দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা পাচ্ছেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা

19

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও উচ্চ আদালতে রিট সবমিলে ৭ বছরের দীর্ঘ চক্কর কেটেছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের। দশম গ্রেডে উন্নীত এবং দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে ২০১৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন সারাদেশ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক। সেই রিটের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ায়। গতকাল এক আদেশে প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড ও গেজেট দু’টোই নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ। রিটকারীদের মধ্যে থাকা নগরীর এনায়েত বাজার কলিমুল্লাহ মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখর দাশ জানান, আপিল বিভাগের দেয়া এ আদেশে প্রশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত উভয় ধরনের প্রধান শিক্ষকদেরকে দশম গ্রেডে উন্নীত এবং দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার নিদের্শনা দেয়া হয়েছে।
আদেশে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে প্রধান শিক্ষকরা ১২ হাজার ৫০০ (একাদশ গ্রেড) টাকা দিয়ে শুরু করেন। আপিল বিভাগের আদেশের ফলে সেটা ১৬ হাজার টাকায় (দশম গ্রেড) উন্নীত হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে ২ হাজার ২৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেই হিসেবে প্রধান শিক্ষকের সংখ্যাও একই। যদিও অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে শূন্যতা রয়েছে। আর সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক রয়েছে ৫২ হাজার।
তথ্যমতে, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজসহ ৪৫ জন প্রধান শিক্ষক হাইকোর্টে রিট করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ৫ মার্চ আদালত রুল জারি করেন। পরের বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেন। রায়ে আবেদনকারী ৪৫ শিক্ষককে দশম গ্রেডে উন্নীত এবং দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন।

এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। যেটি গতকাল বৃহস্পতিবার খারিজ হয়ে যায়। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ গতকাল এ রায় দিয়েছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সালাহউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এ রায়ের ফলে হাইকোর্টের আগের রায় বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন।
সালাহ উদ্দিন দোলন জানান, বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা বেতন পান ১১ ও ১২তম গ্রেডে। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। ফলে সরকারি প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা দিলেও তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। গতকালের রায়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় ক্ষেত্রেই প্রবেশ পদে বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড করাসহ গেজেটেড পদমর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রিট আবেদনের সময় আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন বলেছিলেন, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ঘোষণায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করেন এবং একই দিন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু তখন মন্ত্রণালয় কৌশলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল প্রবেশ পদে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ১১তম গ্রেড ও প্রশিক্ষণবিহীনদের ১২তম গ্রেড নির্ধারণ করে। অথচ নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির পদে অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ম গ্রেডে বেতন পান।
আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা উৎফুল্ল।