দ্বিজেন শর্মার তরুপল্লব ও নিসর্গ চর্চা

22

 

প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মার পঞ্চম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত ‘তরুপল্লব’ বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য (পুরস্কার ও সনদ সম্মাননা) সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য ও উদ্ভিদ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ‘সিটি ব্যাংক দ্বিজেন শর্মা ‘তরুপল্লব’ পুরস্কার ২০২২ সনদ ও সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৮ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রচলন করা হয়। কিন্তু কে এই দ্বিজেন শর্মা ? এমন প্রশ্ন সাধারণ পাঠকের জাগতে পারে। বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য বৃক্ষ ও প্রকৃতি সচেতনতা সৃষ্টির আন্দোলনের মহানায়ক হচ্ছেন এই দ্বিজেন শর্মা। যাঁর অনবদ্য লেখনির মাধ্যমে বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্ভিদ সচেতনতা জোরদার হয়। তিনি দেশের প্রধান প্রধান পত্রপত্রিকায় প্রকৃতি ও উদ্ভিদ সম্পর্কে নিয়মিত লেখালেখি করে গেছেন অমৃত্যু। এ ছাড়া প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ে গোটা ২০টি গ্রন্থ রচনা করে আমাদের সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তাঁর ‘শ্যামলী নিসর্গ’ গ্রন্থটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায়। তিনি ছিলেন সহজ সরল এক জ্ঞান বৃক্ষ। বৃক্ষের মতো সতেজ ও সবুজ ছিল তাঁর স্বভাব। এক অকৃত্রিম ভালোবাসায় মানুষকে আপ্লুত করে রাখতেন। তিনি সর্বদা পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনের সৈনিক ছিলেন। বলা যায় এই পৃথিবীকে সবুজ ও সতেজ ভাবে গড়ে তোলার তিনি ছিলেন কারিগর। ঢাকা নটরডেম কলেজে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তী জীবনে রাশিয়ায় প্রগতি প্রকাশনীর মুখ্য অনুবাদক হিসাবে সেখানে কাজ করেন। বিদেশি ভাষার অসংখ্য মূল্যবান বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ এবং প্রকাশ করেন। যা বাঙালি পাঠকের মানসগঠনে ও বৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনাকে সমৃদ্ধ করে। আমরা তাঁর মাধ্যমে মূল্যবান গ্রন্থগুলো পাঠ করার সুযোগ পাই। দ্বিজেন শর্মা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও সমাজ চিন্তক। তাঁর দেশপ্রেম ছিল কিংবদন্তি তুল্য। তাঁর মূল্যবান পরামর্শের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়তা পায় তা হলো, মানুষ বৃক্ষের মতো হলে সুখী হাওয়া যায়। দেশবাসীর কাছে তাঁর এই আহ্বান ছিল আমৃত্যু।

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখনও ফুল ফোটে, লতাপাতা গজায়, প্রজাপতি ওড়ে, ফুলের ¯িœগ্ধ সৌরভ সমীরণে ভেসে বেড়ায় জোসনায় ভরে যায় আকাশ। শুধু এই দেশে এই জগতে তিনি নেই। রয়ে গেছে তাঁর কীর্তি এই মহাত্মা দ্বিজেন শর্মা প্রকৃতিতে ফুল ফোটানোর জন্য নতুন কুড়ির গল্প আমাদের শুনিয়ে গেছেন। নৈতিক দায়বদ্ধতায় প্রতিদিন মানুষকে আহ্বান করে গেছেন প্রকৃতিকে ভালোবাসতে। আমি মনে কর তাঁর আহŸান বৃথা যায় নি। তাঁর মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে এদেশের তরুণ সমাজ আজ উদ্ভিত ও প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসছে।
তরুপল্লব এই আদর্শের একটি সংগঠন। যারা গাছ চেনা, গাছ লাগানোর আন্দোলনে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি তরুপল্লবের প্রতিষ্ঠাতা। তরুপল্লব তাঁর স্মৃতি ও আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য এবছরও উদ্ভিদ সংরক্ষণ পরিবেশ রক্ষায় অবদানের জন্য পাঁচ ক্যাটাগরিতে সিটি ব্যাংক দ্বিজেন শর্মা তরুপল্লব পুরস্কারের আয়োজন করে। তরুপল্লব তাঁর মন্ত্রে দীক্ষিত ও তাঁর দেখানো পথে এগিয়ে চলছে। এবার উদ্ভিদ ও পরিবেশ সংরক্ষণে সিটি ব্যাংক দ্বিজেন শর্মা তরুপল্লব পুরস্কার ২২ যাঁরা পুরস্কৃত হলেন, তাঁরা হলেন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য বিশিষ্ট প্রাণি বিজ্ঞানী অধ্যাপক ও ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান, উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণের জন্য গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পেয়ার আলী বিশ^বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ ও এ কে আবুল খায়ের। এছাড়া ‘বৃক্ষসখা’ কেটাগরিতে পুরস্কার ও সম্মানান পেয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষক পত্রিকা প্রকৃতি’র সম্পাদক কবি ও নিসর্গী মুশফিক হোসাইন, উদ্ভিদ বিষয়ক লেখক অধ্যাপক চয়ন বিকাশ ভদ্র এবং লেখক ও উদ্ভিদ সংগ্রাহক কাজী হাসান।
আমাদের সমাজে এবং দেশে প্রাকৃতিক বন অনেকাংশে হারিয়ে গেছে। ফলে দেশে জীববৈচিত্র্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের জন্য সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের চারপাশের বন-বনানী ও জলাধার। অন্যথায় আমাদের চরম মূল্য দিতে হতে পারে।

লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাংক নির্বাহী (অব)