দ্বিতীয় মেয়াদে চমেবির উপাচার্য : প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

34

আ.ফ.ম.মোদাচ্ছের আলী

১৯৯৬ সালে ভোটারবিহীন ও একদলীয় নির্বাচনের তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন ‘জনতার মঞ্চ’ আন্দোলনে। ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে যে ১১০ জন পেশাজীবীকে চাকুরিচ্যুতির নোটিশ প্রদান করে তিনি তাঁদের অন্যতম। ২০০৬সালে দেশে ফিরে বাংলাদেশে ভোটের অধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে একজন পেশাজীবি হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন।দেশের সংকটে সংগ্রামে তিনি একজন লড়াকু মানুষ। এতোগুলো কথা যাঁর জন্য বলা তিনি প্রফেসর ডা. মোঃ ইসমাইল খান।২০১৭ সালে নবগঠিত চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত প্রথম উপাচার্য তিনি।যখন দায়িত্ব লাভ করেন ছিলনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, বসার জায়গা বা দাপ্তরিক কাজের স্থান। Chittagong Medical University act ২০১৬ এর act 16 অনুযায়ী গঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়টির ছিলনা কোন জনবল,দপ্তর এবং অবকাঠামোর কথা আগেই উল্লেখ করেছি। ফৌজদারহাট BITID বিল্ডিং কে স্বীয় প্রশাসনিক দক্ষতা দিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস স্থাপন,জনবল সংগ্রহ করেন।সরকারি বিধি নিয়মের মধ্যে থেকে সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলে একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে কত প্রতিবন্ধকতা পার হতে হয় তা এই কাজ যাঁরা করেন তাঁরাই জানেন।সাহসী ও প্রত্যয়ী ইসমাইল খান দায়িত্বগ্রহণ করে ক্রমান্বয়ে এই নব প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যান।চিকিৎসা প্রশাসনে তাঁর প্রাজ্ঞ ব্যবস্থাপনা ও দূরদর্শী ভাবনার জন্য ১৪ এপ্রিল ২০২১ সালে সরকার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তাঁকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। আমরা মানুষকে নিয়ে লিখি তার মৃত্যুর পর। কিন্ত জীবদ্দশায় সেই মানুষের ভালো কাজগুলো যদি তুলে ধরি আমি মনে করি তারা আরো প্রাণিত হবেন,দেশ ও জাতিকে আরো কিছু দিতে উৎসাহ পাবেন, অবদান রাখতে পারবেন।তাই এই লেখার অবতারণা। পাঠক আসুন এইবার ইসমাইল খানকে জানি।
১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাস করে রাঙামাটির কাউখালি উপজেলায় মেডিকেল অফিসার হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবনের সূত্রপাত। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। ১৯৯৩ সালে সেই সময়কার আইপিজিএমআর (যা এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে তিনি ফার্মাকোলজি থেকে এম ফিল ডিগ্রি লাভ করেন।১৯৯৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে WHO স্কলারশিপ নিয়ে মেডিকেল এডুকেশনে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে USM(University Science Malaysia)† শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। চট্টগ্রাম, ঢাকা, রংপুর স্যার সলিমুল্লাহ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করার পর ২০০৯ সালে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। সেইসাথে ঢাকা মেফিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগ এর প্রধান এর পাশাপাশি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদের ডীন নির্বাচিত হন এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় Cyberjaya University ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এই সম্মানে ভূষিত হন।অন্যদিকে। গবেষক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (BMRC)র রিসার্চ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালের প্রথম জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তিনি।নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য ও সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে বিএম এর নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। (১৯৯৪-৯৬,১৯৯৭-১৯৯৯)। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক মানুষ প্রফেসর ডা. মোঃ ইসমাইল খান।
তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলোর ভর্তি প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলা এনেছেন।যাচাই বাছাই করার প্রক্রিয়া চালু করেছেন।ইতিপূর্বে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ সরকারি ভর্তি প্রক্রিয়ার পর অবশিষ্ট তালিকা থেকে মেধার তোয়াক্কা না করে পাস নাম্বার থাকলেই ইচ্ছেমতো ভর্তি করে ফেলতো যা ছিল চিকিৎসা শিক্ষার জন্য অনুচিত। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজে ফর্ম জমা প্রক্রিয়ার পর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে তার প্রশাসনিক টিম নিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত থেকে মেধা যাচাই করে তালিকা,অপেক্ষমান তালিকা তৈরি করে দিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় শৃংখলা এনেছেন।অন্যদিকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিও দূর হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে সরকার নির্ধারিত ৫% কোটায় গরিব ও মেধাবীদের ভর্তির ব্যাপারে কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চালু করেছেন, ফলে সত্যিকারের গরিব ও মেধাবিরা এখন সুযোগ পাচ্ছে।২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি কর্ম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় ইউ জি সি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান এর মতে “Illuminating the mind by education, research and cure “ এই Motto Word দ্বারা পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর মতে এই বিশ্ববিদ্যালয়” New Frontiers of Health professional educations in Bangladesh “

আমরাও তা দেখতে চাই। বিশ্ব আজ কোভিড -১৯ এর সাথে লড়াই করছে। এই অনুজীবের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ এই লড়াই চলবে তা বিশ্ববিজ্ঞানীরা বলতে পারছেননা। কোভিড নতুন নতুন রূপে আক্রমণ করছে। পার্শ্ববর্তী ভারতে আজ আই সি ইউ ও অক্সিজেনের হাহাকার। বাংলাদেশের ঢাকার অবস্থা আমরা দেখতে পাচ্ছি আইসিইউ ও অক্সিজেনের হাহাকার। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে এই চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আপনার কাছে প্রত্যাশা থাকবে চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আই সিইউর সংখ্যা বাড়ানো, যদিও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ইতমধ্যে আরো। ১৮ টি কোভিড আইসিইউ চালু হয়েছে। কিন্ত বিশ্বায়নের এই যুগে শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করলে হবেনা। ভারতের টাটা, বাংলাদেশের গাজী গ্রুপসহ অনেকেই এগিয়ে এসেছেন আইসিইউ ও হাউফ্লো অক্সিজেন সমৃদ্ধ আই সিইউ চালুর নিমিত্তে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বিভাগে যতগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে আমার জানামতে অনেক মেডিকেল কলেজের আই সিইউ নাই। মাননীয় উপাচার্যের এই মেয়াদে প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী আই সি ইউ খুলতে পরিপত্র জারি করার বিষয়ে উদ্যোগ আশা করছি, ফলে একদিকে শিক্ষার্থীরা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তাদের প্রাপ্য শিক্ষা লাভ করবে অন্যদিকে এই আই সি ইউগুলো সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমান খরচে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে,পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রতিটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড ওয়ার্ড খোলার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।

লেখক : শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক