দোকানে গিয়ে ওষুধ নিল আহত হনুমান

109

সপ্তাহান্তের সকালে মল্লারপুর স্টেশন চত্বর যেন কুস্তির আখড়া। গত শনিবার সকাল ন’টা নাগাদ স্টেশনে ঢোকার মুখে দুই পূর্ণবয়স্ক হনুমানের মারপিট দেখতে ভিড় জমেছিল। কে কাকে আঘাত করে মাটিতে ফেলতে পারবে তার লড়াই চলতে থাকে। হনুমানের মল্লযুদ্ধ দেখে অনেকে হাততালিও দিতে থাকেন। মারামারিতে জখম হয় দু’টি হনুমানই। কিছুক্ষণ পরে রণেভঙ্গ দিয়ে একটি পালিয়ে যায়। অন্যটি বসে থাকে চুপ করে। বেশ কয়েক জায়গায় ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। সকালের ভিড়ে ঠাসা স্টেশন চত্ত¡রে যাত্রীদের নিয়ে টোটোর যাওয়া আসা চলতেই থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকা একটি টোটোয় চড়ে বসে জখম হনুমানটি। করুণ চোখে সহযাত্রীদের গায়ে হাত রেখে বোঝানোর চেষ্টা করে সে আক্রমণ করবে না। মল্লারপর স্টেশন থেকে খানিকটা দূরে পঞ্চায়েত ভবন। সেখানেই একটি ওষুধের দোকানের সামনে ঝুপ করে নেমে পড়ে হনুমানটি। ওষুধ দোকানের মালিক আনাজুল আজিম বলেন, দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছিল হনুমানটি। দোকানের ভিড় একটু কমতেই লাফ দিয়ে কাউন্টারে উঠে বসে কোমরের নীচে ও শরীরের অন্য অংশে ক্ষতস্থানগুলো দেখাতে থাকে। আমার হাত ধরে এমন ভাব করে যেন চিকিৎসা চাইছে।
দোকানে ওষুধ নিতে এসেছিলেন শক্তিপদ মিস্ত্রি নামে স্থানীয় এক যুবক। তিনিও হাত লাগান জখম হনুমানের ক্ষতে মলম ও ব্যান্ডেজ করায়। ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার পরেও ক্ষতস্থানগুলি বারবার দেখাতে থাকায় ওই ওষুধ দোকানদারের মনে হয় ব্যথার জন্য হনুমানটি এরকম করছে। কাপে জল নিয়ে একটি ব্যথা কমার ওষুধও খাওয়ানো হয় তাকে। সঙ্গে খান চারেক কলা। কিছুক্ষণ বসে থেকে আনাজুলের কাঁধে হাত রেখে দোকানের কাউন্টার থেকে রাস্তায় নেমে ফের একটি স্টেশনগামী টোটোয় চড়ে বসে সে।
মল্লারপুরের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় বছর আড়াই আগে এরকমই এক শনিবারের সকালে হুগলির চুঁচুড়া ইমামবাড়া (সদর) হাসপাতালে পুরষ বিভাগে কর্তব্যরত নার্সদের চমকে দিয়েছিল একটি হনুমান। ডান পায়ে রক্ত ঝরছিল। নার্সদের বারবার ক্ষতস্থান দেখিয়ে হাত নেড়ে ডাকতে থাকে হনুমানটি। অন্যরা ভয় পেলেও একজন নার্স এগিয়ে এসে হনুমানটির চিকিৎসা করেন। ব্যান্ডেজ করে দেন পায়ে। তারপরে তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে শুশ্রæষা হয়েছে বুঝতে পেরে চলে যায় হনুমানটি। বন্যপ্রাণী গবেষক শান্তিনিকেতনের ঈশানচন্দ্র মিশ্র বলেন, যে সব প্রাণী মানুষের কাছাকাছি থাকে তাদের কেউ কেউ মানুষের আচরণ, কার্যকলাপ অনুসরণ করে। হনুমান, বাঁদর বা কুকুরের অনুসরণের ক্ষমতা অনেক বেশি।