দ্বিতীয় ধাপে শতাধিক একর ভূমি উদ্ধারের টার্গেট

68

কর্ণফুলী দখলমুক্ত করতে দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শিগগির শুরু হচ্ছে। এ পর্যায়ে শতাধিক একর ভূমি উদ্ধার করা হবে। উচ্ছেদের আওতায় পড়তে পারে হাজারখানেক স্থাপনা। জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিন-চার দিনের মধ্যে এ অভিযান শুরু হতে পারে।
কর্ণফুলীর উত্তর পাড়ের একাংশ দখলমুক্ত করতে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা পাঁচদিন অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। এই পাঁচদিনে অন্তত দুই কিলোমিটার ভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে সদরঘাট থেকে বারেক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় উচ্ছেদ চালানো হয়েছে। এ স্থানে থাকা ২৩০ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ১০ একর ভূমি। এর মধ্যে লবণ কারখানা, গুদাম, ভবনও রয়েছে।
উচ্ছেদের পর পড়ে থাকা ভাঙ্গা অংশগুলো সরিয়ে নিচ্ছে সিটি করপোরেশন। তাদের নিজস্ব ট্রাক দিয়ে এগুলো সরানো হচ্ছে। এছাড়া উচ্ছেদ করা স্থানে দেয়াল নির্মাণের পাশাপাশি সীমানা পিলার দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ৪ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। পাঁচদিনের মাথায় ৮ ফেব্রুয়ারি বারিক বিল্ডিং এলাকায় গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শেষ হয়। টানা পাঁচ দিনের এ উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান। তাকে সহায়তা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অভিযানের প্রথম দিন ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলীর সদরঘাটের লাইটার জেটি এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। এ সময় প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৪ একর ভূমি দখলমুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় দিন ৫ ফেব্রুয়ারি মাঝির ঘাট এলাকায় ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। দখলমুক্ত করা হয় একটি উপখালের মুখ। ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার মাঝির ঘাট থেকে হাবিব গলি পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ৪০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি হাবিব গলি থেকে আনু মাঝির ঘাট পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ দিনে পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকায় আনু মাঝির ঘাটের দুইপাশ থেকে অভিযান চালানো হয়।
জানা যায়, পতেঙ্গা অংশে লালদিয়ার চর, বিজয়নগর, বোট ক্লাব থেকে ১৫ নম্বর জেটি, এবং সদরঘাট লাইটারেজ জেটি থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত সনাক্ত করা হয়েছে। এসব এলাকায় ২৫০ একর ভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে শত একর এবং তৃতীয় পর্যায়ে আরো দেড়শ একর ভূমি উদ্ধার করা হবে। উচ্ছেদ করা হবে ২১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, আমরা প্রথম ধাপের উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ করেছি। এধাপে প্রায় ১০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়েছে। উচ্ছেদ করা জায়গা দখলে রাখতে সীমানা পিলার ও দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা দ্বিতীয় ধাপে অভিযান চালাতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিগগির অভিযান শুরু হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী উদ্ধার কাজ চলবে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান জানান, কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ ছিলো। প্রথম পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান সফলভাবে শেষ করতে পেরেছি। পুরো এলাকার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী অভিযান চালানো হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ের সদর ঘাট এলাকায় স্থাপনা বেশি। কিন্তু এর বিপরীতে শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাড় এলাকায় নানা স্থাপনার সঙ্গে আছে জনবসতিপূর্ণ বস্তি, দোকান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে শুটকি শুকানোর টং। শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাশের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে জনবসতি। সেখানে রয়েছে কয়েক হাজার বস্তিঘর। চাক্তাই, রাজাখালী, বাকলিয়া এলাকায় এসব বস্তি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব এলাকায় নদীর তীর দখল করে অন্তত ৩-৫ হাজার বস্তিঘর রয়েছে। বস্তিঘর ছাড়াও শুঁটকি আড়ত, মাছের খামার, মসজিদ, মন্দির, স্কুলসহ নানা স্থাপনা আছে।
২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশ’ এর পক্ষে জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলী নদী দখল, মাটি ভরাট ও নদীতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশের পর জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করে। নগরের নেভাল অ্যাকাডেমি সংলগ্ন নদীর মোহনা থেকে মোহরা এলাকা পর্যন্ত অংশে ২০১৫ সালে জরিপের কাজ শেষ করা হয়। জরিপে নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। প্রতিবেদনটি ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর উচ্চ আদালতে দাখিল করা হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কর্ণফুলীর দুই তীরে গড়ে ওঠা স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন। ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন।