দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইনের কাজ এগিয়ে চলছে

266

এখন দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের রেললাইন নির্মাণের কাজ। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ রেললাইন প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করে চট্টগ্রামের সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে রেল যোগযোগ চ‚ড়ান্তভাবে চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন। এতে করে অপার সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত হয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাধিত হবে আমূল পরিবর্তন। এক সময় কক্সবাজারের মানুষ স্বপ্ন দেখতো রেলে চড়ে সারাদেশে যাতায়াত করবে। যুগ যুগ ধরে এ স্বপ্ন নিয়ে কক্সবাজারের মানুষ থাকিয়ে ছিলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মেয়াদ থেকেই দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগের অংশ হিসেবে পরিকল্পনা হাতে নেয়। অবশেষে এ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় সে স্বপ্নের রেললাইন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। শুরু হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মানের কাজ। জানা যায়, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের নির্মাণ কাজের প্রায় ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ভ‚মি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়ে এসেছে। সামগ্রিকভাবে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে দোহাজারী-সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের নির্মাণ কাজগুলো। স¤প্রতি রেললাইন প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি পরিদর্শনের জন্য কক্সবাজারে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনসহ রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় রেলমন্ত্রী দোহাজারী এলাকা ও পরিদর্শন করেন। সে সাথে প্রকল্পের সাথে জড়িত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সহিত মতবিনিময় করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, কক্সবাজারের সাথে রেলপথ সংযুক্ত হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। পর্যটকরা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ভ্রমণ করতে পারবেন। তিনি বলেন, প্রকল্পের সার্বিক কাজ বর্তমানে এগিয়ে চলেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোহাজারী থেকে সাতকানিয়া, লোহগাড়া, চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার পর্যন্ত উপজেলার ঝিলংজা ও রামুর প্রকল্প এলাকায় বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। কিছু স্থানে রাস্তা নির্মাণ ও মাটি ভরাটের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কিছু জায়গায় জিও টেক্সটাইল বসানো হচ্ছে। গাড়ি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছেন শত শত শ্রমিক। শঙ্খ নদীর উপর রেললাইনের ব্রিজ নির্মানের কাজ দৃশ্যমান। ব্রিজের ৫’টি পিলার স্থাপনের কাজ ইতিমধ্যে অনেকাংশে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ রেললাইনের রাস্তা নির্মাণ কাজ, সেতু নির্মাণের কাজসহ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ভ‚মি অধিগ্রহণও শেষ হয়েছে। রেললাইনের সড়ক নির্মাণসহ অনেক কাজ দৃশ্যমান হয়ে গেছে। তাছাড়া কক্সবাজার সদরেই ঝিনুক আকৃতির রেলওয়ে স্টেশন নির্মান কাজ ও এগিয়ে চলছে। ঝিনুক আকৃতির এ স্টেশন দেখলেই বোঝা যাবে এটি সমুদ্র সৈকতের রেলওয়ে স্টেশন। তিনি জানান, কক্সবাজারের ঈদগাঁও মৌজায় ক্যাম্প অফিস কাম কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, রামুতে মেটেরিয়াল টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ শেষ হয়েছে।

১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার অংশে ব্যাকফিলিংসহ মোট ২৯ কিলোমিটার অংশে এম্বাস্কমেন্ট নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার অংশে জিও টেক্সটাইল ও সেন্ডব্লাংকেট স্থাপন ও ১ দশমিক ১৮ কিলোমিটার অংশে পিভিডি স্থাপন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম হয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার যাওয়ার পথে রামু হবে জংশন স্টেশন। সেখান থেকে একটি লাইন চলে যাবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে। অপর একটি রেললাইন পূর্বদিকে মিয়ানমারের কাছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পর্যন্ত পৌছাবে। এ রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মিয়ানমার-বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-ইরান হয়ে যাবে ইউরোপের তুরস্ক পর্যন্ত। সৈকতের স্টেশনটি হবে বিশাল ঝিনুক আকৃতির। এ ঝিনুকের ভিতরেই হবে প্লাটফর্ম, যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ। প্রকল্পের কাজের তদারকি করছেন সয়ং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটবে। সহজ ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিঃমিঃ রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিঃ মিঃ রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ১২৮ কিঃমিঃ রেলপথে স্টেশন রয়েছে ৯টি হচ্ছে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিলের রামপুর, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার, উখিয়া ও ঘুমধুম। এতে কম্পিউটার বেইজড, ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম থাকবে ৯টি, ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে ৯টি। শঙ্খ, মাতামুহুরী, বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে সেতু। এ ছাড়া ৪৩টি মাইনর সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে এ প্রকল্পে। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের জুন মাসে। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে দ্রæত এগিয়ে চলছে রেললাইন প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়ে যাবে। ফলে আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিল্ক রুট (চিন-মিয়ানমার-বাংলাদেশ) ও ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে বিদ্যমান রেলপথটি গুরুত্বপ‚র্ণ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। একসময় কক্সবাজারের মানুষ স্বপ্ন দেখত, রেলে চড়ে সারাদেশে যাতায়াত করবে। এটি এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ পাচ্ছে সে স্বপ্নের রেললাইন। প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বলেই কক্সবাজারবাসী দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাচ্ছে।