দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন যোগাযোগ উন্নয়নে মাইলফলক

39

 

বর্তমান সরকারের যোগাযোগ খাতের অন্যতম মেগা প্রকল্প চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন। দীর্ঘ প্রায় একশত বছর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সর্বদক্ষিণে রেল যোগাযোগ ছিল চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী পর্যন্ত। নিরাপদ যাত্রার অন্যতম বাহন রেল এ দীর্ঘসময় দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত না হওয়াই ছিল অতি আশ্চর্য বিষয়। যেকোন দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে পর্যটন এলাকাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে সরকারের দৃষ্টি থাকে পর্যটন এলাকাগুলোর যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। কিন্তু আমাদের সরকারগুলো এক্ষেত্রে উল্টোপথেই হেঁটেছে। বর্তমান সরকার তাদের ভিশন বাস্তবায়নে আগের ট্রেডিশন থেকে বেরিয়ে এসে সড়ক ও রেল যোগাযোগ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যাপক মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সূত্র জানায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম একটি। এটি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী বছর জুন মাসে এ প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী মহামারি করোনা ভাইরাসের ফলে লকডাউন, জায়গা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতা, ইকোপার্ক, পাহাড়, নদীর উপর সেতু,কার্লভাট নির্মাণসহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রলম্বিত হয়। ফলে প্রকল্প মেয়াদের সময় ছয়মাস বর্ধিত করে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ রেললাইনটি উদ্বোধন করা হবে বলে রেলমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বুধবার রেলমন্ত্রী এ প্রকল্পটি পরিদর্শনে এসে কক্সবাজারে নির্মিতব্য আইকন স্টেশনে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এ তথ্য দেন। তাঁর মতে, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মিয়ানমার হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা হবে। অর্থাৎ স্থাপিত হবে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডর। ছাড়া ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে, পর্যটন নগরী কক্সবাজার রেল নেটওয়ার্কে সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে এ সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের ঝুড়িতে যুক্ত হবে নতুন এক মাইলফলক। এ মেগা প্রকল্পের পরিচালকের দফতর সূত্র জানিয়েছে, পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারকে বহু দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। যে কারণে করোনা পরিস্থিতিতেও নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মাটি কাটা এবং ব্রিজ নির্মাণ, রেল ট্র্যাক নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠনের পর ২০০১ সালে রেললাইনটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালিত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার এবং কক্সবাজারের রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও সরকারের অর্থায়নে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমার সীমান্তের এপারে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেললাইনের উদ্বোধন করেন। এডিবির অর্থায়নে নির্মিতব্য এ রেলপথে রয়েছে দেশের ইতিহাসের প্রথম নান্দনিক রেলস্টেশন। প্রকল্পের আওতায় ১২৮ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। সূত্র আরও জানিয়েছে, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে রয়েছে ৯ রেলস্টেশন, ৫১টি ছোট-বড় ব্রিজ, ১৪৯ বক্স কালভার্ট, ৫২টি রাউন্ড কালভার্ট। স্টেশন নির্মিত হবে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া এবং সবশেষ প্রান্ত ঘুমধুম পর্যন্ত। এর বাইরে সাঙ্গু, মাতামুহুরি ও বাঁকখালি নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে তিনটি বড় সেতু। রেললাইনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড, ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। ঘণ্টায় ১শ’ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন এ রেললাইনে অত্যাধুনিক অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থা সংযোজন এবং কক্সবাজার সৈকতে ঝিনুকের আদলে নির্মিত হচ্ছে অত্যাধুনিক রেলস্টেশন। আমরা আশা করি, এ প্রকল্পটি সর্বশেষ নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে। দেশের রেল যোগাযোগের ইতিহাসে একটি নতুন মাইলফলক রচনা হবে।