেরা। অনেকে ধারদেনা করে সংসারের ব্যয় মেটাতে বিক্রি করেছেন জমিজমা বিক্রি। অনেক দিনমজুর ও গরিবের কপালে নিয়মিত দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটছেনা। মাছ মাংসের সাথে এখন পোলট্রি মুরগিও খাওয়া ভুলতে বসেছে । চকবাজারে প্রতি পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে মুরগির মাংস। বিশ্বমন্দা ও যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল। তবে অতি মুনাফা ও সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে নিত্য পণ্যের বাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। চাল ডাল সবজি ডিম থেকে পোল্ট্রি মুরগি সব পণ্য মূল্যবৃদ্ধির রেকর্ড গড়েছে। আসন্ন রমজানে পণ্যের চাহিদা বেড়ে দ্রব্যমূল্যের রেকর্ড কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা বলা মুশকিল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রশাসনের মাসিক সভায় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তর্ক দেখে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। দেশের পাইকার ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই কোটিপতি। অনেকে টাকার বালিশে ঘুমান। তারপরেও তাঁদের টাকার নেশা ছাড়ছেনা। সিন্ডিকেটের ফাঁদে ফেলে গরিবের রক্ত চুঁষে খাচ্ছে। কত টাকার মালিক হলে তাঁরা ক্ষান্ত হবে তা কেউ জানেনা। তাঁদের এই অনৈতিক মানসিকতার শিকার দেশের বিশকোটি জনগণ। লাভের জন্য ব্যবসা করবেন তা স্বাভাবিক। কিন্ত মজুদদারীর মাধ্যমে কৃত্রিম পণ্য সংকট সৃষ্টি করে এক ফোন কলে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা।কতিপয় পাইকার সিন্ডিকেট আছেন যারা সারা বছর বিভিন্ন পণ্য মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দেন। সিন্ডিকেট সদস্যরা মিলে ফোনে ফোনে বাড়িয়ে তোলেন পণ্যের দাম। একটি পণ্য মজুদ করে হাতিয়ে নেন কোটি টাকা। এটাকে পুঁজিবাদী ডাকাতিও বলা যায়। পাইকার বাজারে মূলত ডিও ব্যবসায়ীদের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এসব পুঁজিবাদী ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে ?। ফলে সাধারণ মানুষ জিম্মি দশা থেকে মুক্তি মিলছেনা। বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু সরকার ব্যবসায়ীদের ক্ষেপিয়ে তুলতে আগ্রহী নয়। তাই খুচরো বাজারে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেও পাইকারী বাজারে সহজে পা ফেলেনা। আবার প্রশাসনের অভিযানে হয়রানির অযুহাতে ধর্মঘট ডেকে পুরো দেশবাসীকে জিম্মি করে ফেলে। ধর্মঘট অস্ত্রের অনৈতিক ব্যবহারে পার পেয়ে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন প্রশ্ন হলো কতিপয় ব্যবসায়ীর হাতে দেশের বিশ কোটি মানুষ এভাবে কতদিন জিম্মি হয়ে থাকবে। এছাড়া আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম কারণ হলো পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও পণ্য হাত বদল। প্রন্তিক পর্যায়ে কৃষকের উৎপাদিত ফসল ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছতে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের হাত বদলে দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায় । যে কৃষক সারা বছর খাটুনি খেটে পণ্য বেঁচে লাভ করে ৫ টাকা, সেখানে দশ মিনিট সময় ব্যয় করে মধ্যস্বত্ত¡ভোগী হাতিয়ে নেয় দশ টাকা।বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনার অভাবে কৃষক ও ভোক্তা ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লুটে নেয়। তাই প্রতি ফসল মৌসুমে কৃষক ও ভোক্তার সহজ সংযোগে প্রযুক্তির ব্যবহার ও তদারকির পদক্ষেপ নিতে হবে। কম মূল্যে ও দ্রæত পণ্য পৌঁছে দেওয়া সহ দেশের প্রত্যেক জেলার একাধিক স্থানে কৃষকের জন্য সরাসরি পণ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার। যেসব জেলায় বেশী পণ্য উৎপাদন হয়, সেসব জেলার সাথে বিভাগীয় শহরগুলোর সাথে পণ্য পরিবহন আরো সহজ ও ব্যয় কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি রোধে পাইকার ও খুচরো বাজারে নিয়মিত পর্যাপ্ত তদারকি দরকার। পাকা রশিদ ছাড়া যেকোন পণ্য বেচাকেনা নিষিদ্ধ ও মজুদদারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে । কারণ গ্রামের হাট থেকে দেশের বৃহত্তম পাইকার বাজার সবখানে মূল্যবৃদ্ধির কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগী।
নিত্য পণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে সরকারের সব অর্জন ¤øান হয়ে যাচ্ছে। এজন্য বাজার মনিটরিং বাড়াতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন সহ সব তদারকি সংস্থার জনবল সংকট দূর করে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। মোটকথা হলো যদি সাধারণ মানুষের কষ্ট দূর করতে হলে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে।সাধারণ মানুষের কষ্ট লাগবে যে কোন মূল্যে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।

লেখক : গণ মাধ্যম কর্মী