দোষি ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

15

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার রাঙামাটি সংবাদদাতার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায়, লংগদুর তিনশ অসহায় মানুষ ৩০ কোটি টাকার ঋণের বোঝায় কিংকর্তব্য বিমূঢ়। পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায় দরিদ্র অসহায় মানুষ যারা উক্ত কৃষিঋণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নয়, তাদের সাথে প্রতারণা করে সোনালী ব্যাংকের কৃষিঋণের অবৈধ ফাঁদে তাদের আঁটকিয়ে সর্বস্বান্ত করা হচ্ছে। দেশে বিভিন্ন প্রতারকচক্র এবং সরকারি বেসরকারি সংস্থার কিছু অসাধু লোক অতীতেও এমন বহু জাল জালিয়াতি করতে দেখা গেছে। স্মরণ অতীতে চট্টগ্রাম জিপিও ডাক বিভাগে এমন জালিয়াতি হয়েছে। কিছু নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে জিপিও’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোটি কোটি টাকা জালিয়াতি করেছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত দেশের মানুষ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা জিপিও’র সাধারণ গ্রাহক ও দেশের মানুষ জানে না। সোনালী ব্যাংকও একটি সরকারি তফসিলি ব্যাংক। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে প্রতারকচক্র ঋণের ফাঁদে আটকিয়েছে দরিদ্র সাধারণ মানুষকে। চট্টগ্রামের ডাকঘর হতে টাকা হাতিয়ে নেয়াতে ডাকঘরের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার খবর আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছিলাম। আজ পর্যন্ত এমন জালজালিয়াতি কর্মকাÐের যথোপযুক্ত শাস্তির কোন খবর জনগণ জানে না।
চট্টগ্রাম জিপিওতে যারা টাকা আমানত রেখেছিল তাদের টাকা তারা ফেরত পেয়েছে কি’না তাও অস্পষ্টই রয়ে গেছে। অথচ কিছু নিরীহ মানুষ তার উল্টোটান এখনো টেনে যাচ্ছে। দেশে এমন প্রতারক চক্র এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসের অসাধুতা ক্রমে বেড়েই চলেছে। দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতি, প্রতারণা একটি জাতীয় রোগে পরিণত হতে যাচ্ছে। তার কারণ দুর্নীতি, অনিয়ম, জালিয়াতি, প্রতারণার যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেশের জটিল আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার সময় মতো হচ্ছে না, যার কারণে অসাধু দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও প্রতারক চক্র নানাভাবে সাধারণ মানুষের উপর চেপে বসতে সাহস করছে। লংগদুতে সাধারণ মানুষকে প্রতারক চক্র সরকারি সহযোগিতার প্রলোভন দেখিয়ে এনআইডি ফটোকপি সংগ্রহ করে তিন শতাধিক লোককে ব্যাংক ঋণের ফাঁদে আঁটকালো। প্রায় একযুগ পর দরিদ্র সাধারণ এই মানুষগুলো জানতে পারে ব্যাংকে তারা ৬০/৭০ হাজার টাকা লোন নিয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সাথে উক্ত ব্যাংকের ম্যানেজারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত ছিল। সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন চাকুরিজীবীরা তথা ব্যাংক ম্যানেজার এর দায় এড়াতে পারে না। পত্রিকার প্রতিবেদনে বর্তমান ব্যাংক ম্যানেজারের বক্তব্য ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন ২০০৮ সালে এমন অনিয়ম হয়েছে। ২০০৮ সালে লংগদুর সংশ্লিষ্ট সোনালী ব্যাংকে কোন ম্যানেজার এবং কারা কারা এ জালিয়াতির সাথে জড়িত ছিল তা নির্ধারণ করা কঠিন ব্যাপার নয়। কিন্তু বর্তমান ব্যাংক প্রশাসনকে মাথায় রাখতে হবে যে, ঋণ জালিয়াতির ফাঁদে পড়া কোন কোন ব্যক্তির নিকট হতে (যাদের একাউন্ট রয়েছে উক্ত ব্যাংকে) টাকা কেটে নেওয়া অযৌক্তিক। সোনালী ব্যাংক থেকে যারা বেতন উত্তোলন করে এমন দু’চার জনের নিকট হতে টাকা কেটে নিলে তফসিলি সোনালী ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা ফেরত হবে না। তাই বিষয়টি সামগ্রিকভাবে সমাধান করা প্রয়োজন। রাঙামাটি জেলার লংগদুর অসহায় মানুষগুলো মানববন্ধন করে তাদের সমস্যার কথা সরকার ও প্রশাসনের কাছে জানিয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ জালিয়াতির বিষয়ে উচ্চতর তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সরকারি তফসিলি ব্যাংকের টাকা নিয়ে জালিয়াতের কার্যকর শাস্তি বিধান করা জরুরি। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে জালিয়াতির বহু প্রমাণ উল্লেখ করেছে। সঠিক ও যথাযথ তদন্তে কারা ব্যাংকের সাথে যোগসাজশ করে এহেন জালিয়াতি কর্মকান্ড করেছে তা অবশ্যই ধরা পড়বে। আমরা রাঙামাটির লংগদুর তিনশয়ের অধিক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহŸান জানাই। ব্যাংক ১১ / ১২ বছর পর নোটিশ দিয়ে তাদের জানালো কেন তা আমাদের বুঝে আসেনা। লোন নেওয়ার পর যথাযথ সময়ে প্রতারণার শিকার হওয়া মানুষগুলোকে জানানো হলে বিষয়টি অনেক পূর্বে সমাধান হয়ে যেত। যাই হোক বর্তমান ব্যাংক কর্মকর্তাদেরকেও এই অসহায় মানুষগুলোকে সহায়তা করতে হবে মানবিক বিষয় বিবেচনা করে। লংগদুসহ দেশের সাধারণ মানুষ এমন প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করে।